তল্লাশি চালানো হয়েছে ৫ গ্রামবাসীর বাড়িতে

CHT NEWS

সেনাদের তল্লাশি চালানো একটি বাড়ির চিত্র।


লক্ষীছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫

খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইইনয়নের হুদুকছড়িতে সেনা অভিযান ও
গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে তল্লাশি বিষয়ে আজ (১৮ আগস্ট ২০২৫) সকালে সিএইচটি নিউজে একটি
খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশিত উক্ত খবরে তিন গ্রামবাসীর বাড়ি তল্লাশি
করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সর্বশেষ পাওয়া বিস্তারিত খবরে মোট ৫ জনের বাড়িতে
তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ ভোররাত আনুমানিক ২:০০টার সময় লক্ষীছড়ি সেনাজোনের
অধীন বান্যাছোলা সেনা ক্যাম্প থেকে ৭০ জনেরও বেশি সেনা সদস্য হুদুকছড়িতে এসে অবস্থান
নেয়। এরপর ভোর আনুমানিক ৫টায় সেনারা হুদুকছড়ি বাজার পাড়া এলাকায় ৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীর
বাড়ি ঘেরাও করে এবং প্রায় দুই ঘন্টা ধরে তল্লাশি চালায়। অভিযান চলাকালীন সেনারা
দলিলসহ গৃহস্থালির জিনিসপত্রও লুট করে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বাড়ি তল্লাশির শিকার ব্যক্তিরা হলেন, ১. বাবু সাঁওতাল বয়স (৩০), পিতা- যুগল
রায় সাঁওতাল, ২. ২. নয়ন্ত চাকমা (৩৪), পিতা- বিন্দুক চাকমা, ৩. প্রীতিময় চাকমা (২৮),
পিতা- সুরেশ কুমার চাকমা, ৪. রুবেল চাকমা (৩২), পিতা-কালাচান চাকমা ও ৫. জন্ত চাকমা
(৩৫), পিতা- আনন্দ চাকমা (স্ত্রীর নাম: জেকি চাকমা)।

সেনারা বাবু সাঁওতাল এর বাড়ি ঘেরাও করে ভোর ৫:২৫টায়। প্রথমে চারদিক থেকে
বাড়িটি ঘেরাও করে এরপর বাড়ির ভিতর ঢুকে তল্লাশি চালায়। কিন্তু তল্লাশি চালিয়ে বাড়ির
ভিতর কিছু না পেলে সেনারা তাদের পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিয়ে বলে যে, “যদি ইউপিডিএফ
কর্মীদের ধরিয়ে দিতে না পারো তাহলে তোমাদের সবাইকে জেলে দিয়ে দিবো, কথাটা যেন মনে থাকে।”

নয়ন্ত চাকমার বাড়িটি ভোর ৫ টায় ঘেরাও করার পর বাড়ির ভিতর ঢুকে তল্লাশি চালানো
হয়। তল্লাশিকালে বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। সেনারা তার বাড়িতে রাখা
জায়গা দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রীতিময় চাকমার বাড়ি। সেনারা তাঁর এই বাড়িতেও হয়রানিমূলক তল্লাশি চালায়।

একই সময় প্রীতিময় চাকমার বাড়িও ঘেরাও করে তল্লাশি চালায় সেনারা। এ সময় সেনারা
তাদেরকে হুমকি দিয়ে বলে যে, “ইউপিডিএফের লোকজন কোথায় থাকে? তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে,
না হলে তোমাদের অবস্থা খারাপ হবে? পরে সেনারা প্রীতিময় চাকমাকে এবং চা বাগানের রাত্রিকালিন
চৌকিদার ১৫/১৬ জনকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত আটক রেখে হয়রানির পর সবাইকে ছেড়ে দেয়।

সেনারা ওই সময়ে রুবেল চাকমা ও জন্ত চাকমার বাড়িতেও তল্লাশি চালায়। বন্দুক
তাক করে রুবেল চাকমার বাড়ি তল্লাশির সময় পুরো বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে দেওয়া হয়। সেনারা
বাড়ির মালিক রুবেল চাকমাকে ‍“অস্ত্র কোথায়? অস্ত্র দাও, যদি অস্ত্র দিতে না পারো তাহলে
তোমাকে এখানে এনকাউন্টারে দেবো। অস্ত্র দিতে না পারলে ইউপিডিএফ কর্মী ধরিয়ে দাও” ইত্যাদি
বলে হুমকি প্রদান করে।

এছাড়া অরুণ চাকমা নামে স্থানীয় এক যুবককেও প্রায় এক ঘন্টা ধরে আটকে রেখে
হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সেনাদের এমন অভিযানে এলাকার জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তল্লাশি ও হয়রানি
শেষে সেনারা সেখানে বিভিন্ন স্থানে ড্রোন উড়িয়ে টহল দেয়। এতে গ্রামবাসীদের স্বাভাবিক
চলাচল ও কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

তল্লাশি ও নিরীহ লোকজনকে হয়রানি শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখান থেকে ক্যাম্পে
ফিরে যায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *