Google Alert – আর্মি
যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে সতর্ক করেছে একাধিক ত্রাণ সংস্থা। জাতিসংঘের বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জরুরি ভিত্তিতে আরও অনুদানের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সহায়তা না মিললে পরিস্থিতি মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে মোড় নেবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
রাখাইনে বাড়তে থাকা উদ্বাস্তু মানুষকে খাদ্য সরবরাহের চেষ্টা করছে ডব্লিউএফপি। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম, যারা ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর থেকে আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছে।
সংস্থাটি দাতাদের নাম উল্লেখ না করে বলেছে, অনেক দেশের দায়িত্বহীনতার কারণেই এই ঘাটতি। তবে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ইউএসএআইডির তহবিল ৮৭ শতাংশ কমানোয় সমস্যাকে আরও জটিল করেছে।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে মিয়ানমারের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এর ফলে সেখানকার মানবিক চাহিদা মারাত্মক আকার ধারণ করে। তবে সামরিক অবরোধের কারণে দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখাইনের পরিস্থিতি অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি খারাপ।
গত ২০ এপ্রিল রাখাইনের সিত্তে শহরের অং তাও কাই শিবিরের ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হতাশা সইতে না পেরে পরিবারের খাবারে কীটনাশক মিশিয়ে দেন। এতে তিনি মারা যান, তবে প্রতিবেশীদের তৎপরতায় স্ত্রী ও দুই সন্তানের প্রাণ রক্ষা হয়। জুন মাসে সিত্তেতে একইভাবে এক রাখাইন পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সর্বশেষ সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত এক প্রবীণ দম্পতি খাদ্য ও অর্থাভাবের হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, চলতি বছর তাদের বৈশ্বিক তহবিল ২০২৪ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ফলে মিয়ানমারে মারাত্মক খাদ্য সংকটে থাকা মানুষের মাত্র এক পঞ্চমাংশকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। মার্চে তীব্র চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রাখাইনে খাদ্য সহায়তা কমাতে বাধ্য হয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএফপির মিয়ানমার প্রতিনিধি মাইকেল ডানফোর্ড বলেন, সংঘর্ষের মধ্যে জীবনযাপন, জীবিকা হারানো এবং মানবিক সহায়তার নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত অবস্থায় মানুষ এক দুষ্টচক্রে আটকে আছে। ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না আর মায়েদের খাবার না খেয়ে থাকা—এসব হৃদয়বিদারক গল্প আমরা শুনছি।
রোহিঙ্গাদের ওপর ২০১৭ সালে শুরু হওয়া দমন-পীড়ন ও ব্যাপক উচ্ছেদের পর ২০২৩ সালে সেনাবাহিনী আরাকান আর্মিকে দুর্বল করতে রাখাইনের সব বাণিজ্য ও পরিবহনপথ অবরোধ করে। বর্তমানে সিত্তে অবরুদ্ধ, শুধু সমুদ্র ও আকাশপথে প্রবেশযোগ্য।
সংকট এতোটাই ঘনীভূত হয়েছে যে, কৃষকরা বাজারে ফসল বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের মাছ ধরায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা, যা তাদের খাদ্য ও আয়ের অল্প কয়েকটি উৎসের একটি।
আশ্রয়শিবিরের এক ব্যক্তি বলেন, মানুষ বাইরে যেতে পারে না, কোনও কাজ নেই, দাম পাঁচগুণ বেড়েছে। এখন বেশিরভাগ মানুষ সেদ্ধ কলার মোচা খেয়ে বেঁচে আছে।