jagonews24.com | rss Feed
সিভিল সার্ভিসকে দলবাজির পুরোনো পথে আর নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা জানান।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ সব ব্যাচের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, কোনো একটি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পৃথিবীতে এত মানুষ আর কোথাও মারা যায়নি। ২০১৮ সালের আন্দোলন বৃথা যায়নি। তখন শিশু-কিশোরেরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল রাষ্ট্রপরিচালনাকারীরা ব্যর্থ। তাদের সেই বার্তা কেউ গ্রহণ করেনি। ২০২৪ সালে তারা তা বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, সিভিল সার্ভিসের সামনে দুটি পথ রয়েছে। এর যে কোনো একটি পথ বেছে নিতে হবে। সিভিল সার্ভিসকে পুরোনো পথে নেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের আমলে একটি মহাসুযোগ তৈরি হয়েছে। এসময় প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর দলীয়করণ নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করার কোনো চাপ নেই। সরকার কর্মকতাদের আইন-কানুনের ভেতরে থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
মুখ্য আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, গত সরকারের আমলে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। অভ্যুত্থানের ফলে বঞ্চিত অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে। এখন রাজনীতি থেকে প্রশাসনকে দূরে রাখতে হবে। প্রশাসনে যোগ্য মানুষ থাকবেন। পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করবেন। তবে দলীয় নীতি বাস্তবায়ন করার কারণে সমস্যাটা হয়েছে। আমাদের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে হবে। মাঠ প্রশাসনে মনিটরিংয়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে জনগণ ও শহীদ পরিবারকেও যুক্ত করার দরকার। সিভিল সার্ভিসের যেমন বহু পুরোনো ইতিহাস রয়েছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সভ্যতার সূতিকাগার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রশাসনের মেলবন্ধন শক্ত করতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারের কাজগুলো প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করছেন। আমরা পেছনে তাকাবো না। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে সাহস ও সততা বজায় রাখতে হবে। কর্মকর্তাদের কেউ দুর্নীতি করলে এ দায় কেউ নেবে না।
তিনি বলেন, পাঠ্যবইতে শহীদ আনাসের চিঠি যুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকার গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করছে।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা বলেন, আমরা কাজ করার জন্য আগ্রহী। আমাদের কাজে লাগান। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আজ্ঞাবাহী হওয়ার জন্য জনগণের টাকায় আমাদের বেতন দেওয়া হয় না। জনগণের সেবার জন্যই বেতন দেওয়া হয়। আর কেউ যাতে ফ্যাসিস্ট না হতে পারে সে জন্য আমরা কাজ করবো।
অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, দলবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে প্রশাসন ক্যাডারের অস্তিত্ব বিলীন হবে। আগামী নির্বাচনে কেউ যাতে আমলাদের ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর বলেন, বিগত আমলে রাজনীতির সঙ্গে প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়েছিল। দুর্নীতির জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবকের স্থলে জনগণের প্রভু হয়ে গিয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু কোটার জন্য হয়নি; জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনকে সেবামূলক, মানসম্মত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারত্বের সাথে প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া জনপ্রশাসনের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ, মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশগড়ার প্রত্যয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। আমাদের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট দেশে সরকার ছিল না। সে সময়ে প্রশাসনের সদস্যরা দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন।
সেমিনারে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জুলাই গণঅ্যভুত্থানের চেতনা ও দর্শনকে ধারণ করে আগামী দিনে দলীয় চিন্তা ও মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্রতী হবে মর্মে সেমিনারে জোরালো প্রত্যয় ও প্রত্যাশার কথা জানান।
সেমিনারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন। এ সময় শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দ্বীপ্তি, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ আবু সাঈদের ভাই মো. রমজান আলী ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বক্তব্য দেন। তারা আগামী দিনের জনপ্রশাসনের কাছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত পরিবার এবং দেশবাসীর প্রত্যাশা তুলে ধরেন।
আরএমএম/এমআইএইচএস