লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ কি নির্বাচনে ঝুঁকি বাড়াবে

Bangla Tribune

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওইদিনই দেশের বেশিরভাগ থানা ও পুলিশ ক্যাম্পগুলোতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। লুট হয়ে যায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। যার একটি বড় অংশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। লুট হওয়া ওইসব অস্ত্র দিয়ে এরইমধ্যে দুর্বৃত্তরা ছিনতাই ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মব সন্ত্রাসও এখনও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। এমন পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনের সময় উদ্ধার না হওয়া এসব মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদ সহিংসতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে স্বরাষ্ট উপদেষ্টাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সুন্দর ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে ‘ইন্টেলিজেন্স-ভিত্তিক’ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে জোর দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। একটা শর্ট গান কিংবা পিস্তল উদ্ধার করে দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা এবং চায়না রাইফেল ও এসএমজি উদ্ধার করে দিতে পারলে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে। এলএমজির ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা এবং প্রতি রাউন্ড গুলির জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে ৫০০ টাকা। এই পুরস্কারের টাকা বাহিনীর সদস্যসহ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে অনলাইন ও অপলাইনে। তারপরও উদ্ধার না হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ নির্বাচনি প্রচারণা ও ভোটকেন্দ্রে ভয় তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সন্ত্রাসীরা এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় লিপ্ত হলে তা রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। ব্যাহত হবে নির্বাচনি কর্মকাণ্ড।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড গবেষণা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. মো. তৌহিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘লুট হওয়া যেসব অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য সেটা উদ্বেগজনক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। যত দ্রুত সম্ভব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করতে হবে। না হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’

১৪ সেপ্টেম্বর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন থানা, ক্যাম্প ও গণভবনের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৫ হাজার ৭৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৬ লাখ ৫২ হাজার ৮ রাউন্ড গোলাবারুদ লুট হয়েছিল। এর মধ্যে ৪ হাজার ৪১০টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি আরও ১ হাজার ৩৫৩টি অস্ত্র। ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৯টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৯টি।

সর্বশেষ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভাগের সব জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ‘‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কিছু অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। বাইরে রয়ে গেছে।’’ এর আগে গত ২৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকার গাবতলীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার একটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিদিন অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। আশা করছি, ইলেকশনের আগে প্রায় সব অস্ত্র উদ্ধার করে ফেলবো। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাইরের দেশ থেকেও যাতে কোনও অস্ত্র ঢুকতে না পারে, সে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমরা লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’’ তবে জাতীয় নির্বাচনে উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রগুলো কোনও ঝুঁকি তৈরি করবে কিনা, সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য তিনি করতে রাজি হননি।

পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পিআর বিভাগের এআইজি এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘অস্ত্রের একটা বড় অংশ লুট হয়েছে, আবার সেটার বড় একটা অংশ উদ্ধারও হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়েই অভিযান চলমান আছে। এরমধ্যে অস্ত্র উদ্ধারে সহায়তার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘সামনে নির্বাচন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে তো আমরা নির্বাচন- পূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করছি।’’

আরও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা করে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দাবি ড. ইউনূসের 

অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করে অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *