কাপ্তাই হ্রদের তলদেশে রাজ্য শাসনের স্মৃতি ‘চাকমা রাজবাড়ি’

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

সবুজ পাহাড়ে ঘেরা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং ইতিহাস-ঐতিহ্যেও ভরপুর। কাপ্তাই হ্রদের গভীরে আজও চাপা পড়ে আছে চাকমা রাজাদের শাসনকালের স্মৃতি। সেই স্মৃতির নাম ‘চাকমা রাজবাড়ি’।

এক সময় এই অঞ্চল ছিল চাকমা রাজাদের রাজ্য। বর্তমান কাপ্তাই হ্রদের জলে ডুবে যাওয়া বহু জনপদের মধ্যেই ছিল সেই চাকমা রাজবাড়ি। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সূচনার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের রাজ্য শাসনের রাজনৈতিক ক্ষমতা হারাতে শুরু করে। তবে আজও চাকমা সার্কেল চিফ হিসেবে রাজার সম্মান এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় কিছু প্রশাসনিক ক্ষমতা বজায় রয়েছে।

বিশেষ করে ভূমির খাজনা আদায় ও স্থায়ী বাসিন্দার সনদ (Permanent Resident Certificate) দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

কাপ্তাই হ্রদের জন্ম মূলত কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে। ব্রিটিশ আমলে ১৯০৬ সালে প্রথম এ প্রকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।



১৯৫৭ সালে কাপ্তাইয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬২ সালে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদ। এর ফলে ৬৫৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এক লাখেরও বেশি মানুষ, বিশেষ করে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ তখন গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়ে।

ঐতিহাসিক তথ্যমতে, চাকমা রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। সেখানে বসেই রাজত্ব করতেন বিখ্যাত চাকমা রানি কালিন্দী রায়। ১৮৭৪ সালে রানির মৃত্যুর পর রাজা হন তাঁর পুত্র হরিশ্চন্দ্র রায়। তিনি রাজ্য পরিচালনার জন্য রাঙামাটিতে চলে আসেন এবং কাপ্তাই অঞ্চলে নতুন রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন।

এই প্রাসাদ থেকেই দীর্ঘ ৮৪ বছর রাজকার্য পরিচালনা করেন হরিশ্চন্দ্র রায়। কিন্তু ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে ঐতিহাসিক রাজপ্রাসাদটি চিরতরে ডুবে যায় কাপ্তাই হ্রদের অতল গহ্বরে।

১৯৮৬ ও ২০০৬ সালে, কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর কমে গেলে পুরোনো চাকমা রাজবাড়ি আংশিকভাবে জেগে ওঠে। সেই সময় হাজারো উৎসুক জনতা ছুটে আসে এক নজর সেই ঐতিহাসিক স্মৃতি দেখতে।

ডুবে যাওয়া রাজবাড়ির স্মৃতিকে ধরে রাখতে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠে নতুন রাঙামাটি শহরের ‘রাজবাড়ি’ এলাকা। এখানে নির্মিত হয় নতুন রাজপ্রাসাদ। পুরনো প্রাসাদের কিছু নিদর্শন যেমন: একটি প্রাচীন কামান সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে বর্তমান রাজবাড়ির পাশে।

চাকমা সার্কেল কার্যালয়ের কর্মকর্তা সুব্রত চাকমা বলেন, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ তৈরির পর চাকমা সার্কেলের রাজবাড়ি কাপ্তাই হ্রদের গভীর পানির নিচে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া পর নতুন রাজবাড়ি নির্মাণ করা হয় নতুন রাঙামাটি শহরে। পুরোনো রাজবাড়ির পাশেই ছিল ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধবিহার। সেই বিহারের বিশাল বুদ্ধমূর্তি এখনো রয়ে গেছে, কিন্তু ডুবে গেছে মন্দিরটি। এ ছাড়া পুরনো প্রাসাদ থেকে একটি কামান নিয়ে আসা হয়। সেটিও চাকমা রাজার বর্তমান কার্যালয়ের পাশে রাখা আছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *