চীনের উত্থান অপ্রতিরোধ্য: শি জিনপিং

Google Alert – আর্মি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর এবং জাপানের বিরুদ্ধে জয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করল চীন। এ উপলক্ষ্যে দেশটির ঐতিহাসিক তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে এক বিশাল কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনসহ ২৬ দেশের কর্ণধাররা সাক্ষী হন চীনের এই ঐতিহাসিক কুচকাওয়াজের। 

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় শুরু হয় আয়োজন। ভয়ংকর সব নতুন অস্ত্রে ঝলসে ওঠে ১০ হাজার সেনার বিশাল প্যারেড গ্রাউন্ড। এ সময় উপস্থিত বিশ্বনেতাদের সামনে দেওয়া বিজয় দিবসের ভাষণে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। 

দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, ‘চীনের উত্থান অপ্রতিরোধ্য’। ভাষণে পশ্চিমা শক্তিকে টার্গেট করে বলেন, শান্তি অথবা যুদ্ধ- একটিকে বেছে নিতে হবে বিশ্বকে। মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়নের মহৎ উদ্যোগ নিশ্চিতভাবে জয়ী হবে। বিবিসি, এএফপি, এপি। 

তিয়েনআনমেন গেটের মঞ্চ থেকে শি জিনপিং ঘোষণা করেন, চীনারা এক মহান জাতি। এই জাতি কোনো অত্যাচারকে ভয় পায় না এবং নিজের শক্তিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং আজকের চীনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র টানেন। 

মূল অনুষ্ঠানে যা ছিল : অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল নানা প্রতীকী আয়োজন। এসব অনুষ্ঠান বর্তমান কমিউনিস্ট পার্টিকে বিপ্লবী অতীতের সঙ্গে যুক্ত করেছে। শি জিনপিং ওই অনুষ্ঠানে মাও সেতুং স্টাইলের পোশাক পরে হাজির হন। তার সঙ্গে ছিলেন বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ চীনা নেতারা। শি ছাদখোলা একটি লাল রঙের লিমুজিন গাড়িতে করে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সৈন্যদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এই লাল রং চীনের পতাকা, মাও সেতুংয়ের যুগ এবং লিমুজিন গাড়িটি শিল্পনির্ভর উচ্চাভিলাষকে মনে করিয়ে দেয়। পরিদর্শনের সময় শি জিনপিং উচ্চৈঃস্বরে বলেন, ‘কমরেড, তোমাদের শুভেচ্ছা জানাই। তোমরা কঠোর পরিশ্রম করছ।’ জবাবে চীনা সেনারা একযোগে উত্তর দেন, ‘এটা জনগণের সেবার জন্য! পার্টির (কমিউনিস্ট) নেতৃত্ব অনুসরণ কর, জয়ের জন্য লড়াই কর।’ এর পরপরই সেনারা তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি প্রদর্শনের জন্য ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যানের দিকে এগিয়ে যান। যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং সমন্বিত শৃঙ্খলাপূর্ণ কুচকাওয়াজরত সৈন্যদল প্রদর্শন করা হয়। শি জিনপিং এ আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি বার্তা দিয়েছেন, খবরদার, চীনের সার্বভৌমত্বকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে এসো না। এরপর জাপানের বিরুদ্ধে চীনের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৮০ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। সেনারা চীনের জাতীয় পতাকা হাতে তিয়েনআনমেন স্কয়ারের লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে কুচকাওয়াজ করেন। জাতীয় সংগীত চলাকালে দর্শকরা ছোট পতাকা নেড়ে অভিবাদন জানান। পতাকা উত্তোলনের পর আকাশে ৮০ হাজার কবুতর এবং ৮০ হাজার বেলুন ছেড়ে দেওয়া হয়। 

বিশ্বনেতাদের আগমন : ঐতিহাসিক এ অনুষ্ঠানে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন মার্কিনবিরোধী তিন রাষ্ট্রনায়ক পুতিন-শি-কিম। প্রথমবার এক মঞ্চে দাঁড়ালেন তারা। আরও একটি ইতিহাস হলো- এবারই প্রথম বিশ্বনেতাদের মঞ্চে দেখা গেল কিম জং উনকে। আয়োজনে প্রায় ৫০ হাজার অতিথি এ আয়োজনে অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন দেশের বিশ্বনেতারাও। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন থেকে শুরু করে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতাসহ ২৬ দেশের বিশ্বনেতারা অংশগ্রহণ করেন। সেসময় তারা গেট হলে একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। মধ্যাহ্নভোজের সংবর্ধনা ভাষণে পশ্চিমাদের ইঙ্গিত করে শি বলেন, বিশ্বকে জঙ্গলে আইনে ফিরে যেতে হবে না, যেখানে শক্তিশালীরা দুর্বলদের শিকার করে। 

এর আগে বুধবার সকাল থেকেই বেইজিংজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ছিল। ট্রাফিক বিধিনিষেধ ছিল জোরাল। অনেক রাস্তাঘাট ও ফুটপাত বন্ধ করা হয়েছিল। প্যারেড রুটের কাছাকাছি রাস্তাগুলো ধাতব ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল। শত শত পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, সৈন্য এবং নিরাপত্তারক্ষী ছিল রাস্তায়। 

পরাক্রমশালী দেশগুলোর নেতাদের একসঙ্গে দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে উদ্দেশ করে নিজের ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিন এবং কিম জং উনকে আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাই, কারণ আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’ তবে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ক্রেমলিনের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক সহকারী ইউরি উশাকভ ট্রাম্পের বার্তার জবাবে বলেছেন, ‘আমি বলতে চাই, কেউ ষড়যন্ত্র করেনি, কেউ কোনো ষড়যন্ত্র করছে না। কারও এমন চিন্তাভাবনাও ছিল না- এই তিন নেতার (শি, পুতিন, কিম) কারোরই এমন চিন্তাভাবনা ছিল না।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *