Google Alert – সেনা

  • অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন
  • প্রশিক্ষণার্থী আরো ৪ সেনা সদস্যের নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভয়ঙ্কর নাশকতার ছক তৈরি করেছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সশস্ত্র হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে ঢাকাকে অচল করতে এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর মেজর সাদিকের বিরুদ্ধে পতিত সরকারের নেতাকর্মীদের রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আইএসপিআর গতকাল জানায়, গত ১৭ জুলাই ওই সেনা কর্মকর্তাকে তার নিজ বাসস্থান রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়। ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে ইতঃমধ্যে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অন্তত চারটি স্থানে আরো প্রশিক্ষণের স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণার্থী আরো চার সেনাসদস্যের নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই প্রশিক্ষণে শতাধিক কট্টরপন্থী (দল থেকে সুবিধা বঞ্চিত) নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছে। তারা সবাই স্লিপারসেলের সদস্য। সময় বুঝে তারা সশস্ত্র অবস্থানে থেকে নাশকতার জন্য প্রস্তুত বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

এরই মধ্যে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক এমপি, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন কলকাতায়। যারা দিল্লিসহ, সিলেটের ওপারে মেঘালয়সহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে কলকাতায় এসে প্রতিদিনই সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নাশকতার ছক কষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামের একাধিক গ্রুপে বাংলাদেশে থাকা নেতাকর্মীদের সার্বিক নির্দেশনা দিয়ে আসছে। এজন্য মোটা অঙ্কের বাজেটও রাখা হয়েছে নিষিদ্ধ দল থেকে। তাদের উদ্দ্যেশ্য ভারতে পালিয়ে অবস্থান নেয়া শেখ হাসিনাকে ফেরাতে তারা ঢাকায় লাখ লাখ লোকের সমাগম সৃষ্টির পর ভয়ঙ্কর নাশকতার মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনবে শেখ হাসিনাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রথমে আগস্টের ৮ তারিখে মহাপরিকল্পনা ছিল নাশকতার। এরই অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য রাজধানীর কয়েকটি বিলাসবহুল এলাকা বেছে নেয়। ওই এলাকাগুলোতে প্রশিক্ষণ নিয়ে শতাধিক নেতাকর্মী প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু গোয়েন্দাদের কাছে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

একাধিক সূত্র জানায়, আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরকে সামনে রেখে তারা ফের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। তাদের টার্গেট রাজধানীর উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর ও যাত্রাবাড়ীতে লাখ লাখ নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান নিবে। আরেকটি গ্রুপ ছদ্মবেশে রাজধানীর শাহবাগে বড় পরিসরে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটাবে। আপাতত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় আগস্টের হামলার পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে গেছে।

এ দিকে মেজর সাদেককে সেনা হেফাজতে নেয়ার পর তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তার সাথে আর কোনো সেনা কর্মকর্তা জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি গোপন বৈঠকে ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে আদালত গঠন করা হয়েছে।

সম্প্রতি একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাসংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগটি পাওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। এর প্রেক্ষিতে, গত ১৭ জুলাই ওই সেনা কর্মকর্তাকে তার নিজ বাসস্থান রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়।

ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে ইতঃমধ্যে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পূর্ণ তদন্ত সমাপ্তি সাপেক্ষে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও, তার কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা সংক্রান্ত ব্যত্যয়ের বিষয়ে অপর আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে।

এ দিকে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ বৈঠকের রহস্য উদঘাটনে এবং জড়িতদের শনাক্তে ‘গুরুত্ব দিয়ে’ তদন্ত চলছে। একই সাথে আগস্ট কেন্দ্রিক কোনো ধরণের নিরাপত্তা শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, ‘গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা এলাকায় কে বি কনভেনশন হলে একটা বৈঠক নিয়ে আমাদের (পুলিশ) কাছে তথ্য ছিল। ওই কনভেনশন হলটি শামীমা নাসরিন শম্পা নামে একজন ব্যক্তি ভাড়া নেন। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে একটা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছিলেন তিনি। সেখানে ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ লোকজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে গত ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় একটি মামলা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতঃমধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনার অন্য কোনো দিক আছে কি না, বা প্রকৃত রহস্য কী এবং কারা দায়ী? সে বিষয়গুলো শিগগিরই উন্মোচন করা হবে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, প্রশিক্ষণ নেয়া গেরিলা বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্য দেশের মধ্যে বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং হাইকমান্ডের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর ঢাকা দখলে নেয়া। এজন্য মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ইতঃমধ্যে কোর গ্রুপের একটি বড় অংশ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এ চক্রের কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর এমন অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে।

ওই সূত্র জানায়, অবাক হওয়ার বিষয় হলো যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের একটি অংশ অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। যারা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ নিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীও। প্রশিক্ষণ হয়েছে দিল্লি, কলকাতা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা এবং গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

চূড়ান্ত সফলতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এরই অংশ হিসেবে ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ওই প্রশিক্ষণ চলাকালে কনভেনশন সেন্টারে দেয়া হয় সরকারবিরোধী নানা স্লোগান।

সূত্র জানায়, কনভেনশন হলে প্রশিক্ষণের তথ্য পেয়ে ১৩ জুলাই রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইউনিট। ওই অভিযানে গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। এরা হলেন-সোহেল রানা (৪৮) ও শামীমা নাসরিন শম্পা (৪৬)। সোহেল রানার বাবার নাম আব্দুস সোবহান গোলন্দাজ। বাড়ি বরগুনার তালতলী থানার মৌপাড়া গ্রামে। রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে তার বাসা। গ্রেফতারকৃত শম্পার স্বামী আহাদুজ্জামান একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বড়াশুর গ্রামে। বাবার বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার বাজরা গ্রামে।

এ প্রসঙ্গে জানতে গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) কামরুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, দুজনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা যে তথ্য দিয়েছে ‘এটি একটি অনেক বড় কর্মযজ্ঞ। আপাতত তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে আরো গভীরভাবে কাজ করছি। একটু গুছিয়ে নিই। পরে বিস্তারিত সব বলব।’ তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ ঘটনায় শুধু ডিবি নয়, আরো কয়েকটি সংস্থাও কাজ করছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *