৩০ পরামর্শকের খরচ সাড়ে ১৫ কোটি টাকা

Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা

প্রথমবারের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন এক কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী ভোটার। এতদিন এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকলেও এবার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য ‘দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন’ নামের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৪৩ লাখ (প্রায় সাড়ে ৪৯ কোটি) টাকা। এর মধ্যে ৩০ পরামর্শকের পেছনে খরচ হবে ১৫ কোটি ৬৭ (প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি) লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করবে নির্বাচন কমিশন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার যুগান্তরকে জানান, গত ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৫০ কোটি টাকার কম হওয়ায় প্রক্রিয়াকরণ শেষে গত ১৮ আগস্ট এটির অনুমোদন দেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের প্রয়োজন হয়নি। গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯ আগস্ট জারি করা হয় প্রকল্প অনুমোদনের জিও। গত আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ভোটার সখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ। এর মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখের বেশি ভোটার বিদেশে অবস্থান করছেন। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন। অথচ এসব ভোটার দীর্ঘ বছর থেকে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত থাকছেন। কিন্তু আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসে থাকা ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারেন সেজন্য প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তার প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন এই প্রথম প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কজ শুরু করেছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হলো-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটদান নিশ্চিত করতে পোস্টাল ভোটিং আইটি সাপোর্ট ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অনলাইন ভোটিং পদ্ধতি তৈরি-নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণ, পরামর্শক সেবাগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। 

নির্বাচন কমিশন জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য একজন প্রবাসী ভোটারকে প্রথমে তৈরি হতে যাওয়া সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাপে নিজেকে তালিকাভুক্ত করতে হবে। এজন্য তিনি প্রথমে গুগল প্লেস্টোর কিংবা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে মোবাইলে নির্বাচন কমিশনের অ্যাপসটি ডাউনলোড করবেন। সেই সঙ্গে নিজের মোবাইলে ইনস্টল করে নেবেন। এরপর একটি বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ ই-ফরম পূরণ করতে হবে। এ পর্যায়ে সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনআইডি ডাটাবেইজ থেকে তথ্য যাচাই করবে। এ প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ হলে তৎক্ষণাৎ ভোটারের মোবাইল ফোনে একটি ওটিপি ম্যাসেজ যাবে। সেই ওটিপি নাম্বার ভোটার মোবাইল অ্যাপে প্রদান করবেন। এটি যাচাই বাছাই হলে মোবাইল অ্যাপের ক্যামেরার মাধ্যমে মুখমণ্ডলের ছবি তুলে লাইভলিনেস যাচাই করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে কেবল একজন ব্যক্তি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

ভোট দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন জানায়, কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সব ব্যালট পেপার বিদেশি ভোটারদের কাছে পাঠানো হবে। এরপর ফেরত খামে মুদ্রণ করা ঠিকানা থাকবে। এছাড়া শুল্ক বা মাশুল পরিশোধ করে প্রতিটি ভোটারকে নির্ধারিত ঠিকানায় ব্যালট পেপার, ভোট দেওয়ার স্টিকার ও একটি হলোগ্রামযুক্ত স্টিকার দেওয়া হবে। ভোটারেরা ব্যালটপেপারসহ খাম পাওয়ার পর খামের উপরে মুদ্রিত কিউআর কোড ভোট দেওয়ার জন্য তৈরি মোবাইল দিয়ে স্ক্যান করবেন। কিউআর কোড স্ক্যান করামাত্রই সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিবেদন দেবে যে, নির্ধারিত ভোটারের কাছে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর কাজ শেষ হয়েছে। এবার ভোটারের মোবাইলে একটি ওটিপি যাবে। ভোটার ওই ওটিপি নম্বর মোবাইল অ্যাপে দেবেন। এটি যাচাই হলে মোবাইল অ্যাপের ক্যামেরায় ভোটার মুখমণ্ডল লাইভলিনেস যাচাই করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে ভোটার ব্যালটে নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী ভোট দিতে পারবেন। ভোট দেওয়া শেষে ব্যালট খামে ঢুকিয়ে হলোগ্রাম স্টিকার দিয়ে খামের মুখ বন্ধ করতে হবে। এরপর নিকটস্থ পোস্ট অফিসে ডাক বাক্সে ফেলবেন। এই খাম ডাক বিভাগের মাধ্যমে ফেরত আসলে স্ব স্ব নির্বাচনি এলাকার রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো হবে।

প্রকল্পের খাতভিত্তিক ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩০ জন পরামর্শকের জন্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৬৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিজনের পকেটেই যাবে ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাতের মধ্যে প্রশিক্ষণে যাবে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা, সমীক্ষায় এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ইন্টারনেট-ফ্যাক্স-টেলেক্সের জন্য ১৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং ডাটা সংরক্ষণের খরচ চার কোটি ২১ লাখ টাকা। আরও আছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামে আট কোটি ৩২ লাখ, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে সাত লাখ এবং কম্পিউটার সামগ্রীর জন্য ৩৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *