সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর গোলাগুলিতে আতঙ্কিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প

Google Alert – সশস্ত্র

সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর গোলাগুলিতে আতঙ্কিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প

ছবি: সময়ের আলো

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লেদা রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা। গেল তিন রাত ধরে পুরো ক্যাম্পজুড়ে দফায় দফায় চলে গোলাগুলির ঘটনায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে। এতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ক্যাম্পের বাকি রোহিঙ্গারা। গুলির শব্দ আর আতঙ্ক এখন লেদা ক্যাম্পবাসীর বাস্তবতা।

স্থানীয়দের ভাষ্য, গভীর রাতে চারদিক যখন নিস্তব্ধ থাকার কথা, তখনই আচমকা গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পাহাড় ও জনপদ। নূরালী পাড়া, পশ্চিম লেদা ও শিয়ালঘোনা গ্রামের মানুষজন রাত কাটাচ্ছে আতঙ্কে। কেউ কেউ সন্তানদের নিয়ে ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি কিংবা মসজিদে।

স্থানীয় এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুকেও চেপে ধরে রাখতে হচ্ছে যেন শব্দে ভয় না পায়। এর আগে ভয় ছিল কখন আরাকান সেনারা আসবে, আর এখন ভয় হয় কোন গ্রুপ কখন গুলি ছুঁড়ে বসে।

স্থানীয় ও রোহিঙ্গা সূত্র বলছে, ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে একাধিক সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী। এ সময় প্রতিটি দল চায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে মাদকপাচার, চাঁদাবাজি ও নিয়ন্ত্রণে থাকা রুটগুলো নিজেদের দখলে আনতে।

গত ১৩ জুলাই মধ্যরাতে রঙ্গিখালী উলুচামারি এলাকায় অন্তত ২০ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এলাকাবাসীর সরবরাহকৃত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কয়েকজন অস্ত্রধারী পাহাড়ি ছড়ার মধ্যে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চক্রগুলো চালাচ্ছে অপহরণ। সম্প্রতি হেফজ বিভাগের এক শিশু রিয়াজ অপহৃত হন ক্যাম্প এলাকা থেকে। তার বড় বোন আনোয়ারা বেগম জানান, সন্ত্রাসীরা তাকে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণের দাবি করে। হুমকি দেয় কাউকে জানালে রিয়াজকে হত্যা করা হবে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন আনোয়ারা বলেন, ১৪ দিন ধরে আমরা ভাইয়ের কোনো খবর পাইনি। থানায় জানাতে গেলে সবাই বলে, এটা ক্যাম্প পুলিশের বিষয়।

লেদা ক্যাম্পের বি ব্লকের মাঝি নুর বশর বলেন, আগে কিছুটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন নতুন রোহিঙ্গারা পুরাতন সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে মিশে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। রাত হলেই আমরা বন্দি হয়ে যাই, পুলিশকে ডাকলেও তারা আসে না।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পের পাহাড়ের ওপারে বসে আছে গ্যাংগুলো। আমরা কেবল গুলির শব্দ শুনি, তবু কাউকে ধরা হয় না।

স্থানীয়দের তথ্য ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে লেদা ক্যাম্প ও আশপাশে সাতটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা চক্র সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে- আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি (আরসা), রঙিখালীর আবুল আলম বাহিনী, সালমান শাহ গ্রুপ, শফি বাহিনী, পুতিয়া গ্রুপ, খালেক বাহিনী ও চাকমা ডাকাত দল। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কেউ কেউ সাবেক রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনের ছায়াতলে গড়ে উঠেছে। কেউ আবার ক্যাম্প ভিত্তিক দখলদার গ্যাং হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কাউছার সিকদার বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমাদের নজরে আসেনি। তবে অপহরণের বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি এবং খোঁজখবর নিচ্ছি।

ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা পুলিশের এ ধরনের মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় রোহিঙ্গারা। তাদের ভাষায়, প্রশাসনের উদাসীন হওয়ার কারণেই সন্ত্রাসীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রধারী গোষ্ঠীগুলোর এই দাপট গোটা এলাকার স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে ক্যাম্প হবে জঙ্গি ও অস্ত্রব্যবসায়ীদের ঘাঁটি। যার প্রভাব ছড়াবে সীমান্ত পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও।

সময়ের আলো/এমএইচ

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *