৯/১১ নিয়ে নতুন ঝড়, উসকে দিলেন টাকার কার্লসন

চ্যানেল আই অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ২৪ বছর পার হলেও ঘটনাটিকে ঘিরে এখনও নতুন করে বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠছে। ব্যাপক আলোচিত এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশটির জনপ্রিয় রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন প্রচলিত সরকারি ভাষ্যকে ‘সম্পূর্ণ প্রহসন’ ও ‘জালিয়াতি’ বলে অভিহিত করেছেন। সম্প্রতি ‘ব্রেকিং পয়েন্টস’ নামক একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, ৯/১১ হামলার ব্যাপারে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কাছে আগাম পূর্বাভাস ছিল এবং মার্কিন প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে এই সত্য বিলীন করে দেয়।

কার্লসন দাবি করেন, ৯/১১-এর আগে মার্কিন ভূখণ্ডে অস্বাভাবিক আর্থিক কার্যকলাপ দেখা গিয়েছিল। হামলার কয়েক দিন আগে হামলায় ব্যবহৃত উড়োজাহাজ সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দরপতনের সম্ভাবনার ওপর বিপুল অঙ্কের বাজি ধরা হয়। তার ভাষায়, “এটি কেবল কাকতালীয় নয়, তারা নির্দিষ্টভাবে জানতো কোন কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধসে পড়বে।” তদন্ত কমিশন প্রকৃত দায়ী বাজিকরদের চিহ্নিত করলেও জনগণের কাছে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

কার্লসন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের তৃতীয় ভবন, অর্থাৎ ‘ভবন ৭’-এর পতন নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তোলেন। কোনো উড়োজাহাজের আঘাত ছাড়াই ভবনটির হঠাৎ ধসে পড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুললেও তাদেরকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদ’ আখ্যা দিয়ে চাপা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে কার্লসন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং বিদেশি সংস্থা ইসরায়েলের মোসাদের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই সংস্থাগুলো হামলাকারীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করলেও সচেতনভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তার প্রশ্ন—এটি নিছক অবহেলা ছিল, নাকি পরিকল্পিত নীরবতা, যার পেছনে অন্য কোনো স্বার্থ জড়িয়ে আছে।

কার্লসনের মতে, ৯/১১ ছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য যুদ্ধ পরিচালনার এক মোক্ষম অজুহাত। এই হামলার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র না থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণে এগিয়ে যায়। তার দাবি, “ইরাক যুদ্ধ ছিল একটি আদর্শগত সিদ্ধান্ত, যা আসলে অন্য একটি দেশের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় নেওয়া হয়েছিল।”

৯/১১-পরবর্তী সময় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক সামরিক অভিযানে জড়িয়ে পড়ে। শুধু আফগানিস্তান ও ইরাকে নয়, পরবর্তীতে পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ একাধিক দেশে ড্রোন হামলা ও সামরিক কার্যকলাপ চালানো হয়। দুই দশকের এসব যুদ্ধে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ নিহত বা বিকলাঙ্গ হয়েছেন। ঘরবাড়ি হারানো কোটি মানুষের জীবন ছিন্নভিন্ন হয়েছে। শুধু বিদেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্রেরও কয়েক হাজার সেনা নিহত হয় এবং অসংখ্য সেনা শারীরিক ও মানসিক আঘাত নিয়ে দেশে ফিরেছেন। যুদ্ধ ব্যয়ের অঙ্ক দাঁড়ায় কয়েক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্য সম্পদের ক্ষতিতে।

কার্লসনের মতে, এই যুদ্ধগুলো মানবতার জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। “মধ্যপ্রাচ্যে এত রক্তপাত, ধ্বংস আর অনাথ শিশুরা আজও আমেরিকার সেই সিদ্ধান্তের বোঝা বইছে,” তিনি বলেন।

সাক্ষাৎকারে কার্লসন গণমাধ্যমের ভূমিকাকেও কঠোরভাবে সমালোচনা করেন। তার মতে, গণমাধ্যম স্বাধীন সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন না করে বরং সরকারি প্রচারণার যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। নিজের ভূমিকা নিয়েও তিনি অকপটে স্বীকার করেন, “আমি তখনও প্রচারণার ফাঁদে আটকা পড়েছিলাম। মানুষের ভয়কে ব্যবহার করে যে মিথ্যাচার চালানো হয়েছিল, সাংবাদিক হিসেবে আমি সেখান থেকে মুক্ত থাকতে পারিনি।”

সবশেষে কার্লসন জোর দিয়ে বলেন, ৯/১১ নিয়ে এখন জরুরি প্রয়োজন খোলামেলা ও সৎ আলোচনার। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা যদি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা না নিই, তবে আবারও একই ধরনের প্রহসন ও ট্র্যাজেডির শিকার হব। সত্যকে এড়িয়ে গেলে ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে।”

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *