সনদ স্বাক্ষর মঞ্চে ‘জুলাইযোদ্ধাদের’ বিক্ষোভ, নেপথ্যে কী

Bangla Tribune

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হঠাৎ ‘জুলাইযোদ্ধাদের’ ঢুকে পড়া ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আসলে তারা কী চায়? শুধুই কি তিন দফা দাবি নাকি নেপথ্যে অন্য কিছু ছিল? এ নিয়েও কথা হচ্ছে। আবার সনদে স্বাক্ষর না করা নিয়ে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনও যোগসূত্র আছে কিনা, সে প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। অবশ্য বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে দুপুরে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফার সংশোধনের কথা জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক কাফী রতন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোনও না কোনোভাবে এনসিপির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই এ ঘটনায় জুলাই সনদে দলটির স্বাক্ষর না করার সংযোগ থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন একটি অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে আন্দোলনকারীরা এভাবে মঞ্চের দিকে ঢুকে গেলো কীভাবে তাও প্রশ্নবোধক। এতে সরকারের নির্লিপ্ততাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মূলত এনসিপির প্রতি দুর্বলতার কারণে সরকার অনেক পরিস্থিতি শক্তভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি।’’

যদিও এনসিপির পক্ষ থেকে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘জুলাইযোদ্ধাদের কর্মসূচির সঙ্গে আমাদের স্বাক্ষর না করার সম্পর্ক নেই। আমরা আমাদের স্বাধীন মতামত জানিয়েছি। আজ স্বাক্ষর করতে পারিনি। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলে পরবর্তী সময়েও স্বাক্ষর করার সুযোগ আছে। তাই বলে সেখানে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আমাদের সমর্থন থাকার প্রশ্নই ওঠে না।’’ জুলাইযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) রাতেই জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ‘জুলাইযোদ্ধারা’।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ও নিজেদের দায়মুক্তিসহ তিন দফা দাবিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী টপকে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চে অবস্থান নেন ‘জুলাইযোদ্ধারা। তাদের তিনটি দাবি হচ্ছে—জুলাই সনদ সংশোধন, সনদকে স্থায়ীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং জুলাইযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেওয়া। সেখানে গিয়ে তারা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। পরবর্তী সময়ে জুমার পর তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে আমরা ‘জুলাইযোদ্ধা’ সংসদের প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম আপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘জুলাইয়ে আমরা জীবন বাজি রেখে মাঠে ছিলাম। আমরা শুধু  সরকারের কাছে স্বীকৃতি চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের কথার গুরুত্ব দেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এমন কর্মসূচি দিয়েছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা জুলাই শহীদদের প্রতি চরম গাদ্দারি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের ক্ষোভ থেকেই সেখানে গিয়েছি। সেখানে এনসিপি বা অন্য কারও ইন্ধনের প্রশ্ন সম্পূর্ণ অবান্তর।’’

জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার পরিবর্তন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আন্দোলনরত জুলাই যোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের পরপরই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ  জানান, জুলাইযোদ্ধাদের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে সনদে প্রয়োজনীয় জরুরি সংশোধন করা হয়েছে।

এ সময়  তিনি অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার সংশোধিত ভাষ্যটি পাঠ করেন। এতে বলা হয়েছে, ‘‘গণঅভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান, যেমন- মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’’

 

 

 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *