Google Alert – সশস্ত্র
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ বলেছেন, মিথ্যা তথ্য সত্যের তুলনায় ছয় গুণ দ্রুত ছড়ায়। কারণ, এগুলো ভয়ের মতো আবেগ জাগায়। তাই এর প্রতিরোধও হতে হবে সচেতন ও সুপরিকল্পিত। গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) জেনারেল মোস্তাফিজ মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক সেমিনারে আবদুল হাফিজ এসব কথা বলেন।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি) ও এমআইএসটির যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই সেমিনারের শিরোনাম ‘রেজিলিয়েন্স ইন দ্য ইনফরমেশন ডোমেইন: টুলস টু অ্যাড্রেস মিসইনফরমেশন অ্যান্ড ডিসইনফরমেশন অন সোশ্যাল মিডিয়া’। গত এক বছরে অনেক মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য প্রচারিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আবদুল হাফিজ। তিনি বলেন, যেমন জুলাইয়ের প্রতিবাদকারীরা ছিল মিলিট্যান্ট, ইসলামপন্থী ও হত্যাকারী। পুলিশ হত্যা করেনি, ফ্যাসিস্ট শাসকেরা হত্যা করেনি—এমন সব মিথ্যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। সেমিনারের একজন বক্তার গবেষণার উদাহরণ দিয়ে আবদুল হাফিজ বলেন, মিথ্যা তথ্য সত্যের তুলনায় ছয় গুণ দ্রুত ছড়ায়। কারণ, এগুলো ভয়ের মতো আবেগ জাগায়। সত্য একঘেয়ে, মিথ্যা উত্তেজক। তাই অনেকে মিথ্যার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাই এর প্রতিরোধও হতে হবে সচেতন ও সুপরিকল্পিত। প্রচারণা (প্রপাগান্ডা) প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল বলে উল্লেখ করেন আবদুল হাফিজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা প্রোপাগান্ডা ব্যুরো গঠন করে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরপেক্ষতা ত্যাগে বাধ্য করেছিল। বর্তমান বিশ্বেও প্রোপাগান্ডা হারিয়ে যায়নি। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে, ভুয়া ভিডিও ছড়িয়েছে।
আবদুল হাফিজ বলেন, প্রচারণা, মিথ্যা-ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বহুমাত্রিকভাবে। সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে ফ্যাক্টচেক করছে। প্রতিরোধ গড়তে প্রযুক্তিগত দিকেও অগ্রসর হতে হবে। এআই, ব্লকচেইন, ওপেনসোর্স ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা। ডিজিটাল সিটিজেনশিপকে গণিত বা বিজ্ঞানের মতো মৌলিক বিষয় হিসেবে পড়াতে হবে। মিডিয়া লিটারেসি স্কুলপর্যায় থেকে শুরু করতে হবে। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। তিনি বলেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ডিপফেক ও বানোয়াট কনটেন্টের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করা ও নেতৃত্বকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে সঠিক তথ্য সুরক্ষিত করতে টেকসই কৌশল অনুসন্ধান করতে হবে। পাশাপাশি বাস্তবসম্মত ও সমন্বিত পদ্ধতি চিহ্নিত করে প্রয়োগ করতে হবে। সেমিনারে বক্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের প্রভাব বিশ্লেষণ করে তা মোকাবিলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তাঁরা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপতথ্য ও গুজব মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন ও সচেতনতামূলক শিক্ষার মিশ্রণ অপরিহার্য। সমাজে অপতথ্য ও গুজবের প্রভাব মোকাবিলায় তাঁরা কৌশল, পদ্ধতি ও লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জনের ওপর জোর দেন। সক্রিয় ও বহুমাত্রিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সামরিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বর্তমানে একটি কৌশলগত ঝুঁকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে আলোচনায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এটি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়ন, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এমআইএসটির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।