স্বাধীন ফিলিস্তিনের কফিনে শেষ পেরেক

Google Alert – আর্মি

ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচের ঘোষণা নিয়ে আবারও উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি। বুধবার রাতে স্মতরিচ ঘোষণা দিয়েছেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পশ্চিমতীরে নতুন করে ৩ হাজারের বেশি বসতি নির্মাণ পরিকল্পনার অনুমোদন করেছেন তিনি। এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দেবে বলেও জানিয়েছেন স্মতরিচ। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

এ পরিকল্পনা নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে স্মতরিচের। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ওয়াই-নেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মা’আলে আদুমিম এলাকায় ৩ হাজার ৪০১টি নতুন আবাসিক ইউনিট নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এদিকে মানবাধিকার সংস্থা পিস নাউ জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে মোট ৪০৩০টি নতুন আবাসন ইউনিট অনুমোদন পেয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এর আগেও পিস নাউ এ ধরনের পরিকল্পনাকে ‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কফিনে শেষ পেরেক’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল। সংস্থাটি বলেছে, এই প্রকল্প কার্যকর হলে পশ্চিমতীর কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হবে। এতে রামাল্লাহ, পূর্ব জেরুজালেম ও বেথেলহেমের মধ্যবর্তী মহানগর অঞ্চলের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। স্মতরিচ প্রকাশ্যে এই ঘোষণা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এই পরিকল্পনার অনুমোদন নিশ্চিত করা হয়নি। তবে তিনি দাবি করেছেন, এবার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। স্মতরিচ বলেছেন, ‘এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে চিরতরে কবর দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে এই এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকা ছাড়া পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’

বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজম্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা চাইলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তি যেমন জার্মান শহর ড্রেসডেনে বোমাবর্ষণ করেছিল, তেমনভাবেই ফিলিস্তিনিদের ওপর বোমা ফেলতে পারি। কেন হামাস ও গাজা উপত্যকাকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমরা ড্রেসডেনের মতো বোমাবর্ষণ করতে পারি, চাইলে তাদের অনাহারেও মারতে পারি। যদি আমরা ইসরাইলবিরোধী সেই সব অপপ্রচার ও মিথ্যা অভিযোগ মেনে চলতাম, তাহলে এখন গাজায় কেউ বেঁচে থাকত না।’ ইসরাইল শুধু সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করেই হামলা চালায় বলেও দাবি করেছেন তিনি। নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক নিন্দার ঝড় উঠেছে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির ড্রেসডেন শহরে একযোগে হামলা চালায় ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র। ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি চার দফার আক্রমণে ব্রিটেনের রয়েল এয়ারফোর্সের ৭৭২টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি এয়ারফোর্সের ৫২৭টি বিমান শহরে ৩৯০০ টনের বেশি বিস্ফোরক ও অগ্নি বোমা ফেলে। হামলা এবং এর ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ আগুনের ফলে শহরের প্রায় ১৬০০ একর (৬.৫ বর্গ কিমি.) এলাকা ধ্বংস হয়। এই বোমাবর্ষণে নিহত হন আনুমানিক ২২৭০০ থেকে ২৫০০০ মানুষ।

এরই মধ্যে গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরাইল। ফলে আরও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তীব্র হচ্ছে মানবিক সংকট। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গাজা সিটি এবং রাফাহ শহরের কাছের একটি সাহায্যকেন্দ্রে ইসরাইলি হামলায় আরও ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪ জন অপুষ্টিতে মারা গেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি সামরিক হামলায় অন্তত ৬১৭৭৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৫৪৯০৬ জন আহত হয়েছেন।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *