সীতাকুণ্ডে এত চোরাই তেল আসে কীভাবে!

jagonews24.com | rss Feed

# অসৎ চালক-হেলপাররা তেলের বিক্রেতা
# তেল কিনতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর আতঙ্ক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়কের পাশে মাত্র ২৫ কিলোমিটার এলাকায় চোরাই তেলের দোকান রয়েছে ৪০টি। কম দামে কিনে বেশি দামে তেল বিক্রির লোভেই বসেছে এসব দোকান। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং মালিকরা। অন্যদিকে রয়েছে নিরাপত্তার চরম ঝুঁকি। তবে অসৎ চালক-হেলপার এবং ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে দিনকে দিন রমরমা হয়েছে এ অপকর্ম।

সম্প্রতি এমন একটি দোকান থেকে তেল কেনার সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিষয়টি আলোচনায় এলেও তেলের চোরাকারবারি বন্ধ হয়নি। প্রকাশ্যে বছরের পর বছর এসব তেল বেচাকেনা চললেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারো। টাকার বিনিময়ে স্থানীয় ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করে’ এসব ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ অংশে মহাসড়কের পরিবহন থেকে চোরাই তেল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা জমজমাট। শুধু উপজেলার কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের ২৫ কিলোমিটারেই রয়েছে এরকম ৪০টি দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোররাতে এসব দোকানে একের পর এক যানবাহন দাঁড়িয়ে তেল বিক্রি করে। তাদের কাছ থেকে কেনা তেল বিক্রি চলে দিনব্যাপী।

সরেজমিনে মহাসড়কের দুইপাশে দেখা গেছে, কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কে কিছু দূর পরপর এ ধরনের চোরাই তেলের দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানের সামনে ১-২ জন করে লোক বসা। এ দোকানগুলোর সামনেই তেলের লরি বা অন্যান্য পরিবহন দাঁড়ানোর পর পাইপ দিয়ে জ্বালানি তেল ট্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়।

বন্দর থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ির চালক-হেলপার এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ির চালক-হেলপাররা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য যে পরিমাণ তেল পান সেখান থেকে ১০-২০ লিটার বা যতটুকু সম্ভব তা গাড়ি থামিয়ে এখানে বিক্রি করে দেন। তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে তেল বিক্রি করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা তা কেনেন। পরে বাজারমূল্যে বিক্রি করলেও ব্যাপক লাভ হয় তাদের।

মাসোহারার বিনিময়ে ব্যবসার পাহারা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চোরাই তেল ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজারে এক লিটার তেল যদি ১০০ টাকায় বিক্রি হয় তা আমরা কিনে নিই ৫০-৬০ টাকায়। এতে আমাদের অর্ধেক লাভ থাকে। আবার চালক-হেলপাররা কোনো বিনিয়োগ না করে শুধু তেল বিক্রি করেই হাজার হাজার টাকা আয় করছে। তাতে আমরা দুই পক্ষই লাভবান।

তিনি বলেন, মাঝে মাঝে পুলিশের সোর্স আসে। মাসে মাসে তারা দোকান অনুসারে ৩ হাজার, ৫ হাজার কিংবা ১০ হাজার করে নিয়ে যায়। পুলিশও ঝামেলা করে না। আর এখানে কখনো কোনো অভিযানও চালানো হয়নি।

গত ২৬ জানুয়ারি ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকার একটি চোরাই তেলের দোকানি তেলের গাড়ি থেকে তেল নেওয়ার সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এতে ওই এলাকার ১৫টি দোকান পুড়ে অন্তত ৩ কোটি টাকার সম্পদহানি হয়। ঘটনার পর মো. শাকিল নামের ওই তেল ব্যবসায়ী পালিয়ে যান।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ মো. আব্দুল্লা আল মামুন এ নিয়ে বলেন, আমরা ৯ ঘণ্টায় ওই আগুন নেভালেও তেল ব্যবসায়ীকে পাওয়া যায়নি।

মহাসড়কের ফৌজদারহাটে অবস্থিত মা ফাতেমা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. রুবেল বলেন, যেসব ফিলিং স্টেশন ভাড়ায়চালিত লরি দিয়ে ডিপো থেকে তেল কিনে আনেন, তাদের অনেক চালক-সহকারী তেল চুরি করে এ ধরনের অবৈধ দোকানে বিক্রি করেন। এছাড়া কিছু ডাম্প ট্রাক, এক্সক্যাভেটর, বুলডোজার চালকও তেল চুরি করে বিক্রি করেন। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

সীতাকুণ্ডের আরেক ফিলিং স্টেশনের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার ফিলিং স্টেশনের একাধিক গাড়ির চালক তেল চুরির সঙ্গে জড়িত। প্রমাণ পাওয়ায় অনেককে চাকুরিচ্যুত করেছেন। গত চার বছরে ১১ জনকে তেল চুরির অপরাধে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে জানান।

তিনি জানান, চালকরা একেকবার অন্তত ৫০ থেকে ১০০ লিটার তেল চুরি করে। এছাড়া লরির ট্যাংকের তেল খালাস করার পরও তলায় কিছু তেল থেকে যায়। সেগুলো চালকরা চোরাই তেলের দোকানে কম দামে বিক্রি করে।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অন্তত ২০-২৫টি অবৈধ তেলের দোকান থাকতে পারে। তবে সঠিক তথ্য নেই।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান বলেন, মহাসড়কের পাশে ঠিক কতটি চোরাই তেলের দোকান রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এখান থেকে আগে লেনদেন হতো কি না জানি না। আমি আসার পর এ বিষয়ে অবগত হইনি। তবে দু-একদিনের মধ্যে এসব দোকানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক-মহাসড়কের পাশের জমি সওজের। তারাই কেবল জানে এ ধরনের কতটি অবৈধ তেলের দোকান রয়েছে। দোকানগুলো অবৈধ হলে সওজ উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা সওজকে সহযোগিতা করবেন বলে জানান।

সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন জানান, তাদের কাছে সড়কের পাশের যত অবৈধ স্থাপনা আছে তার তালিকা রয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে অবৈধ চোরাই তেলের দোকান কয়টি, তার কোনো হিসাব নেই। দু-একদিনের মধ্যে তারা এ ধরনের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে দেবেন বলে জানান তিনি।

এম মাঈন উদ্দিন/এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *