আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য প্রদেশ কুনার ও নানগারহারে আঘাত হানা ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ছে। আফগান সরকারের মুখপাত্র মৌলভি জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ‘ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০০ হয়েছে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আড়াই হাজারে।’ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘উদ্ধারকাজ চলছে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।’

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, আফগানিস্তানের পাহাড়ি হিন্দুকুশ এলাকায় স্থানীয় সময় রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের আট কিলোমিটার গভীরে।

দেশটির কুনার প্রদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ধ্বংসস্তূপে শত শত মানুষ চাপা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। জাতিসংঘ ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রাথমিক খবরে জানা গেছে, কেবল একটি গ্রামেই ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে ভূমিকম্পের পর দুর্গম পার্বত্য এলাকার অনেক জায়গায় ভূমিধসে সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। আকাশপথে উদ্ধার অভিযান চালাতে সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান সরকারের কর্মকর্তারা।

উদ্ধারকাজে যুক্ত তালেবান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা কঠিন বলেও জানিয়েছেন দেশটির তালেবান সরকারের কর্মকর্তারা। কেননা ভূমিকম্পকবলিত এলাকাগুলো দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। বিবিসিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই অঞ্চলের কোনো কোনো গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।

আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দেশটি ভারত ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। পাশাপাশি পূর্ব আফগানিস্তানের দুর্গম পার্বত্য এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি থাকায় উদ্ধারকাজ আরো জটিল হয়ে ওঠে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পটি মাত্র পাঁচ মাইল বা আট কিলোমিটার গভীরতায় আঘাত হানায় এর ক্ষয়ক্ষতি আরো ভয়াবহ হয়েছে। কারণ অগভীর ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বেশি ধ্বংসাত্মক হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল কম্পনের পর আরো অন্তত তিনটি আফটার শক অনুভূত হয়েছে। সেগুলোর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ২-এর মধ্যে।

ভূতাত্ত্বিক মতবাদ অনুসারে, পৃথিবীর ভূত্বক প্রধানত সাতটি বড় ও কয়েকটি ক্ষুদ্র গতিশীল কঠিন প্লেট দ্বারা গঠিত, যেগুলো ভ্রাম্যমাণ উষ্ণ গুরুমণ্ডলীয় পদার্থের ওপর ভাসছে। প্লেটগুলোর নড়াচড়ায় ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পর্বত সৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটে। এ প্লেটগুলোর সংযোগস্থলে বা মাঝখানে চাপ তৈরি হলে কঠিন শিলা ফেটে যায়, যেটিকে বলা হয় ‘ফল্ট লাইন’। আফগানিস্তানে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে। আর সংঘর্ষে তৈরি হয়েছে হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও ভূ-অভ্যন্তরের একাধিক ফল্ট লাইন। আফগানিস্তানের কিছু এলাকা এ ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত। ফলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়।

ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় দেশটিতে দুই দশকের মধ্যে অন্যতম বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে ২০২২ সালে। পূর্বাঞ্চলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় এক হাজার বাসিন্দা। আহতের সংখ্যা ছিল তিন হাজার। এ ভূমিকম্পও মাটির মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হয়েছিল।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *