সরকার কি তাহলে নিজে মব উসকে দিচ্ছে— প্রশ্ন জোনায়েদ সাকি’র

Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকার নিজে মব উসকে দিচ্ছে কী না, এ প্রশ্ন তুলেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মব আক্রমণ হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি বললেন, এটা মব না প্রেশার গ্রুপ। মানেটা কি? প্রেশার গ্রুপ জিনিসটা কি? আপনি যদি মনে করেন যে অমুক ব্যক্তি অন্যায় করেছে তার শাস্তি হওয়া দরকার, তো আপনার সভা-সমাবেশ করার জায়গা আছে। তার বাড়িতে হামলা করা আপনার এখন কর্তব্য না।’

তাহলে সরকার কি নিজে এটা উসকে দিচ্ছে- এ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘অমুককে আমার ধরতে হবে, ধরার আগে একটা নাটক করতে হবে। একি আশ্চর্য ব্যাপার! শেখ হাসিনা যেমন করতো, কাউকে অ্যারেস্ট করার আগে নানা প্লট তৈরি করতো। আগে তাকে একটু ভিলেন টাইপ বানিয়ে নিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দু-তিনদিন ধরে তাকে নিয়ে বেশ একটা ইয়ে চলতো, তারপর তাকে অ্যারেস্ট করতো। তাহলে তো সেইম পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করছেন।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য বহু আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে। আমরা বলেছি, সকলেই বলেছে। জবাবদিহির আওতায় আনেন। আপনারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেন। তারপর তাদেরকে যদি বিচারিক জায়গায় নিতে হয় তাহলে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকেন।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গলায় জুতার মালা পরানো নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সাকি বলেন, ‘আপনি কোনো ব্যক্তির গলায় জুতার মালা পরাবেন, এটা একজন ব্যক্তির যে মানবিক অস্তিত্ব তাকে আপনি অপমান করছেন। এটাকে বলে বিমানবিকীকরণ। একজন সর্বোচ্চ অপরাধীকেও তা করা হয় না কিন্তু। কারণ কোনো অপরাধীকে ফাঁসি দিলেও তারও কতগুলো মানবিক অধিকারকে স্বীকার করে নিয়ে কিন্তু সে কাজটা করা হয়।’

‘আপনি এটা করতে পারেন না। এই যে উদাহরণ তৈরি হচ্ছে, উদাহরণ কিন্তু ফেরত আসবে। এই উদাহরণগুলো কোনো কারণেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ রাজনৈতিক সংগ্রাম করে সেটা মব না। সেটার পরিষ্কার উদ্দেশ্য থাকে। মব আর গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক সংগ্রাম এ দুটোকে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। ভবিষ্যতে এরকম দাঁড়াবে, রাজনৈতিক সংগ্রাম আর মব যেন একই জিনিস। ফলে মবকে জাস্টিফাই করার কোন রকম সুযোগ নেই। মব কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ নয়। তা হলে রাষ্ট্র তার নিজের অস্তিত্বকেই আসলে নাই করে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে সাকি বলেন, ‘বন্দরের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, যেটাকে অর্থনীতির হৃদপিণ্ড হিসেবে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন, সেটা যেমন অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড আবার একইসঙ্গে এটা নিরাপত্তা ও কৌশলগত দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ফলে এই বন্দরের ওপর সার্বভৌম কর্তৃত্ব আমাদের জনগণের, সরকারের থাকা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘তারপর এর অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত দিক উন্নতির জন্য সরকার নানা পরিকল্পনা করতে পারে। সেখানে প্রয়োজন হলে প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য কাঠামোগত সহযোগিতা যদি বিদেশ থেকে নিতে হয়, সেটাও নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেটা স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে, স্পষ্টতার সঙ্গে হতে হবে। জনগণকে জানিয়ে জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার কী জনগণকে জানাতে পারত না যে, প্রকৃত অর্থে কী করা হচ্ছে। সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত না ? এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন চলছে, সেটা কি স্রেফ সরকার ক্ষমতায় আছে বলে আমরা ক্ষমতা বলে করে ফেলব? এই পদ্ধতির সাথে আমরা একেবারেই একমত না।’

‘সরকার কি প্রস্তাব করছে এটা এখন পর্যন্ত আসলে জনগণ অন্ধকারে। সরকার মনে হচ্ছে একটা বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে দিচ্ছে। কি জায়গা দিচ্ছেন, কোন শর্তের ভিত্তিতে দিচ্ছেন, কত বছরের জন্য দিচ্ছেন সমস্ত আলাপ আলোচনা জনগণের জানার অধিকার ছিল। জনগণ না জানলে এরমধ্যে যে আশঙ্কাগুলো আছে যে, এটা কি বিদেশিদের কর্তৃত্বে চলে যাবে? আমরা কি নানান দিক থেকে সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে?’

জোনায়েদ সাকী আরও বলেন, ‘বন্দরে একটা অলরেডি মাফিয়াতন্ত্র কায়েম হয়েছে। নানা দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। সেগুলো বদলানো যাবে কিভাবে সেটা একটা বিশেষ আলোচনা। কিন্তু সেটা বদলানোর একমাত্র প্রতিষেধক হচ্ছে একটা বিদেশি কোম্পানিকে এনে দিয়ে দেওয়া, এই প্রতিষেধক যে কোথাও কোথাও কাজ করে নাই, সেই বিষয়েও তো আলোচনা আছে।’

‘কাজেই আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, যদি বিদেশি কোম্পানি আনতে হয়, প্রযুক্তিগত সহায়তা লাগে সেটা একটা বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু বন্দরে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই একলাফে কেবল একটা বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া এবং কোনোরকম জনগণকে যথেষ্ট পরিমাণে ব্যাখ্যা না দেওয়া। সেটা মানুষের মধ্যে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন নিয়ে, বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এবং দেশের এতদিনকার বিনিয়োগকৃত লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।’

তিনি বলেন, ‘দাবি করি অবিলম্বে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। স্পষ্টতার সঙ্গে যাওয়া দরকার এবং জনগণের আলোচনার ভিত্তিতে যে রায়টা আসবে সেখানেই সিদ্ধান্তে যাওয়া দরকার।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *