Google Alert – ইউনূস

॥ মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান ॥

গত ৮ আগস্ট ২০২৫ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের এক বছর কেটে গেল। এর মধ্যে প্রফেসর ইউনূস অনেক ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে অনেক নতুন নতুন ইতিহাসের জন্ম হয়েছে। অনেক আশা-ভরসা নিয়ে দেশবাসী আকুণ্ঠভাবে ইউনূসকে দেশের দায়িত্বভার দেয়। কিন্তু প্রফেসর ইউনূস যে চেয়ারে বসে আছেন সেটি রাজনৈতিক চেয়ার। এ চেয়ারে রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়া বসা কত বড় ভুল তা প্রফেসর ইউনূস হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন এবং জাতি যদি ভবিষ্যতে এ ধরণের সমস্যায় পড়ে তবে কোন ভদ্রলোক এ দায়িত্ব গ্রহনে রাজি হবে না। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে চরম একটা নৈরাজ্য চলছে। এতো কিছুর পরও ইউনূস সরকার দেশের জন্য কিছু একটা করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইউনূস সরকার রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য বেশ কয়েকটা সংস্কার কমিটি ও ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ একটি ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করেন। সংস্কার কমিটিগুলোর অনেকগুলোই তাদের কাজ এগিয়ে নিয়েছে। বাকি গুলোর কাজ চলছিল এখন তা থমকে গেছে। এদেশে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠন অন্যতম একটি ঐতিহাসিক সূচনা। এ কমিশন দেশ প্রেমিক সকল রাজনৈতিক দলকে একটি ছাতার নীচে আনতে সক্ষম হয়েছে। যেটা বিরল ঘটনা। অতীতে জামায়াত বামপন্থীদের এক মঞ্চে কেউ আনতে পারেনি। কিন্তু এ সরকার তা পেরেছে। এটাকে যদি আমরা সংসদ ধরি তবে এ সংসদে ৩০টির বেশী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব বর্তমান। প্রফেসর ড. ইউনূসকে যদি ঐ সংসদের স্পিকার ধরি এবং প্রফেসর ড. আলী রিয়াজ ঐ সংসদের ডেপুটি স্পিকার। ৩০টি দলের সমন্বয়ে গঠিত সংসদ পরিচালনা করা যে কত কঠিন কাজ তা প্রফেসর ইউনূস ও আলী রিয়াজ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। এতো দল দ্বারা গঠিত সংসদের নজির পৃথিবীতে নেই। এ দলগুলো যত বড় হোক, আর ছোট হোক ভয়েজ সকলের সমান ছিল। ঐ সংসদ ছিল প্রাণবন্ত। মতের দ্বিমত বহুমত ছিল কিন্তু উত্তাপ ছিল না। ছিল হৃদয়তা। পরম বন্ধুত্বপূর্ণ। ডাম-বাম-ইসলাম-পুজিঁবাদ সব এক কাতারে শামিল। খাওয়া দাওয়া হাসি ঠাট্টা সবই হয়েছে। কিন্তু ফল হাতের মুঠোয় আসেনি। পৃথিবীর অন্য দেশের সংসদের অবস্থা হলো-যে দলের সংসদ-সদস্য বেশী তাদের কণ্ঠের জোরও বেশী কিন্তু এখানে তার ব্যতিক্রম। সবাই প্রাণ খুলে কথা বলেছে। একেবারেই ছোট বড় ভেদাভেদ হীন।

পৃথিবীর সব আদালত, সংসদ ও শালিস বিচারের ক্ষেত্রে একটা রীতি আছে রায়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশের মত অনুসারে রায় ঘোষণা হয়। বাংলাদেশের সংসদে কোন বিল ভোটের জন্য উপস্থাপন করলে স্পিকার যখন তা ভোটে দেয় তখন তিনি প্রশ্ন করেন এ প্রস্তাবটির পক্ষে যারা আছেন তারা হ্যাঁ বলুন, যারা বিপক্ষে আছেন তারা না বলুন। পক্ষে ভোট বেশী হলে স্পিকার বলেন- হ্যাঁ জয় যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয় যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয় যুক্ত হয়েছে। অতএব বিলটি পাশ হলো। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে হলেও বিএনপিসহ দু’চারটি দল কোনো কোনো ইস্যুতে নোট অব ডিসেন্ট দেয় এবং নোট অব ডিসেন্ট মানে এমন নয় যে কম সংখ্যক ভোটার নোট অব ডিসেন্ট দিলে তা পাশ হবে না। বরং সংসদে নোট অব ডিসেন্ট দিলেও অধিকাংশের মতামতই সংসদে গৃহীত হয় এবং সকলকে তা মেনে নিতে হয়। এটাই সারা দুনিয়ার রীতি। বিএনপিসহ দু’একটা দলের মনোভাব হলো তারা ক্ষমতায় গেলে ঐ নোট অব ডিসেন্ট দেয়া ইস্যুগুলো তারা বাস্তবায়ন করবে না। যেহেতু তাদের নোট অব ডিসেন্ট দেয়া সত্ত্বেও বিষয়গুলো পাশ হয়েছে তাই বিচারের চিরাচরিত রীতি অনুসারে বিষয়গুলো অনুমোদিত বলে গণ্য ও তা বাস্তবায়নে পরবর্তী সংসদকে কার্যকর করা উচিৎ। কিন্তু বিএনপি তাতে নারাজ। তারা শালিস মানে কিন্তু তাল গাছটা তাদের। বিচার শালিসের ক্ষেত্রে চিরাচরিত যে রীতি আজ উপেক্ষিত হয়ে বিচারের নতুন ইতিহাস রচনার ফলে গণেশ উল্টে যাচ্ছে?

রাজনীতিকদের ভুলের কারণে ১/১১ হয়েছে, বার বার সামরিক আইন এসেছে। দু’জন রাষ্ট্রপতি নিহত হয়েছে, নেতাদের হাড় ভেঙ্গেছে, নেত্রীরা ভূয়া মামলায় কারাদন্ড ভোগ করেছে। আমলারা মাথায় উঠেছে, প্রধান বিচারপতিকে গদিচ্যুত করা হয়েছে, অন্য প্রধান বিচারপতিসহ বাঘা বাঘা বিচারপতিরা ভেগেছে, বায়তুল মোকাররমের খতিব পালিয়েছে। আয়না ঘর সৃষ্টি হয়েছে, ব্যাংকের টাকা লুট করে দেশ ডেডলক করেছে, লায়লাতুল ইলেকশন ও আমি ডামির ভোট হয়েছে এবং অবশেষে দূর্দান্ত প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়েছে। আর নীচে না নামার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ভেবে পদক্ষেপ দেয়ার আহবান একটা সবিনয় নিবেদন। অনেক জীবন গিয়েছে, অনেক রক্ত ঝরেছে। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় এটা যেন শুধু স্লোগানে নয় বাস্তবে প্রতিফলন ঘটানোর এখনই সময়। দেশ গড়ার সুযোগ বার বার আসে না। একাত্তরে এসেছিল, নব্বইতে এসেছিল এখন আখেরী সুযোগ। অনেক রাজনীতিবিদ বৃদ্ধ হয়ে গেছে এ সুযোগ তাদের জীবনে আরো কখনও আসার সম্ভাবনা নেই। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দেই। ভাল হয়ে যাই। নইলে মাশুল দিয়েও পার পাওয়া যাবে না। লেখক : প্রাবন্ধিক।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *