গ্রামীণ আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন  

Google Alert – ইউনূস

সাধারণত সম্পদের প্রাচুর্য না থাকায় বাংলাদেশ তার অর্থনীতির পলিসিগুলো শহরকেন্দ্রিক নিয়ে থাকে। যেখানে গ্রাম বা অন্যান্য অঞ্চল শহরের মত প্রাধান্য পায় না। যার ফলে আঞ্চলিক বৈষম্য ঘটে থাকে।

সম্প্রতি জিইডি’র এক জরিপে দেখা যায়, শহর অঞ্চলে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকের মান গ্রামীণ অঞ্চলের চেয়ে অনেক কম। এই অবস্থায় একটি প্রতিষ্ঠান যদি হয় শহর হতে দূরে একটি গ্রামীন অঞ্চলে; তখন ওই প্রতিষ্ঠানকে অবলম্বন করে গড়ে উঠে একটি অর্থনীতি। এই অর্থনীতি পরিবর্তন ঘটায় ঐ অঞ্চলের সামগ্রিক সামাজিক জীবনযাত্রার মান। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত অঞ্চলের জন্য একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকে।  

প্রথমত একটি প্রতিষ্ঠান দক্ষ মানবসম্পদ দ্বারা জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে যা জাতীয় পর্যায়ে বিরাট ভূমিকা পালন করে। অপরদিকে যে অঞ্চলে গড়ে উঠে ওই অঞ্চলের  জন্য বিরাট একটি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হয়ে উঠে। যেখানে ওই অঞ্চলের জনগণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে বেকারত্বের হ্রাস ঘটে। সামগ্রিকভাবে দেশের বেকারত্ব  কমে দারিদ্র হার কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

অপরদিকে প্রতিষ্ঠান তার বিভিন্ন কাজের জন্য যে শ্রমের চাহিদা, এর সহজ সরবরাহে স্থানীয় জনবল বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শ্রমের চাহিদা এবং যোগানের সামঞ্জস্যের ফলে উভয়পক্ষ একটি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কাজ সহজতর হয় অপেক্ষাকৃত।               

প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার ফলে আশেপাশের জমির তথা সম্পদের মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় পূর্বের তুলনায়। যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পদের পরিমাণ বাড়ে অথবা আরো ধনী হয়ে উঠে।

অপরদিকে ওই অঞ্চলে কাজ করতে আসা অন্যান্য মানুষ বসবাসের কারণে যখন জায়গা ক্রয় করেন তখন তারাও শহরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে ক্রয় করতে পারেন এবং সম্পদের মালিক হতে পারেন। এক্ষেত্রেও উভয় পক্ষের একটি লাভজনক অর্থনৈতিক অবস্থান বজায় থাকে।

সবচেয়ে বেশি যে সেক্টরে উন্নয়ন ঘটে তা হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন। যেমন রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ ইত্যাদি। অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন জনগণের জীবনযাত্রার মানকে করে উন্নত। ফলে বহুমাত্রিক দারিদ্য সূচক হতে বেরিয়ে আসে দেশের মানুষ, যা টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। 

প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে তৈরি হয় দোকান পাট বিভিন্ন নতুন নতুন পণ্যের ব্যবসা। যা নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে আয়ের উৎস বাড়ায়। ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে একটি চাঙ্গাভাব বিরাজ করে থাকে। 

অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে দেখা যায় আঞ্চলিক পণ্যসমূহ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ পায়। অপরদিকে প্রতিষ্ঠান ঘিরে তৈরি হওয়া মানুষের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গড়ে উঠে বিদ্যালয়, হাসপাতাল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে এবং হাসপাতালের কারণে স্বাস্থ্যসেবাও সহজতর হয়ে উঠে স্থানীয় জনগণের ।

অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ অঞ্চলে বেকারত্ব  কমিয়ে জীবনযাত্রার মান বাড়িয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাই স্থানীয় এবং সরকারি উদ্যোগে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সমাজ তথা দেশের জন্য কল্যাণকর।এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।

লেখক : লেকচারার, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *