হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

Google Alert – সামরিক

হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো ৩০ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গতকাল রাতে তাদের বহনকারী বিশেষ ভাড়া করা উড়োজাহাজটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। খবর বিবিসি বাংলা।

এর আগে গত ২ অগাস্ট ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ সামরিক উড়োজাহাজে আরো ৩৯ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। তাদেরই একজন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুবেল (ছদ্মনাম)। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘পুরা পেটে শিকল আছিলো, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দুই পায়েই কড়া লাগানো ছিল।’

উন্নত জীবনের খোঁজে গত বছরের অক্টোবরে ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ২৯ বছর বয়সী রুবেল। মাত্র আটদিন পরেই তাকে আটক করে নেয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে। দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় ১০ মাস সেখানে রাখা হয়। পুরো সময়জুড়ে দেয়া হয়নি পর্যাপ্ত খাবারও। তাদের সঙ্গে ছিলেন অন্য দেশের কয়েকজন নাগরিকও।

তাদের সবাইকে শিকল বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আড়াই দিনের সেই জার্নিতে কেবল চিজ দেয়া চারটি পাউরুটি, আর আধা লিটারেরও অর্ধেক পানি দেয়া হয়েছিল বলে জানান রুবেল।

একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সেই ফ্লাইটে ফেরত আসা আরেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বিবিসি বাংলাকে জানান, সে ফ্লাইটে অন্য দেশের নাগরিকও ছিল। আর বেঁধে রাখার বিষয়টিও পুরোটা সময় ‘কন্টিনিউ’ করেছে।

গত ঈদুল আজহার আগে ফেরত পাঠানো আরেকটি দলের সঙ্গে দেশে ফিরেছিলেন নোয়াখালীর ইমরান হোসেন। ব্রাজিলের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সড়ক পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি। ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সময় খুব কম খাবার দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনিও।

অবশ্য তাদের ফেরত পাঠানোর সময় বিমানে শিকল পরানো হয়নি বলে জানান তিনি। তবে বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরের ছোট একটি কক্ষে ১৫ ঘণ্টার মতো রাখা হয়েছিল, সেখানে পরানো হয়েছিল শিকল আর হাতকড়া।

অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ ভাড়া করা বিমানে একজন নারীসহ ৩০ বাংলাদেশীকে একইভাবে হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শিকল বেঁধে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তাদের একজন নোয়াখালীর আসগর হোসেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক ওই ফ্লাইটে ছিল। একেক দেশে গিয়ে তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে। পাঁচদিনের যাত্রার পুরোটা সময় তাদের শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘বিমান যখন আমাদের এখানে ল্যান্ড করছে, তখন আমাদের হাত থেকে শিকলটা খুলছে।’

তিন ঘণ্টা রানওয়েতে থাকা বিমানে বহনকারী যাত্রীদের হাতকড়া ও শিকল খোলা হয় এবং বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এড়িয়াতে পৌছানোর আগেই সবাইকে শিকলমুক্ত করে দেয়া হয়।

বিমানবন্দর ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে, ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরো অন্তত ৩৪ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১৮০ ছাড়িয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অমানবিকভাবে দেশের ফেরত পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশনের ডিআইজি পদে থাকা কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এভাবে কোনো বাংলাদেশী এয়ারপোর্টে আসে নাই। গতকালও আসে নাই। আমেরিকা থেকে যারা এসেছেন, তাদের কেউই এভাবে আসেন নাই। যারা বলে, তারা কেন বলে, কী জন্য বলে, আপনারা দেখবেন এটা।’

তবে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম বিবিসি বাংলাকে জানান, গতকাল এবং তার আগে যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের কারো কারো সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, যেকোনো মানুষের যেমন বৈধ পথে যেকোনো দেশে যাওয়ার নাগরিক অধিকার আছে, আবার কোনো দেশ যদি মনে করে সে আনডকুমেন্টেড মানুষ, তার নথি নাই, তাকে ফেরত পাঠাতে পারে। ওইটা ওই দেশের অধিকার। কিন্তু ফেরত আসার প্রক্রিয়াটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবশ্যই মানবিক হতে হয়। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নাই।

তিনি আরো বলেন, আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাদের হাতে হাতকড়া, শরীরে শিকল লাগিয়ে দীর্ঘসময় রাখা হচ্ছে। বিষয়টা আমরা বলবো মানবাধিকার লঙ্ঘন।’ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ যারা মানবাধিকারের কথা বলে তারা অন্তত এভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের এভাবে ফেরত পাঠাতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *