Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এক বছর আগে এ জুলাইয়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, জনতার এক জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল-‘ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। মঙ্গলবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করে ড. ইউনূস বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তরুণ, ছাত্র-জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিকরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন-সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে গত বছরের প্রতিটি দিনকে পুনরুজ্জীবিত করব। এর মাধ্যমে নতুন করে শপথ নেব এবং এটা আমরা প্রতিবছর করব, যাতে স্বৈরাচার আর যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ছিল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করার যে অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি, এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। ১৬ বছর পর আমরা বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল, তাৎক্ষণিক তার যে লক্ষ্য ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন-নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
স্বৈরাচার যেন আর কখনো ফিরে আসতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা প্রতিবছর এ সময়টা উদযাপন করব যাতে পরবর্তী সময়ে আবার এ অভ্যুত্থান করার জন্য ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়। আমরা প্রতিবছর এটা করব, যাতে স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলেই তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তার বিনাশ করতে পারি। সেটার জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, সেসব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের-যারা রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন; সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। জুলাইকে ঐক্যের মাসে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা মাসব্যাপী যে কর্মসূচির সূচনা করছি, তা শুধুই স্মরণ নয়-বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে এ দেশের সব শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আমরা চাই, এ জুলাইয়ে সেই ঐক্য আবার সুসংহত হোক। তিনি বলেন, আমাদের এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য-জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সংস্কারের এ সুযোগকে হারিয়ে না ফেলা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্ত বড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তিই তাদের রুখে দিতে পারে না। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি আপনাদের আহ্বান জানাই-আসুন, এ জুলাই মাসকে পরিণত করি গণজাগরণের মাসে; ঐক্যের মাসে।
জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও বলেন, এ কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। আমাদের ঐক্য সর্বমুখী হোক, অটুট হোক আমাদের এ অনুষ্ঠানমালার লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বক্তব্য রাখেন।