সাংবাদিক তুহিন হত্যা: গ্রেফতার আসামিদের জবানবন্দি সোমবার

Google Alert – সশস্ত্র

গাজীপুরে আলোচিত সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে তদন্তে এসেছে নতুন অগ্রগতি। পুলিশের হাতে পৌঁছানো ময়নাতদন্ত রিপোর্টে নিশ্চিত হয়েছে—তুহিন ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল, যা হত্যার পূর্বপরিকল্পিত ও নৃশংস চরিত্র স্পষ্ট করে।

হত্যার পটভূমিঃ

গত ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক তুহিন সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড মোবাইলে ভিডিও করছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলযোগে আসা সশস্ত্র হামলাকারীরা তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে।

তদন্তের অগ্রগতিঃ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান জানান—গ্রেফতার তিন আসামিকে সোমবার (১১ আগস্ট) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তোলা হবে। তদন্ত কর্মকর্তারা বিশ্বাস করছেন, এই জবানবন্দি থেকে হত্যার মূল কারণ, পরিকল্পনাকারী এবং পৃষ্ঠপোষকদের পরিচয় বেরিয়ে আসতে পারে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরের ডিসি (ক্রাইম) রবিউল হাসান জানান—প্রধান আসামি শহিদুল ইসলামকে র‌্যাব কিশোরগঞ্জের ইটনা থেকে গ্রেফতার করে শনিবার রাতে গাজীপুরে নিয়ে আসে।

গাজীপুর মেট্রো বাসন থানার ওসি শাহীন খান বলেন—শহিদুলের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে, শুনানি সোমবার(১১ আগস্ট)।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রশ্নঃ

গ্রেফতার হওয়া আরেক আসামি, খুলনা মহানগরের সোনাডাঙ্গা থানার ময়লাপোতা গ্রামের মো. আল আমিন (২১), বর্তমানে গাজীপুরের সাধুপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। তাকে ডিএমপি তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাকে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায়।

অন্য আসামিরা গাজীপুরের স্থানীয় নয়—এখানে কীভাবে তারা আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছিল, সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ বলছে, এই নেটওয়ার্কে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনাও তদন্তে দেখা হচ্ছে।

পুলিশের অবস্থানঃ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন—

“ঘটনার সাথে কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তুমি আরো জানান আমরা খুব সতর্কতার সাথে তদন্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি যাতে কোন নির অপরাধ আসামি না হয়ে যায়।

“আমরা শুধু সরাসরি হত্যাকারীদের নয়, তাদের পেছনে যদি কেউ থেকে থাকে—তাদেরও আইনের আওতায় আনব। তদন্তে নতুন তথ্য পাওয়া গেলে পুরো ঘটনার চিত্র জনসমক্ষে আনা হবে।”

সাংবাদিক সমাজের ক্ষোভঃ

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এই মামলার বিচার দাবি করেছে। সহকর্মীদের ভাষায়—

“তুহিনের একমাত্র অপরাধ ছিল, তিনি সত্য তুলে ধরছিলেন।”

অপরাধ সাম্রাজ্যের চিত্রঃ

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মোবারক হোসেনের ছেলে কেটু মিজান রংপুর থেকে স্ত্রী গোলাপীকে নিয়ে গাজীপুরে এসে গড়ে তোলেন অপরাধ সাম্রাজ্য। তাদের টার্গেট ছিল মূলত চান্দনা চৌরাস্তা ও আশপাশের এলাকা। গোলাপী ‘হানিট্র্যাপ’ পেতে তরুণদের ফাঁদে ফেলতেন, আর মিজান ও তার সহযোগীরা ছিনতাই করতেন।

গ্রেপ্তার হওয়া আটজনের মধ্যে রয়েছেন—মিজান, তার স্ত্রী গোলাপী, মো. স্বাধীন (পাবনা), আল আমিন (খুলনা), শাহ জালাল (কুমিল্লা), ফয়সাল হাসান (পাবনা), সাব্বির সুমন (শেরপুর) এবং শহীদুল ইসলাম (ত্রিশাল)। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধারায় মোট ২৯টি মামলা রয়েছে। শুধু মিজানই ১৫ মামলার আসামি।

নেপথ্যের অন্ধকার জালঃ

তদন্ত সূত্র বলছে—আসামিদের কল রেকর্ড, আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক যোগাযোগ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এতে গাজীপুরের অপরাধ-রাজনীতির দীর্ঘদিনের অন্ধকার নেটওয়ার্ক উন্মোচিত হতে পারে, যেখানে স্থানীয় ও বহিরাগত অপরাধীরা মিলেমিশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *