পোশাক রপ্তানিতে এক নম্বর হওয়ার পথে বাংলাদেশ

Google Alert – বাংলাদেশ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের সুবিধা কাজে লাগিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এবার এক নম্বর হওয়ার পথে রয়েছে বাংলাদেশ! কয়েক দশকেরও বেশি সময় ধরে পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজারে রাজত্ব করে আসছে চীন। এক্ষেত্রে ভারতও কম যায়নি, আধুনিক প্রযুক্তি ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে দেশটি পোশাক রপ্তানিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্কারোপের পর সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে শুরু করেছে।  

ভারত ও চীনে উচ্চ শুল্কের কারণে সেখান থেকে ক্রয়াদেশ সরিয়ে বাংলাদেশে আসছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক খাতে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এটি একটি অর্থনৈতিক সাফল্য। তারা বলছেন, ভারত ও চীনের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর দরকষাকষিতে পিছিয়ে পড়লেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল ব্যতিক্রম, এসেছে কূটনৈতিক সাফল্যও। তবে  এই সাফল্য ধরে রাখতে নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।   
জানা গেছে, পাল্টা শুল্কারোপের সুবিধা পাওয়ায় এ খাতের বন্ধ কারখানা পুনরায় চালু করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ বা অর্ডারের অভাবে ধুঁকছিল সেখানে ফিরে আসছে কর্মচাঞ্চল্য। উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগের কথাও ভাবছেন। কেবল দেশীয় প্রতিষ্ঠানই নয়, এর প্রভাব পড়ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও। বৈশ্বিক সোর্সিং প্রবণতা বদলাতে দেখে চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে নতুন উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন। ট্রাম্পের শুল্ক, যা এক সময় হুমকি মনে হয়েছিল, সেটিই এখন দেশের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক সুযোগে পরিণত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। 
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক সংশোধন করে ২০ শতাংশ করেন। তার বিপরীতে চীনা পণ্যে এখন শুল্ক ৪১ শতাংশ। তবে ভারতের পণ্যে শুল্কের হার ২৫ শতাংশ, যা প্রতিযোগী দেশের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার জ্বালানি কেনার ‘অপরাধে’ ভারতের পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ২৭ আগস্ট ভারতের বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করা হয়েছে।

আগামী ২৫ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ওই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। যদিও সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চীন-ভারত থেকে পোশাকের ক্রেতারা আসছেন বাংলাদেশে। স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারকরা এই সুযোগটি কাজে লাগাতে আগে স্থগিত রাখা কারখানা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা পুনর্জীবিত করছেন, বন্ধ থাকা কারখানা খুলছেন, নতুন বিনিয়োগের কথাও ভাবছেন। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বাবলু জনকণ্ঠকে বলেন, ক্রেতারা ফ্রি ক্যাপাসিটির (সক্ষমতা) কারখানা খুঁজছেন। এ কারণে উদ্যোক্তারা কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়াচ্ছেন।

নিজের প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন ওয়াশিং প্লান্ট নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। চীন, ভারত ও মিয়ানমারের ওপর আমেরিকান শুল্ক আমাদের চেয়ে বেশি হওয়ায় সেই অর্ডারগুলো বাংলাদেশে আসবে। তিনি বলেন, বায়ারদের কাছে বিকল্প অপশন খুব বেশি নেই। 
এদিকে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার সক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা আছে, তাই তারাও দ্রুত উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে পারবে না। শুধু পোশাক খাত নয়, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উদ্যোক্তারাও নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল সম্প্রতি ঢাকার এক অনুষ্ঠানে বলেন, এখন রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগের সেরা সময়। উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি সহায়তা চেয়ে তিনি জানান, আমরা আবার নতুন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।

তিনি বলেন, পোশাক খাতে মোট বিনিয়োগ প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার। তবু গত এক বছরে অনেক বড় গার্মেন্টস গ্রুপ ব্যাপকভাবে সক্ষমতা বাড়িয়েছে, যদিও এ সময়ে কিছু বড় কোম্পানিও বাজার ছেড়ে গেছে। নাম না প্রকাশের শর্তে বিজিএমইএর এক নেতা বলেন, হা-মীম গ্রুপ, নিউ এজ গ্রুপ, ডেকো, প্যাসিফিক গ্রুপ ও স্প্যারো গ্রুপ সবাই সম্প্রতি তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, চাহিদা বাড়ার এ সময়টাই কাজে লাগানোর সেরা সুযোগ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক পরিবর্তনে সৃষ্ট সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন চীনা বিনিয়োগকারীরা। তারা নতুন বিনিয়োগ, কারখানা ভাড়া নেওয়া এবং বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন শুরু করতে আগ্রহী দেখাচ্ছেন। 
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ১৯১টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, যার বেশিরভাগই ছোট। একই সময়ে প্রায় ১০০টি নতুন কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে বড় কারখানায় ১৫ হাজার পর্যন্ত শ্রমিক ছিল। বিজিএমইএ নেতারা মনে করছেন, বাজার পরিস্থিতি উন্নত হলে বড় ও ছোট উভয় ধরনের বন্ধ কারখানাই পুনরায় চালু হতে পারে। সম্প্রতি একটি নিটওয়্যার কারখানার মালিক জানান, আমি ইতোমধ্যে একটি কারখানা চীনা উদ্যোক্তাদের কাছে ভাড়া দিয়েছি।

গত সপ্তাহে তারা আরেকটি কারখানা রেন্ট নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, চীনা বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি চলমান নয় এমন রেডি-টু-ইউজ কিন্তু বর্তমানে বন্ধ আছে এমন কারখানা কিনতেও আগ্রহী। এ ছাড়া চীনা বায়িং হাউসগুলো বাংলাদেশের পোশাক কারখানার সঙ্গে ফ্রি অব চার্জ (এফওসি) ব্যবসায়িক মডেল কাজ করার সুযোগ খুঁজছে। এ ধরনের ব্যবস্থায় বায়াররা কাঁচামাল সরবরাহ ও আর্থিক খরচ বহন করে, আর কারখানা কর্তৃপক্ষ শুধু উৎপাদনের দায়িত্ব নেয়।

এতে প্রস্তুতকারকের ঝুঁকি কম হলেও লাভের হারও কম, কারণ শুধু কাটিং ও মেকিং খরচ দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে ফকির ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ বলেন, অনেক কারখানা এফওসিভিত্তিক অর্ডার নিয়ে আলোচনা করছে, তবে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত কার্যাদেশ থাকায় আমরা এমন অফার গ্রহণ করছি না। স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এসএম খালেদ বলেন, আমাদের কারখানায় গত বছর একটি মার্কিন ক্রেতার জ্যাকেটের কাজ হয়েছে ৭ লাইনে।

তারা বাড়তি যে ক্রয়াদেশ দিতে চাচ্ছে, তাতে মোট ১৭ লাইন লাগবে। আবার আরেকটি মার্কিন ক্রেতার জন্য গত বছর ২০টি লাইনে পণ্য উৎপাদন করেছি। তারা বাড়তি ১০ থেকে ১৫ লাইনের পণ্য উৎপাদনের ক্রয়াদেশ দিতে চাচ্ছে। এসব ক্রয়াদেশ মূলত চীন ও ভিয়েতনাম থেকে সরিয়ে আনতে চাচ্ছে ক্রেতারা।
শুধু তাই নয়, দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন ক্রয়াদেশ ধরে রাখার কৌশল হিসেবে ভারতের বড় রপ্তানিকারকরা তৈরি পোশাক উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এ ছাড়া চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহে দুটি চীনা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে চুক্তিও সম্পাদন করেছে। চীনা কোম্পানি হান্ডা (বাংলাদেশ) গার্মেন্টস কোম্পানি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের জন্য প্রায় চার কোটি ডলারের বিনিয়োগ করবে। এ জন্য ৩০ জুলাই বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) সঙ্গে জমি ইজার চুক্তি করেছে হান্ডা।

এ ছাড়া চীনের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান খাইশি গ্রুপ চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে। প্রতিষ্ঠানটি চার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে অন্তর্বাসসহ অন্যান্য পোশাক উৎপাদনের কারখানা করবে। এ জন্য  সম্প্রতি বেপজার সঙ্গে চুক্তি করেছে খাইশি গ্রুপ। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বেপজা। এ ছাড়া গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত আটটি চীনা প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে বেপজার সঙ্গে চুক্তি করেছে। তাদের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ কোটি ডলার।

এসব কোম্পানি তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ব্যাগ, হাল্কা প্রকৌশল পণ্য ইত্যাদি উৎপাদন করবে। এ প্রসঙ্গে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জনকণ্ঠকে বলেন, চীনা বিনিয়োগ আসা খুবই ইতিবাচক। কারণ, তারা বিনিয়োগ করার পাশাপাশি ক্রেতাও নিয়ে আসবে। তাতে আমাদের রপ্তানি বাড়বে। তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগী দেশের তুলনায় শুল্ক কম হওয়ায় আমরা সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছি। তবে বাড়তি ক্রয়াদেশ নিতে হলে ব্যাংকের সহযোগিতা, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ ও কাস্টমসের সহযোগিতা লাগবে।

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, আগামী বসন্তের জন্য আমাদের কাছে ৫-১০ শতাংশ বাড়তি ক্রয়াদেশ রয়েছে। আর গ্রীষ্মের জন্য ১০-১৫ শতাংশ বাড়তি ক্রয়াদেশ আছে। এ জন্য আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৩ ঘণ্টার ওভারটাইম করানোর অনুমতি নিয়েছি। তিনি বলেন, যেসব মার্কিন ক্রেতা ভারতে কাজ করে, তবে বাংলাদেশে করে না, সেসব ক্রেতার ক্রয়াদেশ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড তার মোট উৎপাদনের নির্দিষ্ট অংশ একটি দেশে উৎপাদন করে। ফলে সাময়িকভাবে ক্রয়াদেশ এলেও ভবিষ্যতে না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
মার্কিন শুল্ক কমায় বাড়তি সুযোগ ॥ চলতি আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে নতুন করে ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। একই হারে শুল্ক দিতে হচ্ছে ভিয়েতনামকে। অন্যদিকে চীনকে সর্বোচ্চ শুল্ক দিতে হয়, ভারতকেও দিতে হবে বাড়তি ৫০ শতাংশ শুল্ক। ভিয়েতনামের শুল্ক বাংলাদেশের সমান হলেও দেশটির পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট থাকায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গুনতে হবে। ফলে মার্কিন বাজারে পোশাক শিল্পের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, চীন ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারতের উৎপাদনকারীরা নিজ দেশে বাড়তি নীতি সহায়তা পায়।

পোশাক রপ্তানিতে তারা উদীয়মান দেশ হয়ে ওঠায় বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবার ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় সেই প্রতিবন্ধকতা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের জন্য পণ্য রপ্তানিতে ভিন্ন ভিন্ন শুল্ক কাঠামো আরোপ করার ফলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। পণ্য রপ্তানিতে আগের শুল্কের পাশাপাশি নতুন করে ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ, ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ এবং চীনের ওপর ৪১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। প্রতি বছর দেশটি সারা বিশ্ব থেকে গড়ে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করে থেকে। দেশটিতে ২০২৪ সালে ৭.৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫.২ বিলিয়ন ডলার; ২০২১ সালে ৭.১ বিলিয়ন ডলার; ২০২২ সালে ৯.৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩ সালে ৭.৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের বাজারে চীনের শেয়ার ২০.৮২ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৮.৯০ শতাংশ, বাংলাদেশের ৯.২৬ শতাংশ, ভারতের ৫.৯১ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ৫.৩৬ শতাংশ। 
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। বাকি ১০ ভাগ প্লাস্টিক পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দরকষাকষির মাধ্যমে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার ফলে বাংলাদেশকে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের চেয়ে কম, ভিয়েতনামের সমান, উদীয়মান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ভারতের চেয়ে কম এবং পাকিস্তানের চেয়ে কিছুটা বেশি শুল্ক দিতে হবে।

শুল্ক বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশমুখী হচ্ছিলেন চীনের তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীরা। এ সুবিধা ভারতও নেওয়া শুরু করেছিল। নতুন করে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। 
ভারতে কার্যাদেশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ইতোমধ্যে ভারত ছাড়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। শুল্কের এই অবস্থা বাংলাদেশের জন্য একটি স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক। তিনি বলেন, আমাদের ওপরে প্রথমে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল আর ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের ওপর শুল্ক কম ছিল। এখন বাংলাদেশের কমেছে, ভারতের বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে, ভিয়েতনাম সমান হয়েছে।

এর ফলে আমরা একটি প্রতিযোগিতার জায়গায় চলে গেলাম। এপ্রিলে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক বসানোর আগে যে জায়গায় ছিলাম, আমরা আবার আগের সেই জায়গায় চলে গেলাম। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারত উদীয়মান প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। দেশটি আমাদের মতো এত বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারে না, পিছিয়ে আছে। কিন্তু সম্ভাবনাময়। তারা বেশি সুবিধা পেলে আমাদের সামনে ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারত। শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অবস্থানের ফলে সেই জায়গাটা থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হলো।
ভারত থেকে পোশাক কেনা স্থগিত করছে মার্কিন কোম্পানি ॥ যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর ভারতের তৈরি পোশাকের অর্ডার স্থগিত করেছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি অনেক কোম্পানি ভারত থেকে পোশাক কারখানা অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছেন। এতে দেশটির তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

রয়টার্স বলছে, কিছু মার্কিন ক্রেতা তাদের অর্ডার স্থগিত রেখেছে, আর কিছু ক্রেতা জোর দিচ্ছে উৎপাদন যেন এমন দেশে সরিয়ে নেওয়া হয় যেখানে শুল্কের হার কম। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক ব্র্যান্ড গ্যাপ ও কোলস এ পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পার্ল গ্লোবাল জানিয়েছে, নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর অনেক ক্লায়েন্ট (গ্রাহক) তাদের কল করছেন।

তারা বাড়তি খরচ বহন ও উৎপাদন অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়া হবে কি না তা জানতে চাচ্ছেন। পার্ল গ্লোবালের কারখানা রয়েছে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়াতেমালায়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পল্লব ব্যানার্জি রয়টার্সকে বলেন, সব ক্রেতাই ইতোমধ্যেই আমাকে ফোন করছেন। তারা চাচ্ছেন, আমরা যেন ভারতে না থেকে অন্য দেশে উৎপাদন স্থানান্তর করি।
এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল হয়েছে। ২৫ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ওই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। ফলে ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত মার্কিন শুল্ক আরোপ হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি  জড়িত এক সূত্র জানিয়েছে, নির্ধারিত বৈঠক উপলক্ষে ২৫ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত মার্কিন বাণিজ্য আলোচকদের নয়াদিল্লি সফরের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাদের ওই সফর বাতিল হয়েছে।

পরবর্তী বৈঠক কবে হবে তাও জানা যায়নি। বৈঠকটি বাতিল হওয়ায়  দুই দেশের মধ্যে শুল্ক নিয়ে কোনো চুক্তির সম্ভাবনা কমে গেল। নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাস বলেছে যে তাদের কাছে বাণিজ্য ও শুল্ক আলোচনার বিষয়ে অতিরিক্ত কোনো তথ্য নেই। কারণ এই বিষয়টি পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়। এই মাসের শুরুর দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন নয়াদিল্লির রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রাখা, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।

নতুন আমদানি কর ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। নতুন শুল্ক আরোপ কিছু ভারতীয় রপ্তানির ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো বাণিজ্য অংশীদারের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ শুল্কের মধ্যে অন্যতম। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার তেল কেনার জন্য দেশটিকে অন্যায্যভাবে আলাদা করে দেখা হচ্ছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া থেকে পণ্য কেনা অব্যাহত রেখেছে। ২০২৪ সালে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১২৩ কোটি ডলার। তার মধ্যে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।
বিশ্ব বাজারে এক নম্বর হওয়ার পথে বাংলাদেশ ॥ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বরাবরই চীন বিশ্বে এক নম্বর অবস্থান করেছে। এর পাশাপাশি দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে স্থান পায়। তবে ট্রাম্পের শুল্কারোপের ফলে চীন ও ভারতের ক্রেতারা এদেশ মুখী হওয়ায় শীঘ্রই এক নম্বরে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকরা এ বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে ক্রেতারা দ্রুত অর্ডার স্থানান্তর করছেন এবং এ সুযোগে বাংলাদেশকে নতুন বিনিয়োগ ও অর্ডারের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করছেন।

এই পরিস্থিতি শুধু রপ্তানিতে বৃদ্ধি আনছে না, বরং শিল্পে নতুন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও তৈরি করছে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, চীন থেকে সরানো অর্ডার প্রবাহ আগামী মাসগুলোতে আরও বাড়তে পারে। ইউরোপীয় ক্রেতারাও বাংলাদেশে অর্ডার বাড়াতে আগ্রহী। সঠিক সহায়তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি অর্জন করতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টি-শার্ট রপ্তানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস ও চীনের মতো প্রথিতযশা রপ্তানিকারক দেশগুলোকে পেছনে ফেলে এটি বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন। শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন শুল্কনীতির কারণে বাংলাদেশের পণ্যের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার এ বছরের জুনে ১০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের ৯.২৬ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এ ধরনের প্রবৃদ্ধি রপ্তানিমুখী খাতের জন্য এক নতুন সূচনা এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করবে।
কর্মসংস্থান ও নতুন শিল্প উদ্যোগ ॥ রাজশাহীর বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল লিমিটেড দীর্ঘ ২২ বছর পর পুনরায় চালু হয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উদ্যোগে চালু হওয়া এই মিল ছয় মাসের মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিককে কর্মসংস্থান দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী টেলি মার্কেটিং, তৈরি পোশাক ও অন্যান্য নতুন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও ১০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, কাজের জন্য ঢাকামুখী জনস্রোতের যুগ শেষের পথে।

আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিল্প স্থাপন করে স্থানীয় মানুষের হাতে চাকরির অফার লেটার পৌঁছে দিতে চাই। রাজশাহীতে শ্রমঘন শিল্পে বিনিয়োগ তারই অংশ। রাজশাহী মিল শতভাগ রপ্তানিমুখী হবে এবং নারী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে আগামী গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করবে। তখন বোঝা যাবে বাড়তি কত অর্ডার এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করলে শুল্ক কিছুটা কমানো সম্ভব, যা আমাদের প্রতিযোগিতা আরও বাড়াবে। এ ছাড়া ভারত ও চীনের উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসায় এ খাতে নতুন নতুন কারখানা তৈরি ও কর্মসংস্থান বাড়বে। 
পোশাক খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ ॥ এতসব সুযোগ তৈরি হলেও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে এ খাতে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটÑ বিশেষত গ্যাস নির্ভর ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ এ শিল্প খাতের বড় চ্যালেঞ্জ। গত এক বছরে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে- সাভারে ২১৪, গাজীপুরে ৭২, চট্টগ্রামে ২১ ও নারায়ণগঞ্জে ২৬টি। এতে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ শ্রমিক বেকার হয়েছেন। বিশেষত কার্যাদেশ কমে যাওয়া, ঋণখেলাপি, কাঁচামাল আমদানিতে এলসি জটিলতা, উচ্চ সুদহার, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিÑ সবই কারখানা বন্ধের মূল কারণ। শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

তিতাস গ্যাসের কাছে এক হাজার ১০০টিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে, কিন্তু অধিকাংশই সংযোগ পায়নি। এর ফলে শিল্প খাত বিপর্যস্ত, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না এবং উৎপাদন খরচ ৮-১০ শতাংশ বাড়ছে। তবে সব চ্যালেঞ্জের মাঝেও শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। চীন থেকে সরানো অর্ডার, মার্কিন ক্রেতার বাড়তি চাহিদা, চীনা বিনিয়োগ এবং রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকারিনীতি সমন্বয়Ñ এগুলো একসঙ্গে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন শুল্ক কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরও গতিশীল হবে এবং দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ধারা তৈরি হবে। তবে সরকারের অবকাঠামো সহায়তা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, ব্যাংকিং ও কাস্টমস সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।

মার্কিন শুল্ক পরিস্থিতি প্রমাণ করছে যে বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা সর্বদা পরিবর্তনশীল। চীনের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি হলে বিকল্প বাজার হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের জন্য যথেষ্ট নয়। স্থায়ীভাবে রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজন গুণগত মান বৃদ্ধি, ব্র্যান্ড তৈরি, বাজার সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। যদিও ভারত, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা রয়েছে। মার্কিন পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *