Bangla Tribune
বছরের শেষ নাগাদ হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে পুরো নিরস্ত্র করতে লেবাননের কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবে আরও রয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে পাঁচটি অবস্থান থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারসহ লেবাননে তাদের সম্পূর্ণ সামরিক কার্যক্রমের অবসান ঘটানো। লেবানিজ ক্যাবিনেটের হাতে থাকা খসড়া যাচাই করে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি টম ব্যারাক। এতে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) লেবানিজ ক্যাবিনেটে খসড়াটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর লেবানিজ তথ্যমন্ত্রী পল মোরকোস বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তারা কেবল প্রস্তাবের উদ্দেশ্য অনুমোদন করেছেন। খুঁটিনাটি অনেককিছু নিয়ে আলোচনা এখনও বাকি আছে।
২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গোষ্ঠীটি সীমান্তে ইসরায়েলি অবস্থানে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে, যা গাজা যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করে। এরপর গত বছর পালটা ইসরায়েলি বিমান হামলায় দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে ধস নামে। গত নভেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে দলটির একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও উত্তেজনা বিরাজমান ছিল। এরপর থেকে একাধিকবার হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানানো হলেও তারা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
মার্কিন প্রস্তাবের লক্ষ্য লেবানন-ইসরায়েলের মধ্যে গত নভেম্বরে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ‘বর্ধিত ও স্থিতিশীল’ করা। নথিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলা ও সীমান্ত অতিক্রমী অভিযানের মতো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়ায় এই প্রস্তাব জরুরি হয়ে পড়েছে, যা নাজুক পরিস্থিতি ভেঙে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
মার্কিন প্রস্তাবের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে হিজবুল্লাহসহ অন্যান্য সশশ্ত্র অ-রাষ্ট্রীয় কর্মকের (নন স্টেট অ্যাক্টর) উপস্থিতি নির্মূল করা, লেবাননের পাঁচটি অবস্থান থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, গুরুত্বপূর্ণ সীমানা ও অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে লেবানিজ বাহিনী মোতায়েন, পরোক্ষ আলোচনার (ইনডিরেক্ট টকস) মাধ্যমে বন্দিবিনিময় সংকটের সমাধান এবং ইসরায়েল ও সিরিয়ার সঙ্গে লেবাননের সীমান্ত সংকটের চূড়ান্ত সমাধান করা।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, দেশে থাকা সব অস্ত্র সেনাবাহিনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লেবানন। তাদের উদ্যোগকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানায়।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আর দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনও সাড়া প্রদান করা হয়নি।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে মার্কিন প্রস্তাবের বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক শাখার তিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আলোচনা চলাকালীন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বৈঠক ত্যাগ করেছেন হিজবুল্লাহর সব মন্ত্রী ও তাদের মিত্ররা।
হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হবে না দাবি করে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকি বলেছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিজবুল্লাহর।
খসড়া প্রস্তাবে চার ধাপে পুরো উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম ধাপে রয়েছে বৈরুত সরকারকে ১৫ দিনের মধ্যে একটি ডিক্রি জারি করে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হিজবুল্লাহকে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করতে হবে। এ পর্যায়ে ইসরায়েল স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সামরিক অভিযান বন্ধ করবে।
পরবর্তী ধাপে ৬০ দিনের মধ্যে নিরস্ত্রীকরণ কার্যক্রম শুরু ও সেনা মোতায়েন পরিকল্পনা অনুমোদন করতে হবে, যাতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে অস্ত্র নিয়ে আসার বিস্তারিত লক্ষ্য থাকবে। একই সময়ে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননের কিছু অবস্থান থেকে সরে আসবে এবং ইসরায়েলে আটক লেবানিজ বন্দিদের আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির সমন্বয়ে মুক্তি দেওয়া হবে।
তৃতীয় ধাপে ৯০ দিনের মধ্যে ইসরায়েল অবশিষ্ট দুইটি অবস্থান থেকেও সরে যাবে। পাশাপাশি ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য তহবিল নিশ্চিত করা হবে।
এরপর শুরু হবে চতুর্থ ধাপ। এসময় ১২০ দিনের মধ্যে হিজবুল্লাহর অবশিষ্ট সব ভারী অস্ত্র, যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন, ধ্বংস করা হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ফ্রান্স, কাতারসহ মিত্র দেশগুলো লেবাননের অর্থনীতি ও পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য একটি অর্থনৈতিক সম্মেলন আয়োজন করবে এবং ‘সমৃদ্ধ ও কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে লেবাননের পুনরুত্থানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি’ বাস্তবায়ন করবে।