দেশ রূপান্তর
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিজের বৈঠককে ‘দশে দশ’ বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব ভালোভাবে একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে কথা বলেছি।’ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠকে কিছুই হয়নি। বরং শান্তি স্থাপন আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে।
আলাস্কা থেকে যাত্রার আগে রেকর্ড করা এই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি এবং পুতিন ‘খুব ভালো বৈঠক’ করেছেন এবং দুই নেতার মধ্যে ‘উষ্ণ সম্পর্ক’ ছিল।
এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আলাস্কার এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে এ দুই বিশ্বনেতা বৈঠক করেন।
ট্রাম্প বলেন, এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর নির্ভর করছে তারা একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবেন কিনা। তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়েই উপস্থিত থাকবেন।
ট্রাম্প জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ কীভাবে শেষ হতে পারে—এই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে ভূমি বিনিময়ের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে ‘অনেকটাই’ সমঝোতা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকেই নিতে হবে। হয়তো তারা ‘না’ বলবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি চুক্তি হোক—এটাই আমি চাই। আমি চাই মানুষ মারা যাওয়া বন্ধ হোক।’
যদিও ট্রাম্প বৈঠকটিকে সফল বলে দাবি করেছেন; তবে ন্যাটোতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডগলাস লুট বলেন, ‘এই বৈঠক থেকে ট্রাম্প কিছুই পাননি।’
বিবিসিকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় লুট বলেন, ‘পুতিন আন্তর্জাতিক একঘরে অবস্থান থেকে বেরিয়ে এলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে, লাল গালিচা সংবর্ধনা, ট্রাম্পের গাড়িতে চড়া—সব কিছুই তাকে আন্তর্জাতিকভাবে বড় মাপের নেতা হিসেবে তুলে ধরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর বিনিময়ে ট্রাম্প কী পেলেন? কিছুই না। বরং আমরা হয়তো আজকের পর আরও বেশি দূরে চলে গেছি ইউক্রেন শান্তি চুক্তি থেকে।’
একই কথা বলছেন মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল। তিনি বৈঠককে সম্পূর্ণ ব্যর্থ অভিহিত করে বার্তা সংস্থা সিএনএনকে বলেন, ‘‘কোনো ফলাফল নেই। এটি নিছক সময় নষ্ট। পুতিন যখন ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছেন, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলছেন—এটা অগ্রহণযোগ্য।’’
অন্যদিকে রুশ অর্থনৈতিক দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেছেন, আলাস্কা সম্মেলন ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক অগ্রসর হবে। তার দাবি, বহু বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, বৈঠকের পর তিনি ন্যাটো ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকেও ফোন করবেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত, কোনো চুক্তিই হয়নি।’