Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল
পাকিস্তানে ভূমিধস-বন্যায় নিখোঁজ ১৫০, জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ
উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে গত শুক্রবারের (১৫ আগস্ট) ভয়াবহ ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যার পর থেকে নিখোঁজ দেড় শতাধিক মানুষকে খুঁজছে উদ্ধারকর্মীরা। সোমবারও তাদের সন্ধানে অভিযান চলছে।
প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে, ধ্বংস হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি। এর মধ্যে ৩১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে। সেখানে মৌসুমি বৃষ্টিপাত আগামী দিনগুলোতে আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও ভূমিধসে বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে।
প্রদেশটির শুধু বুনের জেলাতেই অন্তত ২০৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন হয়েছেন এবং আরও দেড় শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ওই এলাকায় ‘১০ থেকে ১২টি পুরো গ্রাম আংশিকভাবে মাটিচাপা’ পড়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা বন্যার্তদের সহায়তা করছেন প্রবল স্রোতে আসা ভারী পাথরগুলো সরাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে। সংগৃহীত
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান আসফানদিয়ার খট্টক বলেন, ‘তারা হয়তো নিজ নিজ ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, অথবা বন্যার স্রোতে ভেসে গেছেন।’ তিনি আরও জানান, ‘শাংলা জেলাতেও বহু মানুষ নিখোঁজ বলে খবর পাওয়া গেছে।’
প্রাদেশিক উদ্ধার সংস্থার মুখপাত্র বিলাল আহমাদ ফয়েজি জানান, নয়টি জেলায় প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী কাজ করছেন, যদিও বৃষ্টি উদ্ধার তৎপরতায় বাধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। তবে তার ভাষায়, যারা মাটিচাপা পড়েছেন, তাদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
কয়েক দিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পর গতকার রবিবার বিকেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু হয়। বন্যার কারণে রাস্তা ডুবে থাকায় উদ্ধারযানের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরাও পড়ে থাকা গাছ কেটে পথ পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন।
প্রাদেশিক সরকার বুনের, বাজউর, সোয়াত, শাংলা, মানসেহরা ও বাট্টাগ্রামসহ দুর্গত পার্বত্য অঞ্চলগুলোকে “দুর্যোগকবলিত এলাকা” ঘোষণা করেছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) গণকবরের অনুষ্ঠানে শত শত মানুষ যোগ দেন। সাদা কাপড়ে মোড়ানো রক্তমাখা মরদেহগুলো গ্রামের মাঠে একসঙ্গে শায়িত করা হয়।
প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিপর্যয়ে ইরান জানিয়েছে, তারা ‘পরিস্তিতি লাঘবে যেকোনো সহযোগিতা ও সহায়তা’ দিতে প্রস্তুত। অন্যদিকে পোপ লিও চতুর্দশ ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে প্রার্থনা করে বলেন, ‘এই বিপর্যয়ে যারা ভুগছেন, সবার জন্য আমি প্রার্থনা করছি।’
দক্ষিণ এশিয়ার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসে বর্ষাকালে। এই বৃষ্টি যেমন কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত জরুরি, তেমনি নিয়ে আসে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞও।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইনাম হায়দার সাংবাদিকদের জানান, এবারের বর্ষার তীব্রতা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি। তিনি আরও বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক পর্যন্ত আরও দুই থেকে তিন দফা মৌসুমি বর্ষণ হতে পারে।
সাধারণত জুন থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বর্ষা মৌসুমের প্রভাব কমে আসে। এ সময়ে পাকিস্তানে ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যা নতুন কিছু নয়।
চলতি বর্ষায় টানা প্রবল বৃষ্টিপাতে পাকিস্তানে ইতোমধ্যেই ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৯২০ জনের বেশি।
বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি পাকিস্তান, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়া দিন দিন ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে। সূত্র: আল জাজিরা