টেলিটক এখন ‘গলার কাঁটা’

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

বললেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, বিগত সরকার টেলিটককে চূড়ান্ত পর্যায়ে অকার্যকর রেখে গেছে।

তিনি আরও বলেন, এটা এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রধান মোবাইল কোম্পানিগুলোর তুলনায় টেলিটকের বেজ স্টেশন বা মোবাইল টাওয়ার সংখ্যা টুজিতে প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ, ফোরজিতে ১০ ভাগের একভাগ মাত্র। এরকম নগণ্য টাওয়ার দিয়ে মানসম্পন্ন ভয়েস ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান প্রায় অসম্ভব। গ্রামীণ এলাকায় টেলিটকের বিনিয়োগ না থাকায় তরঙ্গও নষ্ট হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ভেরিফায়েড ফেসবুকে টেলিটক সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে এসব মন্তব্য করে তিনি।

ফয়েজ আহমদ বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র মোবাইল অপারেটর হিসেবে টেলিটক দেশজুড়ে প্রতিযোগী অপারেটরদের তুলনায় কম স্পেকট্রাম বরাদ্দ পেয়ে নেটওয়ার্ক সেবা দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে তার চাহিদা অনুযায়ী স্পেকট্রাম চেয়েছে। তবে দেশের সার্বিক গ্রাহক সংখ্যা ও নেটওয়ার্ক পরিকাঠামোর পরিসর বিবেচনায় প্রতিটি স্পেকট্রাম ব্যান্ডেই টেলিটক অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দ পায়নি। বরং কম ও নগণ্য স্পেকট্রাম বরাদ্দ পেয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সরকারি বলেন, শুরুর দিকে টেলিটক সিমের প্রতি নাগরিকদের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এক-দেড় দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক অর্জন করতে পারেনি। এজন্য টেলিটকের দুর্বল ম্যানেজমেন্টকেও দায়ী করেন। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখছি, মানসম্পন্ন ফোরজি সেবা দেওয়ার জন্য টেলিটকের লো-ব্যান্ড তরঙ্গ একেবারেই নেই, মিড-ব্যান্ডে সামান্য রয়েছে, অন্যদিকে আপার মিড-ব্যান্ডে প্রাপ্ত তরঙ্গ ব্যবহারের জন্য কোনো বিনিয়োগ ছিল না।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জি-টু-জি চুক্তিতে কিছু ফান্ড এনেছিল, তবে সেটা দুর্নীতির মাধ্যমে অপব্যয় ও লুটপাট করেছে, কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবমিলে বিগত সরকারের আমলে দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান বিটিএস সাইট সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় বরাদ্দকৃত স্পেকট্রামের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

তবে সুন্দরবন, হাওর ও পার্বত্য অঞ্চলের মত দুর্গম এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক কভারেজ তুলনামূলকভাবে ভালো থাকায় এবং গ্রাহকসেবার চাহিদা পূরণে বরাদ্দকৃত তরঙ্গের ভালো ব্যবহার হচ্ছে। যদিও ওইসব এলাকায় তরঙ্গের স্বল্পতা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।

টেলিটকের স্পেকট্রাম বরাদ্দের বিপরীতে বিটিআরসির বকেয়া অর্থ ইক্যুইটি খাতে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিগত সময়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইক্যুইটিতে রূপান্তরের একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিষয়টি নিরসন হলে বকেয়া অর্থ সরকারের এক খাত থেকে অন্য খাতে স্থানান্তর করা যাবে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে টেলিটকের স্পেকট্রাম সংক্রান্ত বকেয়া দায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। তবে এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের ন্যায় নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের অনুকূলে তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে; সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এরূপ জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, টেলিটক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি হওয়ায় তরঙ্গ ক্রয়ের মূলধন কার্যত সরকারের বরাদ্দকৃত ফান্ডের ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংস্থা সমূহের মধ্যে বকেয়া এবং পাওনার দীর্ঘদিনের ইস্যু রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে এবং একই মন্ত্রণালয়ের দপ্তর-সংস্থাগুলোর নিজেদের মধ্যে বকেয়া ও লেনদেনের বিষয় বিদ্যমান।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাওনার এসব বিষয় একটি স্বাভাবিক চিত্র। তাই এটাকে ইস্যু করে কৌশলগত খাতের সেবাদানকারী হিসেবে টেলিটকের তরঙ্গ প্রাপ্তি বন্ধ বা এ জাতীয় চিন্তাকে মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দেয় না। বরং দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলে কভারেজ ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণের গুরুদায়িত্ব পালন (যেখানে বাণিজ্যিক প্লেয়াররা যেতে চায় না), বাজার প্রতিযোগিতা ও সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) ঠিক রাখা, গ্রাহক অনুকূলে মোবাইল কল ও ইন্টারনেট মূল্যমান সুরক্ষা এবং তরঙ্গ বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতামূলক রাখার জন্য ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি মালিকানাধীন কৌশলগত টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম স্পেকট্রাম বরাদ্দের চর্চা করে। দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলে ভয়েস, ডেটা এবং ডিজিটাল সেবার কভারেজ ও ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণ (যেখানে বাণিজ্যিক প্লেয়াররা যেতে চায় না বা তাদের বিনিয়োগ আনুপাতিক হারে কম); বাজার প্রতিযোগিতা সমুন্নত রাখা; সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) ব্যালান্স ঠিক রাখা; গ্রাহক অনুকূলে মোবাইল কল ও ইন্টারনেট মূল্যমান সুরক্ষা এবং তরঙ্গ বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতামূলক রাখা। এই চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে সরকারি মালিকানাধীন সেলুলার মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে তরঙ্গ বরাদ্দ সংক্রান্ত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পলিসি নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের এবং বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মতামত, বিশেষ করে নাগরিক প্রত্যাশাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *