৫৩ বছরেও বাংলাদেশ সকল মানুষের রাষ্ট্র হতে পারেনি – হিল ভয়েস

হিল ভয়েস

হিল ভয়েস, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ঢাকা: আজ ১৪ ডিসেম্বর, শনিবার, ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২৪ উপলক্ষে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় থিতু হতে হবে বাংলাদেশকে। গত ৫৩ বছরেও বাংলাদেশ সকল মানুষের রাষ্ট্র হতে পারেনি। তাই বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূলে রয়েছে অসাম্প্রদায়িকতা, সকল নাগরিকের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।’

আজ সকাল ১০:৩০ টায় ‘ধর্মীয় ও জাতিগত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। শুরুতে ঐক্য মোর্চার পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনা করেন ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সভাপতিম-লীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার।

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র হবে। কিন্তু আজ অবধি তা অধরাই রয়ে গেছে। রাষ্ট্রধর্ম বাংলাদেশের সবচেয়ে সর্বনাশ করেছে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম সাংঘর্ষিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, আমাদের একটি ইউনিভার্সেল আইডেনটিটি প্রয়োজন যা ধর্মের ভিত্তিতে হবে না। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ রোগের লক্ষণ, মূল হলো সাম্প্রদায়িকতা। তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পর সবচেয়ে বেশী বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতি একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র চেয়েছিল বলেই বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্যতম মূলনীতি হিসেবে এসেছিল। আজ ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কেন কমছে তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্য থাকলে কেন মন্দির, মসজিদ, গীর্জা ও প্যাগোডা পাহারা দিতে হবে? তিনি জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এটা আজকের বিশ্বের বিশ্বজনীন বাস্তবতা বলে মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, গত ৫৩ বছরে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হয়েছে নানাভাবে। ২০২৪’র গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায্যতা ও বলার স্বাধীনতা। আজকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কেন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হল তা বিবেচনায় নিয়ে সরকার, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজকে তাদের কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার দোহাই দিয়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা জায়েজ করা যাবে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের নামে মামলা দেয়ার পেছনে কাজ করছে তাদেরকে ভয়ের ভিতরে রাখা। তিনি সংখ্যালঘু জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান।

দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের মাটি থেকে সাম্প্রদায়িকতা উচ্ছেদ করা যায়নি। যখনই কোন সরকার পরিবর্তন হয়েছে তখনই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচারে নির্যাতন নিপীড়ন নেমে আসে। তিনি আরও বলেন, যেদিন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কবর হবে সেদিনই সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু শব্দগুলো থাকবে না। আজকে অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনকে সর্বজনীন আন্দোলনে নিয়ে যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা।

মানবাধিকার কর্মী জনাব শামসুল হুদা বলেন, সংখ্যালঘুদের হামলার পেছনে বৈষয়িক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত না হলে সে রাষ্ট্র সভ্য রাষ্ট্র হতে পারে না।

ফাদার অ্যালবার্ট টি রোজারিও বলেন, সংখ্যালঘুরা ট্রাম্পকার্ড হিসেবে সব সরকারের আমলেই ব্যবহৃত হয়েছে, এখনও হচ্ছে।

থিওফিল নকরেক বলেন, সংবিধানে জাতিগোষ্ঠীর যথাযথ স্বীকৃতি নেই। আদিবাসীরা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চায়। ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-র ১০৭, ১৬৯ কার্যকর করতে হবে।
এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী বলেন, আজ সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে। রাজপথের আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সাইফুর রহমান তপন, সাংবদিক বাসুদেব ধর, জয়ন্ত কুমার দেব, সুনন্দপ্রিয় ভিক্ষু, অধ্যাপক চন্দন সরকার, ডা. এস কে রায়, অতুল চন্দ্র ম-ল, মনিরুজ্জামান ও রাজ কুমার দাস প্রমুখ।

বক্তারা আরো বলেন, সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে সকল সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্তসহ যে সকল সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়। সংখ্যালঘু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীসহ যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়।

আলোচনা থেকে পাওয়া সুপারিশসমূহ নিয়ে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার পক্ষ থেকে একটি অবস্থানপত্র তৈরী করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল কমিশনকে দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *