Samakal | Rss Feed
সড়ক ভাঙাচোরা, জমে থাকে পানি সীমাহীন ভোগান্তি মানুষের
রাজধানী
সাজিদা ইসলাম পারুল 2025-09-28
অবহেলা, পরিকল্পনাহীনতা আর মেরামতের দীর্ঘসূত্রতার কারণে রাজধানীর কাওলা থেকে আশকোনা বাজারসহ দক্ষিণখান থানাধীন বিভিন্ন সড়ক যেন ভোগান্তির আরেক নাম। ভাঙা রাস্তার কারণে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। শুষ্ক মৌসুমে রয়েছে ধুলার জ্বালা আর বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমস্যা। ভাঙা রাস্তার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও।
দক্ষিণখানের গাওয়াইরের বাসিন্দা শফিউল ইসলাম একসময় মতিঝিলের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। প্রতিদিন ভাঙাচোরা রাস্তায় আটকে থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হতো। প্রায় প্রতিদিনই অফিসে দেরি করে পৌঁছানোয় চাকরিচ্যুত হন। শফিউল বলেন, ‘আমাদের এলাকার প্রবেশপথ হজ ক্যাম্পের সামনে দিয়ে। যানজট এড়াতে একসময় কসাইবাজারের রাস্তা ব্যবহার করতাম। এখন সব রাস্তা ভাঙা। টানা বৃষ্টিতে চারপাশে পানি জমে থাকে। রোদেলা দিনেও কালচে নোংরা পানির সঙ্গে বসবাস করতে হয়। একসময় অফিসের জন্য ব্যস্ত জীবন কাটাতাম। এখন বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি।’
শফিউলের এই গল্প শুধু তাঁর একার নয়, দক্ষিণখানের আশকোনা, কাওলা, প্রেমবাগান ও গাওয়াইরের হাজারো মানুষের এটি প্রতিদিনকার বাস্তবতা। সরেজমিন দেখা যায়, আশকোনা বাজার থেকে কাওলা বাজার পর্যন্ত সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত। ভাঙাচোরা রাস্তা আর খোঁড়া স্যুয়ারেজ লাইন। হজ ক্যাম্প থেকে সাবেক কাউন্সিলরের অফিস কিংবা প্রেমবাগানমুখী রাস্তা–সবখানেই একই চিত্র। অথচ প্রতিদিন এসব রাস্তা দিয়ে চলে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ।
বর্তমানে হজ ক্যাম্পের সামনে চলছে আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ। সঙ্গে স্থানীয় সড়ক সংস্কার। ভাসমান বাজার আর অব্যবস্থাপনার কারণে যাতায়াত আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, কয়েকশ মিটার পথ পার হতে কখনও এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. ইয়াছিন জানান, কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টিতে তাঁর এলাকা আইনুছবাগে কোমরসমান পানি জমেছিল। বাধ্য হয়ে অফিস থেকে সাত দিনের ছুটি নিতে হয়। তিনি বলেন, ‘পানি না নামলে অফিসে যাব কীভাবে? গাড়ি চলে না, হেঁটে যেতেও ভয় লাগে।’
ডেঙ্গুর আতঙ্ক
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অন্যান্য এলাকার চেয়ে আশকোনা ও কাওলা-গাওয়াইর এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খোঁড়া রাস্তা এবং সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে থাকার কারণে এখানে মশার ব্যাপক উপদ্রব। এ অঞ্চলকে ডেঙ্গুর ‘হাই-রিস্ক জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা। ২০২৪ সালের ডেঙ্গু মৌসুমে আশকোনা থেকে গড়ে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছরও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
প্রশাসনিক কাঠামো, কিন্তু নেই সমাধান
ডিএনসিসির পুরোনো ৩৬টির সঙ্গে নতুন ১৮টি যুক্ত হয়ে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪টি। এরমধ্যে কাওলা, আশকোনা ও গাওয়াইর নিয়ে গঠিত ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওয়ার্ডের সংখ্যা বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি। নতুন অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলো বরাবরের মতো অবহেলিতই রয়ে গেছে।
জানা যায়, হজ ক্যাম্পের সামনে আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করছে সেতু বিভাগ। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড (কাওলা, আশকোনা, গাওয়াইর)-সহ দক্ষিণখান এলাকার সড়ক উন্নয়নকাজ করছে সেনাবাহিনী। ডিএনসিসি প্রকৌশল বিভাগের সহযোগিতায় তারা উন্নয়নকাজ করছে। ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার জন্য সহায়ক সংস্থা হিসেবে যুক্ত রয়েছে ওয়াসা। রাস্তার পাশের ভাঙাচোরা ড্রেন ও খাল সংস্কারের কাজও একইসঙ্গে চলছে, যেটি করছেন ডিএনসিসির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে স্থানীয় ঠিকাদাররা।
এসব উন্নয়নকাজ শেষ করা ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আগামী বর্ষার আগেই, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সড়কের উন্নয়নের কাজ শেষ হবে। এ বছরের নভেম্বরের মধ্যে হজ ক্যাম্পের সামনে আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এরপরেই হাতে নেওয়া হবে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডসহ অন্যান্য সড়কের সংস্কার কার্যক্রম।