কক্সবাজারে নদীপাড়ে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা-অবরোধ

jagonews24.com | rss Feed

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর কিনারে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে আবারও বাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কয়েকশ মানুষ শহরের প্রধান সড়কে নেমে অভিযানের বিরোধিতা করেন। এসময় টায়ারে আগুন দিয়ে, ঠেলাগাড়ি ও গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করা হয়।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হওয়া অবরোধে শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট বাঁকখালী নদীর কিনারায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে চার মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিআইডব্লিউটিএর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নদীর নুনিয়াছটা, ৬ নম্বর জেটিঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার কথা ছিল। সকালে বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে ৬ নম্বর ঘাটের দিকে খননযন্ত্র নেওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনগণ সেটি আটকে দেন ও উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিমানবন্দর সড়ক ও প্রধান সড়কের ঝাউতলা থেকে লালদীঘির পাড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া সড়কে গাছের গুঁড়ি ও ঠেলাগাড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন বাসিন্দারা। বিক্ষোভের সময় সড়কে র‍্যাব-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকে ৬ নম্বর জেটি ঘাট, নতুন বাহারছড়া, নুনিয়াছটা ও পেশকারপাড়া থেকে এসেছেন। নদীপাড়ে তাদের অনেকের বাড়িঘর আছে।

অবরোধে অংশ নেওয়া এনামুল কবির ও আবদুল মালেক জানান, তারা পেশকারপাড়া অংশে জমি কিনে ঘর করেছেন। এখন ঘর থেকে তাদের উচ্ছেদের কথা বলা হচ্ছে। তাই প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন।

কক্সবাজারে নদীপাড়ে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা-অবরোধ

দুজন আক্ষেপ করে বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারি পাহাড়ে ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, হঠাৎ উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর ঘটনা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছেন। তাই তারা রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান বলেন, বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনার সময় বৈধ ঘরবাড়িও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের জানানো হয়, উচ্ছেদের আওতায় কোনো স্থাপনা পড়েছে, তা লাল নিশানা তুলে চিহ্নিত করে দেওয়ার পর অভিযান চালানো হবে। এরপর তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে চলে গেছেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দিন শাহীন বলেন, অবরোধ তুলে নেওয়ায় দুপুর ১২টার আগেই শহরের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

কক্সবাজারে নদীপাড়ে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা-অবরোধ

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, অভিযান শুরুর দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার থেকেই বাঁধার মুখে পড়ে আসছে উচ্ছেদ অভিযান। সেদিন ইটের আঘাতে পুলিশের এক সদস্যের মাথা ফেটে যায়। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মী আহত হন। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর নদীর উত্তর পেশকারপাড়ার অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে সেখানেও বাধার মুখে পড়ে যৌথবাহিনী ফিরে যায়।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন দুপুরে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে বাঁকখালী নদীতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর এ উচ্ছেদ অভিযানে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অংশ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, অভিযানের দ্বিতীয় দিন থেকেই উচ্ছেদবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে, হামলা হচ্ছে। আজ সড়ক অবরোধ হলো, তাতে জনদুর্ভোগও বাড়ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে কীভাবে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যায়, সেই চেষ্টা করছি।

কক্সবাজারে নদীপাড়ে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা-অবরোধ

বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন শাখা) কে এম আরিফ উদ্দিন জানান, উচ্ছেদ অভিযানে বাধার মুখেও এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ একরের মতো নদীর জমি উদ্ধার করতে পেরেছেন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে চার শতাধিক। নদীর জমি দখল ও ভরাট করে শহরের নুনিয়াছটা থেকে খুরুশকুল সেতু পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারে যেসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে সেসব উচ্ছেদ করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে।

পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, যৌথবাহিনীর উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা, হামলা ও হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাঁধার ঘটনায় এ পর্যন্ত কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এতে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এজাহারভুক্ত চার আসামিকে।

সায়ীদ আলমগীর/এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *