হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির উষ্ণ অভ্যর্থনা, তবে রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন

Google Alert – সেনা

রুশ যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতা ও ন্যাটো অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। হোয়াইট হাউজে এবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। তবে প্রশ্ন ও উদ্বেগ রয়েছে-যে কারণে বৈঠক হয়েছে তার বাস্তবায়ন নিয়ে। 

সদয় মনোভাব, সামান্য কার্যকারিতা

সাত ইউরোপীয় নেতা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট, তাদের মোটরগাড়ি, ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েক ডজন কর্মী এবং শতাধিক সাংবাদিক সোমবার হোয়াইট হাউজে ক্যাম্পাসে ভিড় জমিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ছিল—ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি কি শান্তির পথে একমত হবেন? নাকি তাদের সাম্প্রতিক বৈঠকও ফেব্রুয়ারির মতো তিক্ত ঝগড়ায় পরিণত হবে?

দুটোর একটাও ঘটেনি। ফেব্রুয়ারির আচরণের জন্য সমালোচিত জেলেনস্কি এবার তা ঠিক করেছেন। তিনি আরও স্যুট পরেছেন এবং বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ফলস্বরূপ পেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উষ্ণ অভ্যর্থনা।

তবে সহায়তার অঙ্গীকার সত্ত্বেও, কোন পক্ষই এখনও ভূমি বিনিময়, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান পরিবর্তন করেনি।

শেষে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বৈঠক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রশংসার বন্যা

ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের অভিযোগ ছিল- জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা দেখাননি। সোমবার ওভাল অফিসের উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আটবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। 

ট্রাম্পের যুদ্ধ থামানোর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাই শুধু নয়, তার মনোযোগের জন্যও বারবার তার প্রশংসা করেছেন জেলেনস্কি। ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফার্স্ট লেডি মেলেনিয়া ট্রাম্পকে। তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইউক্রেনের সমর্থক সব ইউরোপীয় নেতাদেরকেও।

তবে এবার ভাইস প্রেসিডেন্ট বেশিরভাগ সময় চুপচাপ ছিলেন।

আনুষ্ঠানিক পোশাক

ফেব্রুয়ারিতে জেলেনস্কি স্যুট না পরায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। তবে এবার তিনি পরীক্ষায় পাশ করেছেন।

কারণ সমালোচনা এড়াতে এবার জেলেনস্কি হোয়াইট হাউজে এসেছিলেন স্যুট পরে। যদিও এক ইউরোপীয় কূটনীতিক তার পোশাককে ‘প্রায় স্যুট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার কালো জ্যাকেটে ছোট ল্যাপেল এবং জেটেড চেস্ট পকেট ছিল। তিনি টাই পরেননি। এই পোশাককে বলা যায় যুদ্ধক্ষেত্র এবং বোর্ডরুমের সংমিশ্রণ।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে মতবিরোধ

হোয়াইট হাউজে উপস্থিত ইউরোপীয় নেতারা এবং জেলেনস্কি নিজে এবার নীতি-বিরোধগুলো আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। মন্তব্যগুলো অস্পষ্ট রেখে, প্রেসিডেন্টকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তারা।

কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট হয়। জার্মান চ্যান্সেলর জানান, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করবে।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিরতি চান। কিন্তু তিনি সম্প্রতি এই লক্ষ্যকে প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন, যা ইউক্রেনের জন্য কূটনৈতিকভাবে পরাজয় হিসেবে ধরা হয়। ট্রাম্প এখন সরাসরি শান্তি চুক্তির দিকে এগোনোর পক্ষপাতী।

স্থল সেনা থাকবে?

শীর্ষ বৈঠকের বড় রহস্য ছিল, ইউক্রেন-রাশিয়া চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ করতে যুক্তরাষ্ট্র কতটা সমর্থন দেবে।

ইউক্রেনের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্থলসেনা প্রেরণের অঙ্গীকার হয়নি। পরিবর্তে অস্ত্র বিক্রয় এবং মার্কিন ব্যবসায়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যা ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার তুলনায় কম বিশ্বাসযোগ্য। ইউরোপীয় নেতারা তাদের সেনাবাহিনী দ্বারা সমর্থিত শান্তিরক্ষী মিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তবে যখন স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করা হয় যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় ইউক্রেনে সেনা থাকবে কিনা, তা বাতিল করা হয়নি। বরং ঘোষণা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, আমরা আপনাদের পরে জানাবো।

হোয়াইট হাউজের শীর্ষ বৈঠক। ছবি: রয়টার্স।

পরবর্তী ধাপ

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পুতিনকে ফোন করবেন এবং ইউক্রেনের সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজন করবেন। কিছু ব্যক্তিগত দ্বিধা থাকা সত্ত্বেও, উপস্থিত নেতারা সম্মত হয়েছেন- এটি যুক্তিসংগত পরবর্তী ধাপ। তবুও এগোনোর পথ যতটা সহজ বলা হচ্ছে, তার চেয়ে জটিল।

রাশিয়া অতীতে উচ্চস্তরের ইউক্রেনীয় বৈঠকে বিলম্ব ও বাধা দিয়েছে। এটাও স্পষ্ট নয় যে পুতিন আসলে জেলেনস্কির সঙ্গে বসবেন কিনা। কারণ জেলেনস্কিকে প্রায়শই অবৈধ নেতা বলে উল্লেখ করেন পুতিন।

প্রধান স্তরের বৈঠক সত্যিই কতটা শান্তি আনতে পারে তা অজানা। কারণ রাশিয়া এবং ইউক্রেনের অবস্থানের মধ্যে এখনও বিশাল ফারাক। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ন্যাটো সেনা উপস্থিতি কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়, যা ইউক্রেন মেনে নেবে না। রাশিয়া দাবি করছে ইউক্রেনকে তার নিয়ন্ত্রিত বড় অংশ হস্তান্তর করতে হবে, যা ইউক্রেনের নেতারা মানতে রাজি নয়।

সূত্র: রয়টার্স

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *