Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্য সাম্প্রতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনার অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ডোনাল্ট ট্রাম্প দুইটি মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিনকে “উপযুক্ত অঞ্চলে” মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপকে তিনি রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের “উত্তেজক” মন্তব্যের জবাব হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলছেন এটি ‘সতর্কতামূলক’, কিন্তু এটি এক স্পষ্ট বার্তা—রাশিয়ার হুমকি আর সহ্য করা হবে না। তবে এই ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পারমাণবিক সংকটকে ফের উসকে দিচ্ছে। ট্রাম্পের কৌশলগত পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশকে বিশ্ব পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় বলে মনে করছেন অনেকে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোস্যাল-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে পুনঃমোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি, কেবল যদি এই বোকামি ও উসকানিমূলক মন্তব্য শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে।”
হুমকি-পাল্টা হুমকি
এর আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প রাশিয়াকে ৮ আগস্টের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। তা না হলে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন তিনি। পরদিন মেদভেদেভ এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্পের হুমকিকে “যুদ্ধের দিকে একটি পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেন। তিনি লেখেন, “ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত হুমকির খেলা খেলছেন।”
জবাবে ট্রাম্প বলেন, “শব্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এসবের অপ্রত্যাশিত পরিণতি হতে পারে। আশা করি এবার তা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “মেদভেদেভকে জানাও, ব্যর্থতাগ্রস্ত রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এখনো নিজেকে প্রেসিডেন্ট মনে করেন। তাঁর এখন সতর্ক থাকা উচিত। তিনি খুবই বিপজ্জনক ভূমিকায় প্রবেশ করছেন।”
কেন এমন পদক্ষেপ ট্রাম্পের?
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়া এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে সরাসরি অগ্রগতি না আসায় ট্রাম্প হতাশ। মেদভেদেভের কড়া মন্তব্য সেই হতাশাকে রূপ দেয় আরও একধাপ উত্তেজনায়।
ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর নির্বাচনী প্রচারের আগেই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করবেন; তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।
‘ডেড হ্যান্ড’ ইঙ্গিত: রাশিয়ার ভয়ঙ্কর কৌশল
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান মেদভেদেভ ‘ডেড হ্যান্ড’ নামের স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক প্রতিশোধ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে আমেরিকাকে সাবধান করেছেন। অর্থাৎ, রাশিয়ার নেতৃত্ব যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবুও পারমাণবিক অস্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছুটে আসবে। এটি সরাসরি একটি পরমাণু ভয়াবহতার ইঙ্গিত।
কূটনৈতিক সম্পর্কের সংকট
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে কার্যত কোনো গঠনমূলক পরমাণু চুক্তি বা আলোচনা নেই। আগের নিউ স্টার্ট চুক্তি বা ইনএফ ট্রিটি এখন অকার্যকর। পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাবে সামরিক পদক্ষেপগুলোকে সহজেই আক্রমণ হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
ভারত ও ব্রিকসকে শাস্তি?
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর মধ্যে ভারতকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প ২৫% আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন। ব্রিকস জোটের দেশগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরক্তি প্রকাশ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল ও চীনের ওপর। ভারতের প্রতি শুল্ক আরোপ একটি ‘উদাহরণমূলক শাস্তি’, যাতে অন্য দেশগুলোও রাশিয়ার পাশে দাঁড়াতে সাহস না পায়।
সাবমেরিন রহস্য
ট্রাম্প নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি কোন ধরণের সাবমেরিন মোতায়েন করা হয়েছে—এগুলো পারমাণবিক চালিত কিনা, না পারমাণবিক অস্ত্রবাহী। মার্কিন সামরিক প্রটোকল অনুযায়ী এসব তথ্য সাধারণত গোপন রাখা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্দেশ সত্যিকার অর্থে কোনও বাস্তব সামরিক মোতায়েন নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার কৌশল। যুক্তরাষ্ট্র এমনিতেই রাশিয়ার আশপাশে পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করে রাখে।
কার কতটি পারমাণবিক সাবমেরিন আছে
জানুয়ারি ২০২৫-এর তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মিলে বিশ্বের মোট পারমাণবিক অস্ত্রের ৮৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ অস্ত্রই মোতায়েনযোগ্য অবস্থায়।
মার্কিন নৌবাহিনীর ৭১টি পারমাণবিক চালিত সাবমেরিনের মধ্যে ১৪টি ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (SSBNs), ৪টি গাইডেড-মিসাইল সাবমেরিন (SSGNs) এবং ৫৩টি অ্যাটাক সাবমেরিন রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার রয়েছে ৩০টির মতো পারমাণবিক সাবমেরিন, যার মধ্যে প্রায় ১০টি SSBNs।
রুশ পার্লামেন্ট সদস্য ভিক্টর ভোদোলাতস্কি দাবি করেন, রাশিয়া “বিশ্বের সমুদ্রে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করেছে এবং দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিনগুলোকে পর্যবেক্ষণ করছে।”
বিশ্লেষকদের মত
পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান FAS-এর হ্যান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ হুমকিপূর্ণ ভাষণবর্ধন এবং সম্ভবত উত্তেজনা বাড়ানোর ঝুঁকি। রাশিয়া ইতোমধ্যেই ভাষণগত হুমকিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সাবমেরিন মোতায়েন, পাল্টা হুমকি, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা—এসব ঘটনার সমষ্টি কূটনীতির জায়গাকে সংকুচিত করে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্র জড়িত যে কোনো উত্তেজনা খুব দ্রুত ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে সংঘাতে পরিণত হতে পারে।