শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়াই চাকসু নির্বাচনে ছাত্রসংগঠনগুলো

jagonews24.com | rss Feed

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী বুধবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ১৩তম প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে, বড় ছাত্র-সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানা গেছে।

ছাত্রদল ছাড়া দলীয় ব্যানারে নেই অন্য সংগঠন

চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল ছাড়া অন্য কোনো ছাত্রসংগঠন দলীয় ব্যানারে অংশ নিচ্ছে না। বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীকে নিয়ে অন্য ছাত্র-সংগঠনগুলো প্যানেল ঘোষণা করেছে। তবে বাম ছাত্র-সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও বড় সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা কোনো পদে লড়ছেন না।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসীন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সবসময়ই দলীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। দল যাকে যোগ্য ও জনপ্রিয় মনে করেছে তাকেই মনোনীত করেছে। অনেক সিনিয়র নেতার ছাত্রত্ব থাকার পরেও দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থী হতে পারেননি। দল যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকেই প্রার্থী করা হয়েছে।

শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়াই চাকসু নির্বাচনে শিবির

ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন— এমন গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজসহ শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ প্রার্থী হননি। এমনকি অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদ ও বায়তুল মাল সম্পাদক হাফেজ মুজাহিদুল ইসলামও এবার নির্বাচনে নেই। তবে ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ ব্যানারে শিবির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাদের ভিপি প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইব্রাহিম রনি। আর বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের মধ্যম সারির নেতা সাঈদ বিন হাবিব জিএস পদে এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাজ্জাদ হোসাইন মুন্না।

‘আমরা সবসময়ই দলীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। দল যাকে যোগ্য ও জনপ্রিয় মনে করেছে তাকেই মনোনীত করেছে। অনেক সিনিয়র নেতার ছাত্রত্ব থাকার পরেও দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থী হতে পারেননি।— চবি ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসীন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, শিবির একটি গতিশীল ও নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতৃত্ব জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও চাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হননি বা হতে পারেননি। অনেকেরই মাস্টার্স শেষ হয়ে গেছে কিংবা ফল প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেননি তারা।

আরও পড়ুন

এবার পেছালো চাকসু নির্বাচন
চাকসু নির্বাচন: ২০ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার, ৪ জনের বাতিল
চাকসুর অনার বোর্ডে আবার লেখা হলো মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম

চাকসুতে প্রার্থী দেয়নি বাগছাস

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনিসিপি) ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) চাকসু নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক— রাসেল আহমেদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি ও বাগছাসের চবি শাখার সদস্যসচিব আল মাসনূন ছাত্রত্ব বজায় রাখলেও নির্বাচনে অংশ নেননি। অন্যদিকে, স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির মুখপাত্র এবং ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ জগলুল আহমেদও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই।

বাগছাসের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব আল মাসনূন বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো দলীয় কোন্দল নেই। কোন্দল থাকলে সবাই আলাদা প্রার্থী দিতাম। বর্তমানে আমরা সংগঠনকে গোছানোর কাজে মনোযোগ দিচ্ছি। তাই প্রার্থী দেওয়ার চেয়ে সংগঠন গোছানোকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।

ছাত্রদলের ভিপি পদে হৃদয়, জিএস-এজিএস পদে মধ্যম সারির নেতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসীনের ছাত্রত্ব শেষ। চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান মাস্টার্স পরীক্ষার অনুমোদন নিলেও কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনয়ন পাননি তিনি। ফলে যোগ্য হয়েও নোমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। দলীয় প্যানেলে জায়গা হয়নি সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন ও যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিনেরও। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ভিপি পদে মনোনয়ন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়কে, যিনি ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে আলোচিত হন। এছাড়া জিএস পদে মো. শাফায়াত হোসেন ও এজিএস পদে আইয়ুবুর রহমান তৌফিক প্রার্থী করা হয়েছে।

ছাত্রশিবির একটি গতিশীল ও নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতৃত্ব জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও চাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হননি বা হতে পারেননি। কারণ অনেকেরই মাস্টার্স শেষ হয়ে গেছে কিংবা ফল প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেননি।— চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী

এদিকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাম সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে দুটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিতে ঐক্যবদ্ধ প্যানেল ঘোষণা করেছে ১১ বাম সংগঠন। ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ শিরোনামের এই প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে মনোনয়ন পেয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা ও এজিএস পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জসিম মনোনয়ন পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

চাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না আলোচিত তিন সমন্বয়ক
চাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেল ঘোষণা, ভিপি রনি জিএস সাঈদ
চাকসু ও হল সংসদে ১০৬৩ মনোনয়নপত্র বিতরণ, জমার শেষ দিন আজ

এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সমন্বয়ে ‘দ্রোহ পর্ষদ’ নামের একটি প্যানেল ঘোষণা করেছে। এতে ভিপি পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ঋজু-লক্ষ্মী অবরোধ, জিএস পদে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমদ ইমু এবং এজিএস পদে ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তরসম্পাদক শেখ জুনায়েদ কবির মনোনয়ন পেয়েছেন।

চাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলগুলো

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘ছাত্রদল প্যানেল’, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সমর্থিত প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’, জুলাই আন্দোলনে আহত ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সমর্থিত প্যানেল ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, জাতিভিত্তিক সংগঠন ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের সমর্থিত প্যানেল ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, সুফিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত অরাজনৈতিক জোট প্যানেল ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’, চবির বিভিন্ন এক্সট্রা ও কো-কারিকুলার সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত অরাজনৈতিক প্যানেল ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’, স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি ও ছাত্র ফেডারেশনের সমন্বিত প্যানেল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত প্যানেল ‘র‍্যাপিড চেঞ্জের চাকসু’ বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট সমর্থিত ‘রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অফ হিউম্যানিটি’ ‘মানবতার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিপ্লব’ ইসলামী ছাত্র মজলিস সমর্থিত প্যানেল ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’

এবারের চাকসু নির্বাচনে ২৮টি, হল সংসদের ১৬টি এবং হোস্টেল সংসদে ১০টি পদে ভোটগ্রহণ হবে। প্রার্থীদের মাদক পরীক্ষার (ডোপ টেস্ট) ফল ইতিবাচক হলে প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। চাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৬৩৪ জন। আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

তফসিল অনুযায়ী ১২ অক্টোবর ভোটগ্রহণের কথা থাকলে তা পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর করা হয়েছে। নির্বাচনে ৯৩১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদে ২৬ পদের বিপরীতে ৪২৯ জন মনোনয়ন জমা দেন। হল সংসদে ১৯৬টি পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র জমা দেন ৪৮১ জন।

এমআরএএইচ/এমএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *