Google Alert – বাংলাদেশ
তখনও নেপালের অনুশীলন শেষ হয়নি। একটু আগেভাগে দশরথ স্টেডিয়ামে চলে আসা বাংলাদেশ দলের সবাই তাই বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকলেন টিম বাসের ভেতরে। সামনের দিকে বসে থাকা হাভিয়ের কাবরেরাকে দেখা গেল মাথা চুলকেই চলেছেন। চোখে-মুখে চিন্তার বলিরেখাও বেশ স্পষ্ট। তা হওয়ারই কথা। কেননা, নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্নই!
কাবরেরার দুঃশ্চিন্তা বেড়েছে আরও অনেক কারণে। চোট পাওয়া ফয়সাল আহমেদ নিয়ে দুর্ভাবনার মেঘ কাটেনি পুরোপুরি। এই ফরোয়ার্ড ফাহিমকে আগের দিন করেছেন হালকা অনুশীলন। এর মধ্যে দলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক মিতুল মারমা কুঁকচির চোটে ভুগছেন। এদিনের অনুশীলনে তেমন একটা ঘাম ঝরাতে দেখা গেল না তাকে।
এই সমস্যাগুলোর সাথে নিকট অতীতের পরিসংখ্যানের প্রবল চোখ রাঙানি নিয়ে শনিবার প্রথম প্রীতি ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। নেপালের অস্ট্রেলিয়ান কোচ ম্যাট রস প্রীতি ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রীতির বার্তা দেননি; দিয়েছেন হুঙ্কার।
“বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। কঠিন লড়াই আশা করছি, সঙ্গে থাকবে খুবই আবেগপ্রবণ ও উচ্ছ্বসিত দর্শক; আমাদের খেলোয়াড়রা যেটার জন্য ভীষণভাবে উন্মুখ। আমরা যদিও এএফসি বাছাইপর্বের প্রস্তুতির কথাও বলছি, কিন্তু বাঁশি বাজলেই আসল লড়াইটা হবে নব্বই মিনিটের ফুটবলে।”
“আমরা মরিয়া হয়ে আছি দেখানোর জন্য যে, লাওসের বিপক্ষে আমাদের শেষ পারফরম্যান্স আমাদের মানদণ্ডে ছিল না। এবার ছেলেরা শতভাগ প্রস্তুত। তারা দেখাতে চায় যে, আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামছি এবং গত কয়েক মাস ধরে যে উন্নতির ধারা আমাদের চলছে, সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”
এগিয়ে যেতে চান কাবরেরাও, কিন্তু সবশেষ ২০২২ সালে এ মাঠে ৩-১ গোলে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাকে এখনও যে তাড়া করে ফেরে, সেটা সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্টই বলেছেন তিনি। তবে, তিন বছর আগের সেই হতাশার বৃত্ত এবার ভাঙতে চান এই স্প্যানিশ কোচ। যদিও হামজা চৌধুরী, শোমিত সোম, ফাহামিদুল ইসলামের মতো প্রবাসীদের অনুপস্থিতিতে সে চাওয়া পূরণের পথটা তার জন্য মসৃণ নয় মোটেও।
পরিসংখ্যানের পাতা মিশ্র কাবরেরার জন্য। নেপালের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৮ ম্যাচের মধ্যে ১৪ জয় ও ৬টি ড্র বাংলাদেশের, কিন্তু দশরথের আঙিনায় এলেই যেন এলোমেলো হয়ে যায় দল। ২০১৩ সালের মার্চে এ মাঠে সবশেষ নেপালের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপর খেলা চার ম্যাচে হার তিনটি, ড্র একটি। পসিংখ্যানের পিছুটান, হামজা-শোমিতদের অনুপস্থিতিকে কাবরেরা পাশ কাটিয়ে লক্ষে পৌঁছাতে আঁকড়ে ধরছেন জামাল-রাকিব-ইব্রাহিমদেরই।
“হামজা নেই, শোমিতও নেই, অনেকে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে আছে। তবে সত্যি বলতে, কয়েক মাস আগেও আমরা প্রায় একই দল নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে খেলেছি। এই দলের ৯৫ শতাংশ খেলোয়াড়ই ছিল ২০২৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। যেখানে আমরা দারুণ খেলেছি। এছাড়া লেবানন, ফিলিস্তিন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রায় শতভাগ খেলোয়াড়ই তখন দলে ছিল। তাই আমরা শক্তিশালী দল এনেছি এখানে, দ্বিতীয় সারির দল নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ দল, শক্তিশালী দল। আমরা কঠিন প্রতিযোগিতা আশা করছি।”
জমজমাট লড়াইয়ের আশা নেপাল অধিনায়ক কিরণ চেমজংও। অভিজ্ঞ এই গোলকিপার এবার যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল পুলিশ এফসিতে। জামাল-মিতুলদের বিপক্ষে ক্লাবের হয়ে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছেন। ফলে প্রতিপক্ষের কৌশল সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানার সুযোগ মিলেছে কিরণের।
“প্রাক মৌসুমে আমি জাতীয় দলের বিপক্ষে পুলিশের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছি। যদিও ওই স্কোয়াড তাদের মুল ছিল না এবং গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু খেলোয়াড়ও ছিল না। দুটি ম্যাচই ভালো হয়েছে, পুলিশও ভালো খেলেছে। কোচ যেটা বলল, আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে প্রস্তুত। দল তিন সপ্তাহ ধরে এই দুই ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। যদিও আমি দলের সঙ্গে এখানে ছিলাম না, তবে আমি সব সময় যোগাযোগ রেখেছিলামে কোচের সঙ্গে। তো, হ্যাঁ অবশ্যই আমাদের নজর দুই ম্যাচে জয়ের দিকে।”
জয়ের আশাবাদ আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়াও। নেপাল সফরকে অক্টোবরে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য নিজেদের শানিয়ে নেওয়ার উপলক্ষ্য মানছেন তিনি।
“আমরা এই ম্যাচ দুটোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কারণ এগুলো আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগামী মাসে আমাদের এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ আছে হংকংয়ের বিপক্ষে। তাই এই দুটি ম্যাচ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মুখিয়ে আছি।”
জয়ের জন্য দুই পক্ষই মুখিয়ে থাকায় কাঠমাণ্ডুর প্রীতি ম্যাচ ঘিরে তাই উত্তাপের কমতি নেই একটুও।