অভিযানের ভয়ে লুটের পাথর মাটিচাপা, উদ্ধার

Bangla News

সিলেট: এ যেন ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’ লুটপাটের পাথর লুকিয়ে রাখা হয়েছে বালুর নিচে। গত বুধবার থেকে সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযানের খবরে নড়েচড়ে বসেন পাথর ব্যবসায়ীরা।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর, কালাইরাগসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকের মজুতকৃত সাদা পাথর জব্দ করে প্রশাসন। কিন্তু অভিনব কায়দায় অনেকে ক্রাসারজোনের পাশে মাটি দিয়ে সাদাপাথর ডেকে রাখেন। এখন প্রশাসনের অভিযানে এসব পাথর উদ্ধার হচ্ছে।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কলাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত পাথর পুনরায় সাদাপাথরে নিয়ে ফেলা হচ্ছে, সাংবাদিকদের এমনটি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. মাসুদ রানা।


তিনি বলেন, প্রশাসনের অভিযানে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা অন্তত ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। লুণ্ঠিত সেসব পাথর উদ্ধার করে নিয়ে ফেলা হচ্ছে সাদাপাথরে।


শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের উপকণ্ঠ সিলেট সদর উপজেলার  ধোপাগুল স্টোন ক্রাসার জোনের বিভিন্ন স্থানে স্তরে স্তরে রাখা হয়েছে সাদা পাথর। খুব কম সংখ্যক পাথরের স্তূপ দৃশ্যমান রয়েছে। আর বেশিরভাগ সাদাপাথর রাখা হয়েছে মাটিচাপা দিয়ে। অনেকে বালু দিয়েও সাদা পাথর ঢেকে রেখেছেন। ঢেকে রাখার চেষ্টাকৃত অনেক পাথর আবার দৃশ্যমান।


স্থানীয়দের দাবি, সম্প্রতি দুই উপদেষ্টার সিলেট সফর পরবর্তী প্রশাসন অভিযান চালিয়ে স্টোন ক্রাসারগুলোর বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যে কারণে লুটপাটকৃত পাথর ব্যবসায়ীরা কিনে আনলেও সেগুলো ভাঙাতে পারেননি। তাই অভিযানের ভয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।


এরআগে বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে,  সাদাপাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের চিত্র দেখা গেছে। সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে বড় বড় পাথর চুরি হওয়া স্থানগুলোতে বিশালাকারের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত শত শত স্থান খোদাই করে পাথর লুট করা হয়েছে।


স্থানীয় সাদাপাথর এলাকার ব্যবসায়ীদের মতে, প্রায় ৮০ শতাংশ লুট করা হয়েছে। যে কারণে কমেছে পর্যটক। ওইদির কালাইরাগ এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে স্তূপাকারে জব্দকৃত সাদাপাথর নৌকা এনে ভোলাগঞ্জ ১০ নং সাদাপাথর এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হয়।


গত বুধবার রাত ১১টা থেকে মধ্য রাত থেকে শুরু করে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সবমিলিয়ে প্রায় এক লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে, দাবি জেলা প্রশাসনের।


এদিকে, সাদাপাথর থেকে লুট হওয়া পাথর অভিনব পন্থায় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।


স্থানীয়দের তথ্যমতে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া প্রায় ৭০ হাজার ঘনফুট পাথর তার মালিকানা ক্রাসার জোনের পাশে সরিয়ে মাটিচাপা দিয়ে রাখেন। এছাড়া আরো অনেক ব্যবসায়ী সেই পন্থায় পাথর লুকিয়ে রেখেছেন বলে দাবি করেন।


খবর পেয়ে যৌথবাহিনী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কলাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় মাটি ও বালুচাপা অবস্থায় বিপুল পরিমাণ পাথর জব্দ করা হয়। জব্দ করা ৭ ট্রাক পাথর। পরে এগুলো সাদাপাথর এলাকায় নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।


কোম্পানীগঞ্জের কলাবাড়িতে অভিযানে নেতৃত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব শাখা, জেলা ব্র্যান্ডিং ও পর্যটন সেল) মাহমুদ আশিক কবির বলেন, কলাবাড়ি এলাকায় স্টোন ক্রাসারের মালিকরা সাদা পাথর মাটি ও বালু দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। সেখান থেকে ৭ ট্রাক পাথর জব্দ করে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে ফেলা হয়েছে। আরও প্রায় ৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা অবস্থায় রয়েছে। সেগুলোও সাদাপাথরে ফেলার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, উপজেলার কালাইরাগসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রশাসনের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে সাদা পাথরে ফেলা হয়েছে।


এদিকে, র‌্যাব-৯, সিলেটের অভিযানে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর জৈন্তাপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।


শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার আসামপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-৯। এ অভিযানে জাফলং থেকে লুট হওয়া আনুমানিক ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উদ্ধার হওয়া পাথর ট্রাকে করে নিয়ে জাফলং এলাকার নদীতে পুনরায় ফেলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় র‌্যাব।


জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, উদ্ধারকৃত পাথর সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে প্রতিস্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


 এনইউ/জেএইচ

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *