কেন ভারত নয়, শুধু চীনকেই ছাড় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : সংবাদ অনলাইন

Google Alert – সামরিক

কেন ভারত নয়, শুধু চীনকেই ছাড় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ বাড়াতে রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক দেশগুলোর ওপর ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’ বা অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেছেন তিনি।

কিন্তু এখানে দেখা গেছে বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়েছে, যা এখন মোট ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারণ, ভারত যুদ্ধকালীন সময়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। অথচ রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি ক্রেতা চীনের বিরুদ্ধে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এতে প্রশ্ন উঠেছে”-কেন ভারতকে চাপ দেয়া হচ্ছে, অথচ চীনকে ছাড় দেয়া হচ্ছে?

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সঙ্গে কৌশলগত কারণে আপাতত কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র বিশেষভাবে বিরল খনিজ (ৎধৎব বধৎঃয সরহবৎধষং) সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়, যেখানে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। সামরিক প্রযুক্তি থেকে শুরু করে ক্লিন এনার্জি-অসংখ্য শিল্পে এই ১৭ ধরনের বিরল খনিজ অপরিহার্য। সেই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্কের সিদ্ধান্তে সময়ক্ষেপণ করছে।

এছাড়া বছরের শেষের দিকে বড়দিনের কেনাকাটা সামনে রেখে মার্কিন খুচরা বাজার চীনা পণ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এখনই বাণিজ্য সংকট তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তামূল্য বেড়ে যেতে পারে। তাই আপাতত চীনের ওপর চাপ কম রাখা হচ্ছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে চীন রাশিয়ার মোট তেলের ১৩ শতাংশ কিনত, যা বেড়ে এখন মাত্র ১৬ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন। যুদ্ধের আগে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ছিল ১ শতাংশেরও কম, যা এখন ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে। তার দাবি, ভারত সস্তায় রাশিয়ার তেল কিনে উচ্চমূল্যে পুনরায় বিক্রি করছে এবং এর মাধ্যমে ভারতের কিছু ধনী পরিবার প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে।

এমনকি হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো এবং ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলারও অভিযোগ তুলেছেন যে, ভারত কার্যত রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে অর্থায়নে সহায়তা করছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, ‘চীনের বিষয়টি শুধু রাশিয়ার তেল কেনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি আরও জটিল।’ অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করে বলেন, ‘চীনের বিরুদ্ধে সেকেন্ডারি স্যাংশন দেওয়া হলে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে দাম হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।’

এদিকে বেইজিংয়ে চীনা দূতাবাস জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের বাণিজ্য আন্তর্জাতিক আইনসম্মত। চীনের অর্থনীতি সম্প্রতি মন্থর হয়ে পড়েছে এবং বেকারত্বও বেড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতিই এর একটি বড় কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে একইসঙ্গে তারা বলছেন, চীনের ব্যাংক ও কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সেকেন্ডারি স্যাংশনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি চীন বাণিজ্য রুট বৈচিত্র্যময় করছে এবং কৌশলগত পণ্যের দেশীয় উৎপাদন বাড়াচ্ছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক চাপালে এর প্রভাব সরাসরি পড়বে মার্কিন ভোক্তাদের ওপর-মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। গত ১২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পারস্পরিক সমঝোতায় বিদ্যমান শুল্ক বিরতি ৯০ দিনের জন্য বাড়িয়েছে, যা ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর আগে গত মে মাসে জেনেভায় চুক্তি করে দুই দেশ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র চীনের আমদানির ওপর শুল্ক ৩০ শতাংশে এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটাই কমে যায়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এখনো দুই দেশের মধ্যে আস্থার ঘাটতি রয়ে গেছে। তবুও উভয় পক্ষই শিগগির কোনো ইতিবাচক ঘোষণা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *