সিইসির কাছে ‘ভালো নির্বাচনের শর্ত’ তুলে ধরল জামায়াত

Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির মধ্যে জামায়াতে ইসলামী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে আসন সীমানা নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে।

সেই সাথে তাদের দাবি-শর্ত পূরণ না হলে ‘প্রতিশ্রুত ভালো নির্বাচন হবে না’ বলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলে এসেছে দলটির প্রতিনিধি দল।

বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনা-সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

বৈঠক শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সাংবাদিকদের বলেন, “সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ হয়েছে এবং শুনানির দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। আসনভিত্তিক সংক্ষুব্ধ বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে কমিশনের কাছে।”


ইতোমধ্যে ৩৯টি আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে ইসি। পরে ১০ অগাস্টের মধ্যে দাবি আপত্তিও এসেছে। সব মিলিয়ে ৮২টি আসনে ১৭৬০টি দাবি-আপত্তি আবেদন পড়েছে। রোববার থেকে শুনানি হবে।


জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আজ আমাদের মূল বিষয় ছিল সীমানা নির্ধারণ নিয়ে। আমাদের কিছু বক্তব্য আছে, তুলে ধরেছি। সবার বক্তব্যকে যেন সমন্বয় করা হয়; আবার আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে মামলায় পড়ে যাতে ঝুলে না যায়। যৌক্তিক দাবিগুলো খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি (সিইসি) আশ্বাস দিয়েছে।”


নির্দিষ্ট কোনো আসনে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কি-না, এমন প্রশ্নে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “সামগ্রিকভাবে আমরা কথা বলেছি… ওনারা যেটা বলেছেন, এখানে আমাদের যে বক্তব্যগুলো যেখানে যেখানে যৌক্তিক মনে করবেন, সেগুলো ওনারা বিবেচনায় আনা যায় কিনা এটা খতিয়ে দেখবেন।”

জামায়াতের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির ও কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুর রহমান মূসা, একই শাখার সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত ও আবিদ হাসান।

গেল ৫ অগাস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন।

পরদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ভোটের প্রস্তুতি নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়। ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আভাস দিয়েছে, আর এ মাসে রোডম্যাপ ঘোষণার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন।

তার আগে এদিন নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে বৈঠক বসেন নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা আসার পর ইতিবাচক সাড়া দিলেও গেল ৭ অগাস্ট জরুরি বৈঠক করে সাত দফা দাবি আদায়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

দলটির সাত দাবি হল-

>> ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সব গণহত্যার বিচার।

>> রাষ্ট্রের সব স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার।

>> ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন।

>> জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন।

>> জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন।

>> প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ।

>> রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতকরণ।

এছাড়া নির্বাচন আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ চেয়েছে জামায়াত।

‘দাবি পূরণ না হলে প্রতিশ্রুত ভালো নির্বাচন হবে না’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর জামায়াত নেতা আযাদ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে তাদের দল।

নির্বাচনের আগে তাদের দাবি ও শর্তগুলো নিশ্চিত করার দাবি তুলে ধরার বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও উৎসবমুখর ভোট নিয়ে সিইসির সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।


আযাদ বলেন, “বাংলাদেশে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আসেনি। সে কারণে আমরা অন্যান্য দাবির সাথে এটা জোরালোভাবে বলছি যে, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে যেটা এখনও অনুপস্থিত আছে। কমিশন বলছে, তারা কাজ করছে।”


ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার জন্য আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের পক্ষ থেকে এই দাবি করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে আপনারা নির্বাচনের সময়সূচি দিতে পারেন।… সরকার প্রস্তুত হলে এ সময়সূচিতে নির্বাচন করতে পারে।”


চলতি বছরের ডিসেম্বরেও যদি নির্বাচন হয়, তাতেও জামায়াতের কোনো আপত্তি না থাকার কথা বলেছেন তিনি।


নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “কিন্তু নির্বাচনের জন্য যে শর্ত এবং দাবিগুলো আমরা দিয়েছি, এগুলো নিশ্চিত করে নির্বাচনে যেতে হবে। তাহলে আমরা মনে করি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভালো নির্বাচন হবে, না হলে ভালো নির্বাচন হবে না।”


পিআর পদ্ধতি ও রোডম্যাপ

সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে জামায়াত।


পিআর পদ্ধতি ছাড়া জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যাবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে আযাদ এ পদ্ধতির সুফল তুলে ধরেন।


তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সবসময় আমরা আন্তরিক ছিলাম। এই পদ্ধতিটাও, আমরা আন্তরিকভাবে মনে করি যে দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে, একটা সেরা পদ্ধতি।”


পিআর পদ্ধতিতে ভোটারদের যথাযথ মূল্যায়ন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল বলেন, “আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে, মাঠে-ময়দানে আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। আমরা জনমত গঠনের কাজ করছি।”


রোডম্যাপ নির্বাচন কমিশনের নিয়মমাফিক কাজ, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, করণীয় কাজের তালিকা ধরে নির্বাচন কমিশন দৈনন্দিন কাজ করবে। ২০০৮ সাল থেকে রোডম্যাপ করছে কমিশন, তার কাজের সুবিধার্থে।

আরও পড়ুন:

সীমানা নির্ধারণ: ইসিতে শুনানি রোববার থেকে চলবে চারদিন

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *