Google Alert – সেনা
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এ ছাড়া কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকাসংক্রান্ত ব্যত্যয়ের বিষয়ে অপর আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা-সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, গত ১৭ জুলাই উক্ত সেনা কর্মকর্তাকে তার নিজ বাসস্থান রাজধানীর উত্তরা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। আইএসপিআর জানিয়েছে, ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পূর্ণ তদন্ত সাপেক্ষে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে উক্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করা হচ্ছে। এ ছাড়া তার কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা-সংক্রান্ত ব্যত্যয়ের বিষয়ে অপর আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত শেষে আদালতের সুপারিশক্রম সেনা আইন অনুযায়ী দায় নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সেনাবাহিনী একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং পেশাদার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেনাবাহিনী তার সব সদস্যের মধ্যে পেশাদারি, শৃঙ্খলা ও সাংবিধানিক দায়িত্ববোধ বজায় রাখার প্রতি সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কে এই মেজর সাদিক? : আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে সেনা হেফাজতে রয়েছেন মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিক। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ৪০০ নেতা-কর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের অভিযোগে ১৭ জুলাই উত্তরার নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এরই মাঝে তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে কে এই মেজর সাদিক?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিক কক্সবাজারের রামু ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মেজর সাদিকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তার স্ত্রী সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমাইয়া জাফরিন। সাদেক ও সুমাইয়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার সময় শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। সেই সূত্রে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয় বলে জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে বিষয়টি সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সেখানে তাকে সহযোগিতা করছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া দিল্লি থেকে কৌশলগত ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করেন পলাতক অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান পলাতক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান। উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা, কাঁটাবন ও পূর্বাচল এলাকায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বাছাইকৃত ক্যাডারদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের দুই দিন আগেই একটি টোকেন সরবরাহ করা হতো। বাছাইকৃত এসব ক্যাডারের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিক।