Hill Voice on Facebook
জুলাই-আগষ্টে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতিতে সিএইচপি’র উদ্বেগ
হিল ভয়েস, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন ‘ক্যাম্পেইন ফর হিউম্যানিটি প্রোটেকশন’ (সিএইচপি) এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, গত জুলাই-আগষ্ট দুই মাসে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যুদের দ্বারা ২২টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এসব ঘটনায় ১৪৮ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। এতে ৩০ জনকে সাময়িক আটক, ৭ জনকে হত্যা এবং ৭ জন জুম্ম নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে ঘরবাড়ি তল্লাসী, মারধর, গুলি করে আহতকরণ, ভূমি জবরদখল, ক্যাম্প ও চেকপোষ্ট স্থাপন ইত্যাদি।
গতকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ত্রিপুরা ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘ক্যাম্পেইন ফর হিউম্যানিটি প্রোটেকশন’ (সিএইচপি)-এর সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিরঞ্জন চাকমা এসব তথ্য জানান।
নিরঞ্জন চাকমা আরো জানান যে, গত ১৯ জুলাই রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির ১০ম সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বিগত ৯ম সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন এবং সিদ্ধান্তবলী বাস্তবায়নের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১০ম সভা অনুষ্ঠানের প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো গৃহীত সিদ্ধান্তবলী বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করে পার্বত্য সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে শ্রী চাকমা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে চলমান সংস্কার কার্যক্রমে আদিবাসীসহ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। আদিবাসীসহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাইরে রেখে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণে সংবিধানসহ সংস্কার কার্যক্রম চলমান থাকায় নিরঞ্জন চাকমা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয় যে, গত ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটকাবস্থায় ভানলাল রুয়াল বম (৩৫) নামে বান্দরবানের বাসিন্দা আরো এক নিরীহ বম নাগরিক বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এ পর্যন্ত বিনা বিচারে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক তিন বম গ্রামবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া শতাধিক বম জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ বিনা বিচারে কারাগারে আটক রয়েছে।
গত ১১ আগস্ট রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার কজইছড়ি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পের চেকপোস্টের বিজিবি সদস্যদের পিটুনিতে মারাত্মক জখম হয়ে শুভ চাকমা (১৯) নামে এক জুম্ম তরুণ নিহত হয়। গত ১৫ আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলা সদরের শান্তিনগর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুলিতে কংচাইঞো মারমা (৩১) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়।
গত ৩ আগষ্ট বান্দরবান সদর জোনের নিয়ন্ত্রণাধীন নীলগ্রী ক্যাম্পের সেনাবাহিনী কর্তৃক থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের নাইক্কোং পাড়া থেকে তিনজন জুম্মকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বান্দরবান জেলার রুমা ও থানচি উপজেলায় বিভিন্ন জুম্ম গ্রামে ব্যাপক সেনা অভিযান চালানো হয় এবং এতে অন্তত ১ জনকে আটক, ২ ব্যক্তিকে মারধর ও বিভিন্ন বাড়িতে হয়রানিমূলকভাবে তল্লাসি করা হয়েছে।
গত ৬ আগস্ট থেকে কয়েকদিন ব্যাপী রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার একাধিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযান চলে। এই অভিযানে রূপনা চাকমা (৩৫) নামে এক জুম্ম নারী সেনা সদস্যদের কর্তৃক মারধরের শিকার হয়েছে। গত ১১ আগস্ট হতে ১৩ আগস্ট, তিন দিন ধরে ৩৮ বীর কাপ্তাই সেনা জোন কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলায় হয়রানিমূলক সেনা টহল অভিযান চালানো হয়। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়।
গত ২২ আগস্ট ২০২৫ হতে কয়েকদিন ধরে আলীকদম সেনা জোনের ৩১ বীর এবং রুমা সেনা জোনের ৩৬ বীর এর সেনাবাহিনীর কয়েক শত সদস্য বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বান্দরবান জেলাধীন রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় ব্যাপক সেনা অভিযান পরিচালনা করেছে। এই অভিযানে সেনাবাহিনী থানচি থেকে নয়নজ্যোতি চাকমা (২৭), করুণাময় চাকমা (৪০) ও দয়াময় চাকমা (৩০) নামে তিনজন নিরীহ গ্রামবাসীকে সাময়িক আটক করে। সেনাবাহিনী থানচি সদর হতে বড় মদক নদীপথ পর্যন্ত ৫টি স্থানে, যেমন থানচি সদর, তিন্দু, রেমাক্রি, ছোটো মদক ও বড় মদক এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করেছে। কমপক্ষে ২২টি গ্রামে তল্লাসী অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। শান্তিবাহিনী খোঁজার নামে সেনাবাহিনীর এই যুদ্ধংদেহী সামরিক অভিযানে বান্দরবানের জুম্ম এলাকাসমূহে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং জনগণকে হয়রানি সহ তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে গত ২৩ আগস্ট হতে কয়েকদিন ধরে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই সেনা জোনের ৩৮ ইবিআর এর সেনাবাহিনীও পার্শ্ববর্তী রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বড় পাড়া এলাকায় জনসংহতি সমিতির সদস্য খোঁজার নামে সামরিক অভিযান চালায়। গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এক সেনা অভিযানে রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়ন ও মৈদুং ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের ১৭ নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসী সামরিক আটকের শিকার হয়েছে। তাদেরকে দুইদিন আটকে রেখে হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়।
গত ২৫ আগস্ট হতে কয়েকদিন ধরে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা ও পানছড়ি উপজেলায় একদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়রানিমূলক ও ভীতিকর সেনা অভিযান এবং অপরদিকে চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) এর সন্ত্রাসীদের জুম্মদের গ্রামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা, গ্রামবাসীদের মারধর, জরিমানা সহ নানা নিপীড়ন চলছে। এতে উভয়পক্ষের চাপে পড়ে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় ব্যাপক ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এবং গ্রামবাসীরা অতীষ্ট হয়ে পড়েছে।
গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাধীন কেঙ্গেরাছড়ি ইউনিয়নে অন্তর চাকমা (৩২) নামে জনসংহতি সমিতির সদস্যকে গুলি করে আহত অবস্থায় আটক এবং তার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ২৯ আগষ্ট দীঘিনালা উপজেলায় সেনাবাহিনী কর্তৃক ৬ জনকে আটক এবং ৯ পরিবারের ঘরবাড়ি তল্লাসী করা হয়েছে।
https://hillvoice.net/bn/%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87-%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%9a%e0%a6%9f/
Hill Voice #ChittagongHillTracts #indigenous #humanrights #Militarization
জুলাই-আগষ্টে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতিতে সিএইচপি’র উদ্বেগ
(Feed generated with FetchRSS)