প্রথম আলো
আমার এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল পদ্মার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কায়াকিং করে আরও বড় একটা অভিযানের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন। পাশাপাশি পদ্মার রূপ-রঙে গা ভাসানো। রুট ছিল রাজশাহী, ভেড়ামারা, শিলাইদহ, পাবনা, দৌলতদিয়া, মৈনটঘাট, লৌহজং, সুরেশ্বর, চাঁদপুর। এ যাত্রায় পার হয়েছি পদ্মাচরের নানা গোলকধাঁধা, দীর্ঘ জনবিরল পথ আর যমুনা-পদ্মা ও পদ্মা-মেঘনার দুটি বড় মোহনা। প্রথমার্ধে আত্মা তাতানো রোদ পেরিয়ে গন্তব্যের কাছাকাছি এসে পেলাম পদ্মার ঝড়ে উন্মাদ উত্তাল রূপ, সকাল-সন্ধ্যা টানা বৃষ্টি। রাজশাহী থেকে চাঁদপুর আসতে আমার মোটমাট সময় লেগেছে ১০ দিন, ১০ থেকে ১৯ জুন। নয় দিন কায়াকে, এক দিন ফাঁকিবাজি। মাঝখানের আটটা রাত আটটা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় কাটিয়েছি। কখনো কারও বাড়ি, তো কখনো মসজিদ-মাদ্রাসা, পাড়ার ক্লাবঘর, ড্রেজার, বাল্কহেড, বাঁধের কন্সট্রাকশন সাইট। কিন্তু এই সবকিছু ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত যেটা মনে দাগ কেটে রইল তা হলো, পদ্মাপাড়ের মানুষ আর তাঁদের নিঃস্বার্থ আতিথেয়তা, এখানে-ওখানে পাওয়া অকৃত্রিম ভালোবাসা, নদীপাড়ের কচি–কাঁচাদের উচ্ছ্বাস আর পদ্মার গাঢ় নীল রং। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথে অন্তত তিন শ রকম মানুষের সঙ্গ পেয়েছি। টিভি–খবরের কাগজের হিংসা হানাহানিতে মত্ত দেশ না, যেন অন্য এক দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলাম। না জানি কী হয়, মনের এই সদা ভয় আস্তে আস্তে কেটে গেছে। কবে-কোথায় কে ধরে, কে মারে, সব শঙ্কা উড়িয়ে নিল পদ্মার উত্তাল হাওয়া। বদলে মনের জমিতে জমা পড়ল অনেক অনেক রঙিন স্মৃতির পলি।