Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল
২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানের দুঃখের দিনের শুরু, মনে করেন অনেকেই৷ দেশটির শাসক হিসেবে ফের ক্ষমতায় আসে তালেবান, আর ‘আফগান ইয়ুথ অর্কেস্ট্রা’র সম্পূর্ণ দলটি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়৷ গত চার বছরে আফগানিস্তান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মিউজিক (এএনআইএম)- এর তরুণ সংগীতশিল্পীরা তাদের নতুন ঘর খুঁজে পেয়েছেন পর্তুগালে৷ বার্লিনের ‘ইয়ং ইউরো ক্লাসিক ফেস্টিভ্যালের’ তারা অন্যতম অতিথি৷
‘‘বাদ্যযন্ত্র তৈরি, বাজানো বা গান করা আফগানিস্তানে সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ৷” ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন আহমদ সরমস্ত৷ তিনি এএনআইএমের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখ্য আধিকারিকও বটে৷ আরো জানিয়েছেন, ওই সংগীত শিক্ষাভবনটির সঙ্গে যুক্ত ২৭৩ জনকে আফগানিস্তান ছাড়তে সাহায্য করেছেন তিনি৷ কাবুলে তার স্কুলটি অবশ্য মাটিতে মিশে গিয়েছে৷ ভাঙচুর করা হয়েছে স্কুলের বাদ্যযন্ত্রগুলিকেও৷
‘‘গানবাজনা মানুষের মৌলিক অধিকার৷ আফগানিস্তানের মানুষের আর সেই অধিকার নেই,” তিনি জানান৷ তার কথায়, ‘‘আমার দেশ এখন নীরব একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে৷”
নির্বাসনেও বেঁচে রয়েছে আফগান সংগীত
তবে নির্বাসনেও বেঁচে রয়েছে আফগান সংগীত৷ ইয়ং ইউরো ক্লাসিকের মতো বার্ষিক অর্কেস্ট্রার অনুষ্ঠানে শতাধিক তরুণ সংগীতশিল্পী, গায়ক, বাদক যোগ দেন৷ ইউরোপীয় ও অ-ইউরোপীয় শিল্পীর কাছেও যায় আমন্ত্রণ৷ এই অনুষ্ঠানের কার্যনির্বাহী ক্যারোলাইন ট্রিসপেলের মতে, ‘‘সংগীতই এই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র৷ প্রতিটি দেশ কীভাবে নিজেদের দেশজ সংগীতকে দেখে, এই অনুষ্ঠান তারই প্রকাশ৷”
তার কথায়, এই সমস্ত তরুণ শিল্পীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের গান ও বাজনার জন্য একটা প্ল্যাটফর্মও বলা যেতে পারে এই উৎসবকে৷ এ বছর আফগান শিল্পীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন বলিভিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, গাম্বিয়ার মতো দেশের শিল্পীরাও৷ উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সামি জনজাতির শিল্পীরাও যোগ দেবেন৷ পেশ করবেন তাদের সংগীত৷
নিষিদ্ধ সংগীত যেন কণ্ঠ খুঁজে পেল…
নিজেদের দেশে যে সংগীত নিষিদ্ধ, তাই গাওয়া হবে এখানে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সামি জনজাতির ‘ইয়োয়িক’ গাওয়া অষ্টাদশ শতক থেকে বিংশ শতাব্দি পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়ায়৷ বলা হত, এটি অখ্রিস্টীয়, তাই গাওয়ার অনুমতি নেই৷
ট্রিসপেলের কথায়, ‘‘ঔপনিবেশিকতার ফলে বহু দেশের নিজস্ব, দেশজ সঙ্গীত, জনজাতির সংস্কৃতি চাপা পড়ে গিয়েছে৷”
বোলিভিয়ার শিল্পীদল ‘ডস পারেস ডে লা অরকোয়েস্টা এক্সপেরিমেন্টাল ডে ইনস্ট্রুমেন্টোস নাটিভোস’ বাজাবেন আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া সংগীত৷ পাশাপাশি দেশজ বাদ্যযন্ত্র দিয়ে নতুন সংগীতও শোনাবেন তারা৷
এদিকে আজাদা অনসম্বল হলো একটি আফগান দল, যারা আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশনা করে। তারা মূলত মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক, দেশের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলেন তাদের শিল্পে৷
তালেবানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
২০২৩ সালে জার্মানির বন শহরে এসেছিলেন আফগান ইয়ুথ অর্কেস্ট্রার সদস্যরা৷ ইরানের সংগীতশিল্পীদের সঙ্গে বিঠোফেনফেস্টে ডয়েচে ভেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তারা৷ আহমদ জানান, বনে তাদের অর্কেস্ট্রার সব সদস্য অবশ্য আসেননি৷ বার্লিনের ইয়ং ইউরো ক্লাসিকে তাদের অর্কেস্ট্রার সব সদস্য, অর্থাৎ, ৫১ জনই যোগ দেবেন৷
আহমদের কথায়, ‘‘আমাদের গাওয়া ও বাজানো প্রতিটা সংগীত আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থা ও তালেবানের নীতি তুলে ধরবে৷”
আফগান সমাজকে আরও বেধে বেধে থাকার ডাক দিতে চায় আফগান ইয়ুথ অর্কেস্ট্রা৷ আহমদ জানান, ‘‘তালেবানের হাতে নির্যাতিতা আফগান নারীদের স্বাধীনতা ও সাম্যের লড়াইয়ে আফগান পুরুষদের সহযোগিতার ডাক নিয়ে একটি গান রয়েছে৷”
একটি সংগীত রয়েছে আফগানিস্তানে নতুন বছর উদযাপন নিয়েও, যা এখন তালেবান সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে৷ আহমদ স্পষ্ট জানান, ‘‘হাজার বছর ধরে এটা উদযাপন হত৷ তালেবান যে আমার দেশের সংস্কৃতি নষ্ট করছে, এই সংগীতের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করছি আমরা৷”
তবু আশা বেঁচে থাকে
কনসার্টের শেষ গানটি ফারসি একটি কবিতার উপর ভিত্তি করে৷ আয়োজন করেছেন তরুণ পর্তুগিজ কন্ডাক্টর টিয়েগো মোরেইরা ডা সিলভা৷ এতে শান্তি ও বসন্তের ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে৷
আহমদ চিলির বিখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার কবিতা উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘ফুল ও গাছ ধ্বংস করে দিলেও বসন্ত ফিরে আসে৷ তাকে রোখা যায় না৷”
সমাজমাধ্যমের সাহায্যে নিজেদের জন্মভূমির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন আফগান ইয়ুথ অর্কেস্ট্রার সদস্যরা৷
আহমদের আশা আফগানিস্তানে একদিন ফের ফিরে আসবে সংগীত, শিল্প, সংস্কৃতি৷ তালেবানকে তার বার্তা, ‘‘মানব ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচারী খুব বেশিদিন কখনওই ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, তালেবানেরও তাই হবে৷”
গাবি রয়শার/এসটি