সেনাবাহিনী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহযোগিতায় প্রস্তুত : সেনাপ্রধান

Google Alert – সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশ এখন নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে উল্লেখ করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি জানান, দীর্ঘ সময় ধরে সেনারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন যা অতীতে কখনো হয়নি। এ জন্য সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এবং দূরত্ব দূর করার পরামর্শ দেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাসদস্যদের উদ্দেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং সব সেনা স্থাপনার কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে নানা কটূক্তির প্রসঙ্গে সেনা প্রধান বলেছেন, এসব মন্তব্যে মন খারাপ করার কিছু নেই। যারা এসব করছে, তারা অনেকটা আমাদের সন্তানের বয়সী। সময়ের সাথে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে এবং তখন নিজেরাই লজ্জিত হবে।

সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্বে জোর দিয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, সেনাবাহিনী একটি পেশাদার সংগঠন। দায়িত্ব পালনের সময় পেশাদারিত্বই মুখ্য। তিনি সতর্ক করে দেন, ‘প্রতিশোধমূলক কোনো কর্মকাণ্ডে সেনাসদস্যরা জড়াবেন না।’

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, এক সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইভাবে আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগও তদন্তাধীন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘নৈতিক স্খলনের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তবে কোনো অভিযোগের বিচার হবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ট্রায়াল’-এর মাধ্যমে, বরং প্রমাণের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় রোধে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে সেনাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, একজন সেনা কর্মকর্তাকে তৈরি করতে রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তাই দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করতে হবে। কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর তাঁকে বাদ দিলে সেটি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়।

ভুয়া তথ্য নিয়ে জেনারেল ওয়াকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়ে সেনাপ্রধান সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, এসব বার্তায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না এবং সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কেউ গুজব ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে না পারে।

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সবশেষে সেনাপ্রধান সেনাসদস্যদের উদ্দেশে বলেন, দেশের মানুষ এখন তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি উল্লেখ করেন- ‘তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণœ রাখতে হবে।’

ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’-এ সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য শুধু সামরিক বাহিনীর ভেতরে শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বানই নয়, এর মধ্য দিয়ে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকেও স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

বিশ্লেষকরা সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যে বিভিন্ন অন্তর্নিহিত বার্তার কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে-

সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও ভেতরের শৃঙ্খলা : বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কটূক্তি ও সমালোচনা হয়েছে। সেনাপ্রধান সেগুলোকে ‘সন্তানের বয়সী তরুণদের ভুল’ আখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। এ বক্তব্য মূলত সেনাবাহিনীর ভেতরে ধৈর্য, সহনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখার আহ্বান। এতে বোঝা যায়, বাহিনী নিজেকে নিয়ে জনসমালোচনায় অস্থির হতে চাইছে না বরং সময়ের বিচারে জনমতকে পরিণত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

নির্বাচনী প্রেক্ষাপট নিরপেক্ষতার বার্তা : দেশ এখন নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচনকালীন সেনাবাহিনীর ভূমিকা সবসময়ই জন-আস্থার জায়গা দখল করে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী।

এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ অবস্থানের আশ্বাস বহন করছে। একই সাথে দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জনগণের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর যে জোর দেয়া হয়েছে, তা সেনা-জন সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখার কৌশলগত ইঙ্গিত।

রাজনৈতিক বার্তা : বক্তব্যে রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে তদন্তের প্রসঙ্গ এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ‘কাউকে ছাড় না দেয়ার’ হুঁশিয়ারি-এগুলো সরাসরি রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। সেনাবাহিনী সদস্যদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা যে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, সেটি পরিষ্কারভাবে জানানো হলো।

নৈতিক স্খলনের অভিযোগও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাধান করা হবে, বাইরের চাপ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ট্রায়াল’ নয়, এটি প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার সঙ্কেত। একই সাথে নির্বাচনের আগে বাহিনীর ভেতরে শৃঙ্খলাজনিত কোনো ঘটনা যাতে রাজনৈতিক বিতর্কে পরিণত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার বার্তা এতে নিহিত।

সেনাপ্রধানের বক্তব্য তিনটি মূল স্তম্ভে দাঁড়িয়ে আছে- বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব রক্ষা, নির্বাচনী নিরপেক্ষতা ও আস্থার নিশ্চয়তা এবং সামাজিক সমালোচনার মুখে ধৈর্য ও দীর্ঘমেয়াদি ভাবমূর্তি রক্ষা।

এটি মূলত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনগণের আস্থা জোরদার করার একটি বার্তা। একই সাথে বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে কঠোর সতর্কবার্তাও যে সেনাবাহিনী কোনোভাবেই রাজনৈতিক খেলোয়াড় নয়, বরং রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ রক্ষক।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *