Google Alert – সামরিক
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমানো সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে মূল আলোচনা জুলাই মাসের শেষে সম্পন্ন হয়েছে। এখন হোয়াইট হাউজের সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে দ্রুতই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে দুই দেশ। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসের মধ্যেই এই চুক্তি সই সম্পন্ন করতে পারবে ঢাকা ও ওয়াশিংটন।
এ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রুলস অব অরিজিনের হার নির্ধারণ করা নিয়ে মধ্যস্থতা হচ্ছে এবং এটি দ্রুতই হয়ে যাবে। এরপর হোয়াইট হাউজ থেকে সম্মতি পাওয়া গেলে দুই পক্ষ চুক্তি সই করবে। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই এটি হবে।
বাংলাদেশের ওপরে গত ৭ আগস্ট থেকে বাড়তি ১৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এবং চুক্তি সই হওয়ার পর অন্য শর্তগুলো কার্যকর হবে বলে তিনি জানান।
অন্য শর্তগুলোর মধ্যে কী আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাড়তি শুল্ক আরোপ ছাড়াও অশুল্ক বাধা, মেধাস্বত্ব, শ্রম-অধিকার, জাতীয় নিরাপত্তা, রুলস অব অরিজিন, সরকারি প্রকিউরমেন্টসহ আরও বিষয় এখানে উল্লেখ আছে।’
জাতীয় নিরাপত্তা
শুল্ক নিয়ে আলোচনার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল—চীন থেকে সামরিক ও বেসামরিক পণ্য আমদানি কমাতে হবে। এই শর্তে বাংলাদেশ রাজি হয়নি। তবে চুক্তিতে নাম উল্লেখ না করে বলা হয়েছে—কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশ আমদানি কমাবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়টিও মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ।
এ ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক একজন কূটনীতিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের নাম উল্লেখ না থাকলেও কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি কমানোর বিষয়টি উল্লেখ থাকলে তাতেই বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশের কথা বলছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ‘চায়না কনটেইনমেন্ট’ নীতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘গোটা বিষয়টি চীনকে এখন ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে—বাংলাদেশ কোন পরিস্থিতিতে এ ধরনের শর্ত মেনে নিয়েছে।’
মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই দেশের পণ্যের মান ভালো, তবে দাম বেশি এবং শর্তযুক্ত। বাংলাদেশের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে—যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী ধরনের সামরিক পণ্য কেনা হবে।’
রুলস অব অরিজিন
চুক্তিতে মার্কিন তুলা ব্যবহার করে তৈরি পোশাক পণ্য বানানো হলে শুল্কছাড় পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘এটি একটি ভালো দিক। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের তুলা ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করার পর শুল্কছাড় পাওয়া গেলে বাংলাদেশে অধিক রফতানির প্রণোদনা বাড়বে।’
সরকারি প্রকিউরমেন্ট
বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা সংগ্রহ করে থাকে। এগুলো সাধারণভাবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিদেশি হলে, সেক্ষেত্রে বিশেষ কিছু লাইসেন্সিংয়ের প্রয়োজন হয়। চুক্তিতে সেটি শিথিল করার বিষয় উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরেকজন সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘সবার জন্য সমান সুযোগ থাকলে সরকারি সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুবিধা হয় এবং বিশেষ কোনও কোম্পানি বা দেশের অভিযোগ করার সুযোগ কম থাকে।’
বাংলাদেশে সরকারি সংগ্রহে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের কোম্পানির প্রাধান্য দেখা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমান সুযোগের অভাবের কারণে অনেক সময়ে মার্কিন কোম্পানিগুলো কাজ পায় না বা দেওয়া হয় না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এই বিষয়টির সমাধান চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) মার্কিন প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস থেকে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার বা জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে তারা এই কাজটি পেয়েছে।