‘বঙ্গবন্ধু ও ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে এক পাল্লায় মাপার’ বিরোধিতায় বাংলাদেশ জাসদ

Google Alert – বাংলাদেশ

স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ‘ফ্যাসিস্ট’ হাসিনাকে ‘এক পাল্লায় মাপা হলে’ ফ্যাসিবাদ আড়ালে যাওয়ার সুযোগ পাবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ জাসদ।

শুক্রবার বঙ্গবন্ধুর ৫০তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন দলের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধান।

বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পুষ্পার্ঘ অর্পণের পর ছিল ওই আলোচনা অনুষ্ঠান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাজমুল হক প্রধান বলেন, “শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি—এটি একটি অমোঘ ঐতিহাসিক সত্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, দেশে ফেরার আগেই তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছিলেন।

“স্বাধীনতার পর তার শাসন নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা থাকলেও, তার ভুলত্রুটির খেসারত তিনি ও তার পরিবারকে নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়েই দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বিচার করতে হবে তার সমগ্র জীবন ও সংগ্রামের আলোকে। বাংলাদেশ থাকলে বঙ্গবন্ধু থাকবেন, ‘জয় বাংলা’ থাকবে। বঙ্গবন্ধু ও ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে এক পাল্লায় মাপা হলে ফ্যাসিবাদ আড়ালে যাবার সুযোগ পাবে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যার দিনটি এবার এসেছে ভিন্ন আবহে। তার বড় মেয়ে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরশাসন আর শত শত আন্দোলনকারীকে হত্যার দায় মাথায় নিয়ে পালিয়ে আছেন ভারতে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার চলছে।

চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে দমন-পীড়নে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এখন নিষিদ্ধ। শেখ হাসিনার মতই অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা রয়েছেন দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে। একটি অংশ গ্রেপ্তার হয়ে আছেন কারাগারে। কর্মীরা সব ছন্নছাড়া।

এর মধ্যেই বঙ্গবন্ধু হত্যার ৫০তম বার্ষিকী পালনে ফেইসবুকে কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ এবং তাদের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিদেশে বসে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান রেখেছিলেন, তারা যেন শুক্রবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে ছিল নিরপত্তার কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষজনকে দিনভর হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সন্দেহে জনে জনে তল্লাশিও করেছেন বিএনপির কর্মীরা।

শেখ হাসিনার পতনের ছয় মাস পূর্তির দিনে ‘মুজিববাদের কবর রচনার’ ঘোষণা দিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভেকু দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৫ অগাস্ট ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ যেন সেখানে কোনো ধরনের ‘বিশৃঙ্খলা’ করতে না পারে, সেজন্য ৩২ নম্বরে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

১৫ অগাস্ট পালনে সরকারি এমন বাধার মধ্যে তোপখানা রোডে বাংলাদেশ জাসদের অস্থায়ী কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নেতাকর্মীরা, যে দলটি ছিল মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর শাসনের সবচেয়ে বড় বিরোধী শক্তি।

বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. মুশতাক হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য করিম সিকদার, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু এবং রোকনুজ্জামান রোকন বক্তব্য দেন। সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমেদ মনজু।

আলোচনা অনুষ্ঠানে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও ভূমিকা খাটো করতে চায়, ইতিহাস বিকৃত করতে চায়, তারাই মূলত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার ক্ষেত্র তৈরি করছে—তারাই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

“বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে আজ সেই বাড়ির শূন্য জায়গা পাহারা দিতে হচ্ছে। ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।”

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতীক। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, কারাবরণ, গণতন্ত্র ও মুক্তির জন্য আপসহীন ভূমিকা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। গণতন্ত্র, সমতা ও ন্যায় বিচারের দেশ গড়তে ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতির পুনরুত্থান রুখতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদের শ্রদ্ধা নিবেদন

বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার ৫০তম বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু)।

জাসদের এ অংশের নেতা হাসানুল হক ইনু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ আখ্যা দিয়ে জাসদকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন দল।

শুক্রবার বিকালে ঢাকার গুলিস্তানে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ ও তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে দলটি।

জাসদর দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নেতাদের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, “১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বাঙালি জাতির অবিসম্বাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধু বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে শোকাবহ ঘটনাই নয়, এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়।

“বঙ্গবন্ধু—বাংলাদেশ— বাঙালি এক, অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য সত্তা। বঙ্গবন্ধু কোনো দল বা গোষ্ঠী বা পরিবারের সম্পত্তি না, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা।”


সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘর শুধু বঙ্গবন্ধুর বাড়ি নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং সেই ইতিহাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়ে, ১৫ অগাস্ট শোক দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাঙালির হৃদয়ের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসন থেকে বঙ্গবন্ধুকে ম্লান করা যাবে না।”

জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সহ সভাপতি শফিউদ্দিন উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোহসীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর্জা মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *