Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল
সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। পুকুর, কৃষি জমি ও বীজতলা পানিতে ভেসে একাকার। আর ধানের জমিতে জন্ম নেয় বড় বড় কচুরী পানা। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজে আসছে না সরকারি খালগুলো। হচ্ছে না পানি নিস্কাশন, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কৃষি আবাদ। আর এভাবেই অনাবাদে পড়ে থাকছে শতশত বিঘা দুই ফসলি আবাদী জমি। এ যেন কৃষির সর্বনাশ। সেই সাথে বৃষ্টি মৌসুমে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে হাজারো পরিবার। রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া-ভুলতা-গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বেড়িবাধেঁর অন্তর্ভুক্ত প্রায় ২০ গ্রামে এমন চিত্রের দেখা মিলে।
* সরকারি খালে পাকা স্থাপনা ও বাগান বাড়ি নির্মাণ
* আটকে যাচ্ছে পানির স্বাভাবিক চলাচল, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা
* কৃত্রিম জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম
* মাছ চাষেও নেই সুবিধা, যখন তখন পুকুর ভেসে যায় কৃত্রিম বন্যায়
* ভারী বৃষ্টিতে গ্রামের রাস্তার ৩/৪ ফুট পানি জমে, শিল্পকারখানার দুষিত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের রাস্তাঘাটে
* ভোগান্তি পোহাচ্ছে পৌরসভা ও তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার
* ইরিগেশন প্রজেক্ট হওয়া স্বত্তেও অনাবাদি পড়ে থাকছে শতশত হেক্টর কৃষি জমি
* পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে নেই নজধারী
* সরকারি অর্থে অধিগ্রহনকৃত খাল উদ্ধারে নেই প্রশাসনিক উদ্যোগ
* নাম সর্বস্ব আবাসনে গিলে খাচ্ছে ইরিগেশন প্রকল্পের শতশত বিঘা জমি
সরেজমিনে ঘুড়ে দেখা যায়, কাঞ্চন পৌরসভা, মুড়াপাড়া, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ২০ গ্রামে প্রায় ২২ হাজার বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। এ সকল এলাকার কোথাও ৬ মাস কোথাও আবার সারাবছরই কৃত্রিম জলাবদ্ধতা থাকে। তাতে শতকরা প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষি জমিই অনাবাদি পড়ে থাকে। হাটাব বারৈপাড় এলাকায় কানি বিলের পিঠাগুড়ি অংশে খালের উপর বাগান বাড়ি নির্মাণ করায় বাধাঁপ্রাপ্ত হচ্ছে পানির স্বাভাবিক চলাচল। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে টাটকির খাল, সুতালরির খাল, দাগিরমার খাল, কালাদী থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত ১৮০ ফিট এশিয়ান হাইওয়ে সংলগ্ন সরকারি খাল দখল হয়ে আছে সড়ক নির্মানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের অবহেলায়। এছাড়াও অবৈধভাবে সরকারি খালের উপর কালাদী, নলপাথর, কুশাবো এলাকায় গড়ে ওঠেছে একাধিক বালুর গদি, হান্ডিমার্কেট এলাকায় খালের উপরে গড়ে ওঠেছে সাবানের ফ্যাক্টরি, এনডিই রেডিমিক্স, ম্যাংসাং সার্ভিসিং সেন্টারসহ একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অর্ধশত বসতবাড়ি।
তাতে একদিকে পানি স্বাভাবিক চলাচল বাধাঁগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বালুর গদির শতশত টন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাশয় আর ভারী বর্ষণে রূপ নিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ওই সমস্ত এলাকায় ইরিগেশন প্রজেক্ট বা বেড়ি বাধেঁর ভেতরে এমন জলাবন্ধতায় শুধু কৃষি আবাদই ব্যহত হচ্ছে না মানুষের জীবন জীবিকাও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এছাড়াও কারখানার দুষিত বর্জ্য খোলা মাঠে ছেড়ে দেয়ায় পানিবাহিত রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে এলাকার মানুষের মধ্যে।
টেকপাড়া এলাকার আব্দুস সামাদ বলেন, এলাকার ৪/৫ টি খাল বেইনিভাবে দখল করে খালের উপরে অর্ধশত পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিপুর্বে গ্রামবাসীর পক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের লিখিত দরখাস্ত দিয়েও কোন সুফল পাইনি। যারা খাল দখল করছে তারাই আবার জলাবদ্ধতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে।
বেলতলা এলাকাল শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, সরকারি খাল ও সরকারি একোয়ারকৃত জমিতে বালু ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে এনডিই রেডিমিক্স, মেট্রো ওয়ার্কশপ, ইনডেক্স পাওয়ারপ্ল্যান্ট ও এটলাস টয়লেট্রিস নামক প্রতিষ্ঠান। খালের পানি চলাচল বন্ধ করে দেদারচে ব্যবসায় করছে কতিপয় মহল। জলাবদ্ধতায় ভুগছে গ্রামের সাধারণ মানুষ, কেউ প্রতিবাদ করার সাহস টুকু পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী বলেন, কৃষি প্রধান দেশে এখন চলছে আবাসন ব্যবসা। প্রশাসনের লোকজন কিছুই বলে না, জোড়পুর্বক জমি দখল করে। কিছু বললেই বাড়িঘরে হামলা দেয়। আ.লীগ থাকতেও জমি জবরদখল করতো এখনও করে।
জানা যায়, ১৯৮১ সালে কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া- ভুলতা- গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের ২২ হাজার বিঘা কৃষি জমি চাষাবাদের সুবিধার্থে “নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রজেক্ট”র (এনএনডি) আওতায় এনে বেড়িবাধঁ নির্মাণ করে “জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি” (জাইকা) নামক প্রতিষ্ঠান। বেড়িবাধেঁর ভেতরে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে (একোয়ার) সরকারিভাবে খনন করা হয় খাল। খালের পানি নিস্কাশন ও উত্তোলনের কাজে স্থাপন করা হয় বানিয়াদী সেচ প্রকল্প। বসানো হয় ৪ টি সেচ পাম্প। তাতে বর্ষাকালে বা ভারী বর্ষনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি নিস্কাশন ও আবাদ মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হয়। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরধারী না থাকায় অধিগ্রহনকৃত জমিতে গড়ে ওঠেছে শতশত স্থাপনা। বছরের পর বছর এমন দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্তমানে অধিকাংশ খালগুলোই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
অধিগ্রহণকৃত সরকারি খালের জমি অবৈধভাবে দখল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা বিভাগীয় উপ-প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, আমি অল্প দিন হয় এখানে যোগদান করেছি। এরই মধ্যে ইরিগেশন প্রকল্পের সকল খাল উদ্ধারে প্রধান উপদেষ্ঠা ও জেলা প্রশাসকের বরাবরে দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খালগুলো উদ্ধার করা হবে। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাজীপুর- মদনপুর বাইপাস সড়ক প্রশস্তকরনে সময় রাস্তার পাশের খালটি ভরাট হয়ে গেছে। তবে তারা খালের বিকল্প খাল খনন করে দেয়া কথা ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, আমরা সরকারি খাল, রাস্তা ও খাস জমি উদ্ধারে কাজ করছি। ইতিপুর্বে ভ্রাম্যমান অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি খাল ও রাস্তা উদ্ধার করেছি। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমার মোবাইল কোর্ট টিম সর্বদা কাজ করছে।