সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি, পরিস্থিতি এখনো থমথমে

Amarbangla Feed

গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর মঙ্গলবারও (২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ থেকে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিলেও ফাঁকা রয়েছে বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষ। সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।


এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়ে আসছিল কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার পর আজ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।


আজ সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের দুটি বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৯টি বিভাগ এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ১২টি বিভাগ ঘুরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ ছাড়া শহীদ মিনার, গোল চত্বর ও ২ নম্বর গেট এলাকা ঘুরেও শিক্ষার্থীদের তেমন দেখা মেলেনি। সংঘর্ষের পর থেকে ২ নম্বর গেটের মাছবাজার এলাকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। আজকে কয়েকটি দোকান খোলা দেখা গেছে।


সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাস ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বাহন শাটল ট্রেন স্বাভাবিক সূচিতে চলছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটে প্রায় ২৭ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। সংঘর্ষের পর গত রবিবার থেকে কার্যত অচল রয়েছে শ্রেণিকার্যক্রম। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে আজকে সব বিভাগে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সাপেক্ষে ক্লাস ও পরীক্ষা চলমান রাখতে বলা হয়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রাতে হাটহাজারী থানায় দুটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এবং আরেকটি প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জমা দিয়েছেন।


জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু কাউসার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত হাটহাজারী থানায় কোনো মামলা রেকর্ড হয়নি।



চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষ। গত রবিবার দুপুরে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন জোবরা গ্রামে


গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে রবিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় ক্যাম্পাসসংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের প্রায় ২০০ জনই শিক্ষার্থী। এরপর রবিবার বেলা দুইটা থেকে ক্যাম্পাসসংলগ্ন ২ নম্বর গেট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত এ ধারা বহাল রয়েছে।


একটি বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন—এমন খবরে সংঘর্ষের শুরু হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল রড, পাইপ, কাঠের লাঠি ও পাথর। গ্রামবাসীর হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। সংঘর্ষে জোবরা গ্রাম রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে। সংঘর্ষ একপর্যায়ে গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাঁদের মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে।


তিন দাবিতে শিবিরের বিক্ষোভ


এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার, প্রশাসনের জবাবদিহি ও এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টায় এ বিক্ষোভ শেষ হয়েছে।


বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত দোষীদের গ্রেপ্তারের কোনো সংবাদ পাইনি। এটি প্রশাসনের সুস্পষ্ট ব্যর্থতা। যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আশ্বাস থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এ জন্যই আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি; কারণ, অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা আমরা কখনো দেখিনি।’


সাইদ বিন হাবিব বলেন, সংঘর্ষের এ ঘটনাকে একপাক্ষিকভাবে দেখা যাবে না। এ ঘটনার সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।


আমারবাঙলা/এফএইচ

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You missed