রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন করছে আরাকান আর্মি : এইচআরডব্লিউ

Google Alert – আর্মি


রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন করছে আরাকান আর্মি : এইচআরডব্লিউ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চরম নিপীড়ন চালাচ্ছে দেশটির জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা দখলের পর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল, ইচ্ছামতো আটক, জোরপূর্বক শ্রম ও নিয়োগসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ইলাইন পিয়ারসন বলেন, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মতোই নিপীড়নমূলক নীতি অনুসরণ করছে। এটি বন্ধ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে।

২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এইচআরডব্লিউ জানায়, রাখাইনের বুথিডং শহরের রোহিঙ্গারা কাজ, কৃষিকাজ, মাছ ধরা এমনকি গ্রামে চলাচলেও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে।

৬২ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের চলাচল ছিল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। কোথাও যেতে হলে অনুমতি লাগত। খাবারের সংকট এতটাই ছিল যে, মানুষ একে অপরের কাছ থেকে ভিক্ষা চাইত। 
 
আরেকজন জানান, ভ্রমণের অনুমতিপত্রের মেয়াদ ছিল একদিন এবং এর জন্য ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ কিয়াত গুনতে হতো। রাত ৮টার পর কেউ বাইরে থাকলে তাদের আটক করা হতো এবং অনেকের কোনো খোঁজ মিলত না।

বিভিন্ন রোহিঙ্গা পরিবার জানায়, আরাকান আর্মি গরিব পরিবারের ছেলে সন্তানদের জোর করে নিয়োগ দিচ্ছে। অনেকেই সন্তানদের লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে। একজন পিতা জানান, আমার ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে আমাকে ধরে নিয়ে ৩৫ দিন আটকে রাখা হয়। পরে ছেলেকে হাজির করার শর্তে ছেড়ে দেয়। পরে আমাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।

রোহিঙ্গারা জানায়, তাদের জমি, গবাদিপশু, মাছের জাল, এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত দখল করে নিচ্ছে আরাকান আর্মি। বুথিডংয়ের কিন তাউং গ্রামের দুই বাসিন্দা জানান, মে মাসে তাদের কবরস্থান গুঁড়িয়ে সেখানে ধানক্ষেত ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এক তরুণ জানান, তাকে ধরে নিয়ে যুদ্ধে সামনের সারিতে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিরোধ করলে বেধড়ক মারধর করা হতো এবং ধর্মীয় অপমানমূলক শব্দ ব্যবহার করা হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষ থেকে রাখাইন ও চিন রাজ্যে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ২ লাখের মতো মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ জানিয়েছে, শুধু ২০২৪ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার নতুন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই এখনো নিবন্ধিত নয়, কোনো সহায়তা পায় না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আরাকান আর্মি ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রোহিঙ্গারা যেন আর নিপীড়নের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *