পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘পাকিস্তানি আগ্রাসন’ দিবস উপলক্ষে কাউখালীতে বিশেষ আলোচনা সভা

CHT NEWS


কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানি আগ্রাসন দিবস (২০ আগস্ট ১৯৪৭) উপলক্ষে রাঙামাটির
কাউখালীতে “অপারেশন উত্তরণের নামে চলমান সেনাশাসন ১৯৪৭ এর পাকিস্তানী শাসনেরই ধারাবাহিক
রুপ
” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) দুপুর ১২ টায় ‘জাতীয় চেতনা উন্মেষ সংঘ’ ব্যানারে
আলোচনা সভাটি আয়োজন করা হয়।

সভায় স্কুল শিক্ষার্থী সোনালিকা চাকমার সঞ্চালনায় ও শিক্ষার্থী নোমি চাকমার
সভাপতিত্বে আলোচনা করেন ইউপিডিএফ সংগঠক মিজুক চাকমা, পিসিপি নেতা জিপল চাকমা ও হিল
উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী মামুনি মারমা। এতে কাউখালী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে
শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধি ভিত্তিক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সভা শুরুতে সকল শহীদ ও জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে
১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আলোচকরা বলেন, ২০ আগস্ট আমাদের পার্বত্যবাসীর জন্য এক অভিশপ্ত দিন। ১৯৪৭
সালের আজকের এই দিনে ভারত স্বাধীনতা আইন ভঙ্গ করে অন্যায়ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে
পাকিস্তান নামক মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যার অভিশপ্ত অধ্যায় আজো
চলমান রয়েছে।  

তারা আরো বলেন, ব্রিটিশরা তাদের শাসনের অন্তিম সময়ে পাকিস্তান ও ভারত রাষ্ট্রের
অভ্যুদয় কালে ‘৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্নেহকুমার নেতৃত্বে রাঙ্গামাটিতে ভারতীয় পতাকা
উত্তোলন করে ভারতের সাথে ও বান্দরবানে বোমাং রাজ পরিবারের নেতৃত্বে বার্মা পতাকা উত্তোলন
করে বার্মার সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্টরা পার্বত্য
চট্টগ্রামের উপর সশস্ত্র আগ্রাসন চালিয়ে রাঙ্গামাটি থেকে ভারতীয় পতাকা নামিয়ে পাকিস্তান
পতাকা উত্তোলন করে। কিন্তু পার্বত্যবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে সে সময় ভারত ও বার্মার
পক্ষ থেকে কোন আগ্রহ বা পদেক্ষেপ দেখা যায়নি। আর জনসমিতির নেতা স্নেহ কুমার চাকমা ভারতীয়
পতাকা উত্তোলনে নেতৃত্ব দিতে পারলেও আগ্রাসন প্রতিরোধ করার মতো কোন আন্দোলন তারা গড়ে
তুলতে পারেনি। ফলে বিনা বাধায় বেলুচ রেজিমেন্ট পার্বত্য চট্টগ্রামে আগ্রাস চালাতে সক্ষম
হয়। তাই এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষায়
আমাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।


সভাপতির বক্তব্যে নোমি চাকমা বলেন, ১৯৪৭ সালের আজকের দিনি পাকিস্তানের বেলুচ
রেজিমেন্ট পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র আগ্রাসন চালায়। সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে
শিক্ষা দীক্ষা ও রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় এবং সাংগঠনিক দিক দিয়ে ছিল পশ্চাৎপদ। পার্বত্য
চট্টগ্রামের ভূ-প্রকৃতি বহিঃ আক্রমণ প্রতিরোধ অনুকূল হলেও সংগঠন শক্তি প্রস্তুতি ও
নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট বিনা বাধায় সুদর্পে পার্বত্য
চট্টগ্রামকে দখল করতে সক্ষম হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বিশেষ অঞ্চল তা
সংবিধানে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। উগ্র জাতীয়তাবাদী বাঙালি শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ি জনগণের
জাতিসত্তার স্বীকৃতি না দিয়ে ঢালাওভাবে বাঙালি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের
যেটুকু অধিকার ও মর্যাদা স্বীকৃত ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে তাও খর্ব করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের
শাসকগোষ্ঠ নব্য পাক শাসকগোষ্ঠিতে পরিণত হয়। ফলে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এদেশের
শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রেখে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। অপারেশন উত্তরণের নামে চলমান যে সেনাশাসন তা পাকিস্তানি শাসনেরই ধারাবাহিক রূপ হিসেবে আমরা মনে করি। শাসকগোষ্ঠির
এই দমনপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আমাদের অবশ্যই আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করা প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *