শাহবাগে অবরোধে দীর্ঘ যানজট, সড়কে ভোগান্তি 

Bangla Tribune

সকাল থেকেই রাজধানীর শাহবাগের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তাদের অবরোধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শাহবাগ মোড় হয়ে বন্ধ থাকে যান চলাচল। এরফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে আশপাশের সড়কগুলোতে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সপ্তাহের কার্যদিবসে দুপুরের পর থেকেই নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট দেখা গেছে।

বিকাল হলে সড়কে যানবাহনের চাপ আরও বাড়তে থাকে। ফলে ঘরে ফেরা মানুষ জনের পথে দীর্ঘসময় কেটে যাচ্ছে অনেকের। সড়কের ভোগান্তি এড়াতে অনেককে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরের শাহবাগ থেকে কাওরানবাজার, ফার্মগেট আসাদ গেট হয়ে ধানমন্ডি রাস্ত যানবাহন চলাচল ধীরগতি হয়েছে। এদিকে পান্থপথ, কলাবাগান, সায়েন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ নিউ মার্কেটে দিকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মিরপুর, গুলিস্থান, পুরান ঢাকার আরও বিভিন্ন এলাকায় যানজট দেখা গেছে।

শাহবাগে অভিমুখী ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, জ্যামের কারণে কাওরানবাজার থেকে হেঁটেই বাকি পথ যাচ্ছি। রাস্তা বেশি না, তাই গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রিকশায় চড়ে ধানমন্ডি থেকে পান্থপথ হয়ে বসুন্ধরা শপিং মহলে যাচ্ছিলেন সুমিয়া আক্তার। স্কয়ার হাসপাতালে সামনে এসে তাকে বহন করা রিকশাটি যানজটে আটকিয়ে যায়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বাধ্য হয়ে রিকশা থেকে নেমে হেঁটেই রওনা হন। তিনি বলেন, জরুরি কাজ আছে যার কারণে এতক্ষণ জ্যামে বসে থাকা সম্ভব না। তাই হেঁটেই যাচ্ছি।

ধানমন্ডি জোনের একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা জানান, সড়কে দুপুরের পর থেকে নরমাল প্রেসার ছিল। মিরপুর রোড ও সায়েন্সল্যাবের দিকে কিছু প্রেসার কমলেও পান্থপথে সড়কে প্রচুর প্রেসার রয়েছে।

শাহবাগে সড়ক অবরোধ

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার  (ট্র্যাফিক) স্নেহাশিস কুমার দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিকালের পর থেকে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। সন্ধ্যার পর সেটি আরও বাড়তে থাকে। শাহবাগ মোড় দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে রাখায় চারপাশের সড়কে চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলামোটর, কাওরানবাজার, বসন্ধুরা সিটির সামনে ও তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ির ধীরগতি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চাপ সন্ধ্যার পর পর্যন্ত থাকবে। আমরা চেষ্টা করছি স্বাভাবিক করার।’

এদিকে আজ সকাল ১০টা থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা। দাবি না মানা পর্যন্ত তারা শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকাল সাড়ে ৫টা) অবরুদ্ধ রয়েছে শাহবাগ চত্বর। 

আন্দোলনে এসেছেন ১৯ জুলাই শহিদ হওয়া বরিশাল একতা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মারুফ হোসাইনের বাবা। মারুফ বরিশালে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। তার বাবা ইদ্রিস বলেন, ‘আমি ফুসকা ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাই। তবুও আমি মামলা করেছি ৫ মাস হয়ে গেলো। এতদিনেও আমার ছেলের হত্যার বিচার আমি পাইনি। কী করছে এই সরকার?’

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলছেন সারজিস আলম

তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাঁসি দেওয়া হোক। ইউনূস সরকার যদি তা না মানে, তাহলে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিক। তিনি আমার ছেলের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন। আমার ছেলের মুখ দেখে চেনার উপায় ছিল না। আমি আমার ছেলের কবরে মাটি দিয়েছি, যেখানে আমার ছেলে আমাকে কবর দিতো। এর থেকে কষ্টের কী হতে পারে? আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশে সংস্কার ছাড়া কোনও নির্বাচন চাই না। আগে আমার ছেলের হত্যার বিচার হবে তার পর নির্বাচনে যেই সরকারই আসুক আমরা মেনে নেবো।’

শাহবাগ অবরোধে অংশ নিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে নিহত হাফিজুল শিকদারের বাবা আবু বকর শিকদার। ২০ জুলাই আড়াইটায় হাফিজুল শিকদার বাড্ডায় বিজিবির গুলিতে আহত হন। পরবর্তী সময়ে মুগদা মেডিক্যালে মৃত্যুবরণ করেন।

শাহবাগে আবু বকর বলেন, কারফিউয়ের মধ্যে যাত্রী নামিয়ে বাসার দিকে আসার পথে বিজিবি গুলি করে আমার ছেলেকে। তখন আরেক রিকশাওয়ালা তাকে মেডিক্যালে নিয়ে যায় এবং আমাকে জানায়। বিকাল ৩টার দিকে হাসপাতাল পরিবর্তনের পর আমার ছেলে মারা যায়। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই এবং আমাদের বাঁচার জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।

উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রাজমিস্ত্রীর কাজ করা জহিরুল ইসলাম শুভ। আন্দোলনে এসেছেন তার মা নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত। আমার ছেলেটি আমাদের চালাইতো। এখন আমাকে দেখার মতো কেউ নাই। আমার মাথা গোঁজার ঠাইও নাই। আমি কোথায় যাবো ঘর ভাড়া কী করে দেবো, আমার জানা নাই। আমারে তো কেউ দেখতে যায়নি। আমার মাথা গোঁজার জন্য ঠাই দিলে অন্তত আমি বেঁচে থাকতে পারতাম।’

এদিকে শহীদ পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে শাহবাগ আসেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি শহীদ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তবে প্রতিটি শহীদ পরিবারের সঙ্গে কথা না বললে এবং দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এ প্রতিবেদন লেখা অবধি শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সারজিস আলমের আলোচনা চলছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *