শ্রীমঙ্গলের আনারসের সুনাম দেশ-বিদেশে : সংবাদ অনলাইন

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

শ্রীমঙ্গলের আনারসের সুনাম দেশ-বিদেশে

প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : চা-বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চাষ হচ্ছে আনারস -সংবাদ

চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত পর্যটন নগরী চারিদিকে সবুজে ঘেরা পাহাড়ে এলাকায় আনারস, লেবু, কাঁঠাল বাগানের শহর শ্রীমঙ্গল। চায়ের পাশাপাশি এখানকার আনারস ও লেবুর খ্যাতি রয়েছে দেশ-বিদেশে। দেশের চাহিদা পূরনে সবচেয়ে বেশি আনারস, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফল উৎপন্ন হয় শ্রীমঙ্গলে। এখানকার আনারস দেশজুড়ে সুপ্রসিদ্ধ যা স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। এই ঋতুতে বাজারজুড়ে অন্য ফলের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলের আনারসও আধিপত্য বিস্তার করছে।

পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় ষাটের দশক থেকে আনারস চাষ শুরু করা হয়। এখানকার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু আনারস চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে বারো মাস আনারসের চাষ করা হয়। নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয় শ্রীমঙ্গলের আনারস। আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও বটে। সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে আনারস চাষ হয়।

এখানে দিগন্তজোড়া সবুজ চা বাগান আর পাহাড় এরই মধ্যে রয়েছে আনারস বাগান। চায়ের রাজ্যে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে আনারসের সারি সারি বাগান।

এই আনারসের গাছগুলো নিচ থেকে টিলার উপরে এমনভাবে গিয়ে উঠেছে দূর থেকে মনে হবে যেন একদল পিপিলিকা ডানা মেলে সারি বেঁধে উপরে উঠছে। মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। এ বছর মৌলভীবাজার জেলার প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে হানিকুইন ও জাইনকিউ নামের আনারসের উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই শত শত ঠেলা, জিপ ও পিকআপে করে নিয়ে আসে শ্রীমঙ্গলের আড়ৎগুলোতে।

এই উপজেলার বিষামডু, মাইজদিহি, হোসেনাবাদ, এমআর খান, নন্দরানী, বালিশিরা, নূরজাহান, ডলুছড়া, সাতগাঁও, মোহাজেরাবাদসহ প্রতিটি এলাকা থেকে প্রচুর আনারস আসে বাজারে। প্রতিদিন বাজারে আসা ঠেলাগাড়িগুলোর সামনের দিক মাটিতে মুখ দিয়ে তার পিঠে রাখা আনারসকে সাজিয়ে রাখা হয়। যেন দূরদূরান্ত থেকে ছোট-বড় আড়ৎদার ও পাইকারি-খুচরা ক্রেতারা এগুলো দেখে সহজে আকৃষ্ট হন। আর এখান থেকেই আনারস যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গাড়ি অনুপাতে একেকটা ঠেলাগাড়িতে একশ পঞ্চাশ থেকে ৫০০ পিস আনারস সুন্দর করে রাখা হয়। সেগুলো সাইজ অনুযায়ী বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী উপজেলা কমলগঞ্জ, চুনারুঘাট এমনকি বাহুবল উপজেলার পাহাড়ে এলাকায় উৎপাদিত আনারস আসে শ্রীমঙ্গলের বাজারে। শ্রীমঙ্গল শহরের বাজারের ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন আড়ৎদার রয়েছেন- যাদের কাছে বাগান মালিকরা তাদের আনারস বিক্রির জন্য দিয়ে থাকেন।

আশিক বাণিজ্যালয়ের আড়তদার মো. আশিকুর রহমান বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার আনারসের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা ৬ মাস যাবত মৌসুমি এই সিজনের আনারস বিক্রি করছি, এবারের আনারসের স্বাধ-গন্ধ অনেক মজার এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনেক হওয়াতে আমরা দামও ভালো পাচ্ছি।

মেসার্স মনজুর আলী আড়তদার অভিযোগ করে মো. মছর উদ্দিন বলেন, আনারসের ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু আনারস সংরক্ষণের অভাবে পচে যাচ্ছে। পুক্ত আনারস বেশি দিন বাগানে রাখা যায় না, বৃষ্টি হলে সেই আনারস বাগানেই পচে যায়। সে জন্য আনারস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার (কৃষিবিদ) মো. আলাউদ্দিন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমরা কৃষি অফিস থেকে ২০ জন কৃষককে প্রনোদনা হিসেবে ২ হাজার ২৫০টি আনারসের চারা দিয়েছি। সব চাষিকে কৃষি অফিস সবসময় ভালো পরামর্শ দিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, আনারসের পাশাপাশি লেবু ও নাগামরিচ ও বিভিন্ন ফলের চাষ হয় এ অঞ্চলে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, বর্তমানে জেলায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে আনারস উৎপাদন হওয়ার কারণে এসব পণ্যের সংরক্ষণাগার ও প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপনের প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *