রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজছে বাংলাদেশ

Samakal | Rss Feed


রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

2025-08-18

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী ও প্রকৃত সমধান খুঁজছে বাংলাদেশ। এ জন্য রোহিঙ্গা নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন। প্রথম সম্মেলনটি আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনের বিষয়বস্তু ঠিক করা হয়েছে– ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা।’

এ নিয়ে গতকাল রোববার সকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে সবাইকে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

ব্রিফিং শেষে ড. খলিলুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। কক্সবাজারের সম্মেলন সেই প্রস্তুতির অংশ। সম্মেলনটি রোহিঙ্গা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজে বের করার বড় সুযোগ। কক্সবাজার, নিউইয়র্কের পর আগামী ৬ ডিসেম্বর কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গাবিষয়ক আরেকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
তিনি বলেন, এক সময় রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক আলোচনার এজেন্ডা থেকে প্রায় বাদ পড়ে যাচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আহ্বানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়। সম্মেলনের সিদ্ধান্তের পর বিশ্বের ১০৬ দেশ এগিয়ে আসে। 

ড. খলিলুর রহমান আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন সে সম্মেলনে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। যেহেতু রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের নয়, সেহেতু তাদের পক্ষে কাউকে কথা তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশ এ ধরনের প্রক্রিয়ায় সে কাজটি করছে।

কক্সবাজারে ‘অংশীজন সংলাপ’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানায়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব সম্মেলনের আয়োজনে বাংলাদেশের পাশাপাশি থাকছে জাতিসংঘ ও কাতার। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল বাড়ানো এবং তাদের প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ জোরদার করতে এ আয়োজন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের আট বছর পূর্তিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টিকে চাঙ্গা করতে এ আয়োজন। উখিয়ার ইনানী এলাকার হোটেল বে-ওয়াচে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বে অন্যান্য ইস্যু সামনে চলে আসায় রোহিঙ্গা সংকট ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ হারাচ্ছে। ক্রমেই রোহিঙ্গা নিয়ে আগ্রহ কমছে, তহবিল কমছে, এমনকি রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের সঙ্গে জড়িত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের বিরুদ্ধে থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে, যাতে পুরো রোহিঙ্গা সংকট অন্যদিকে মোড় নিতে পারে।

রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক

এদিকে গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা নিয়ে জাতীয় টাস্কফোর্সের (এনটিএফ) বৈঠক  হয়। পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সভাপতিত্বে এতে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, জনকূটনীতি ও জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এবং মুখপাত্র শাহ আরিফ রহমান ব্রিফিং করেন।
ব্রিফিংয়ে মো. কামরুজ্জামান বলেন, আগের সভায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা তাদের কার্যক্রমের হালনাগাদ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেয়। তারা তহবিল সংকট এবং অর্থ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। সভায় আইনশৃঙ্খলাসহ রোহিঙ্গা-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের সম্মেলনের মূল অনুষ্ঠান ২৫ আগস্ট হলেও আয়োজন শুরু হবে ২৪ আগস্ট থেকে, চলবে তিন দিন। ২৪ আগস্ট হবে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা, যেখানে তারা তাদের মতামত জানাবেন। ২৫ আগস্টের মূল অনুষ্ঠানের সকালের পর্বে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ২৬ আগস্ট রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন অতিথিরা।

রোহিঙ্গা সম্মেলনে আমন্ত্রিত দেশ ও সংস্থা নিয়ে জানতে চাইলে মো. কামরুজ্জামান বলেন, সম্মেলন খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে আয়োজন করার কারণে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের উপস্থিতির বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। নতুন করে কাউকে দাওয়াত দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ সম্মেলনের আর কয়েকদিন বাকি। তিনি বলেন, ৯টি দেশের মন্ত্রীদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অন্যান্য দেশ রয়েছে। 
এনটিএফের বৈঠকে তহবিল সংকট নিয়ে মো. কামরুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গাদের তহবিল নিয়ে যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা (জিআরপি) অনুযায়ী এ বছর ৯৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার চাহিদা ধরা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ৪৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। অর্থ কমে গেলে খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা– এ তিনটি জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচি প্রভাবিত হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

এনটিএফের বৈঠক সূত্র জানায়, জেআরপির বাইরে আপাতত খাবার ও অন্যান্য জরুরি খাতে ঘাটতি রয়েছে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর লাখের ওপর রোহিঙ্গা সীমান্তের আশপাশে জড়ো হচ্ছে।

                                    

 

© Samakal

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *